ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাহেদুল ইসলাম সমাপ্ত

ভাগ্য পরিবর্তনে চরবাসী

প্রকাশিত: ০৭:২০, ২৯ এপ্রিল ২০১৮

ভাগ্য পরিবর্তনে চরবাসী

রংপুর অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র সহ অসংখ্য ছোট-বড় নদী। এসব নদীর পাড়ে বসবাসরত মানুষদের পানিতে তলিয়ে থাকত আবাদী জমি আর ভাঙ্গনে বিলীন হতো তাদের ঘর-বড়ি। আবার পানি শুকিয়ে গেলে জমিগুলো পরিণত হতো ধু-ধু বালু চরে। এতে কোন মৌসুমে আবাদ হতো, আবার কোন মৌসুমে আবাদ হতো না। ফলে দু’বেলা পেট পুরে খেতে পারত না চরাঞ্চলের অনেকেই। সব মিলিয়ে নিঃস্ব আর হতাশাগ্রস্ত এসব মানুষ হয়ে যেত দিশেহারা। কিন্তু সেই দিশেহারা মানুষগুলো এখন চরাঞ্চলের ধু-ধু বালু চরে ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, বাদামসহ বিভিন্ন জাতের ফসল চাষ করে ঘটাচ্ছে ভাগ্যের পরিবর্তন। আর এবার ভুট্টা আবাদের পরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় শত শত কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় মোট চরের সংখ্যা ৫৯৭টি। মোট জমির পরিমাণ ৭৭ হাজার ৫৭৫ হেক্টর। আবাদযোগ্য চরের সংখ্যা ৫৬৮টি। জমির পরিমাণ ৫৮ হাজার ৬৭১ হেক্টর। এর মধ্যে রংপুর জেলায় চরের সংখ্যা হচ্ছে ৯৫টি। মোট জমির পরিমাণ ৮ হাজার ৪০২ হেক্টর। আবাদযোগ্য চর হচ্ছে ৭৪টি। জমির পরিমাণ ৬ হাজার ৬৩৮ হেক্টর। কুড়িগ্রাম জেলায় চরের সংখ্যা হচ্ছে ২৩০টি। মোট জমির পরিমাণ ২৯ হাজার ৮২৪ হেক্টর। আবাদযোগ্য চর হচ্ছে ২২২টি। জমির পরিমাণ ২২ হাজার ৫৪৯ হেক্টর। গাইবান্ধা জেলায় চরের সংখ্যা হচ্ছে ১৮১টি। মোট জমির পরিমাণ ২৭ হাজার ২৯১ হেক্টর। লালমনিরহাট জেলায় চরের সংখ্যা হচ্ছে ৪০টি। মোট জমির পরিমাণ ৮ হাজার ৬০৫ হেক্টর। নীলফামারি জেলায় চরের সংখ্যা হচ্ছে ১৯টি। মোট জমির পরিমাণ ২ হাজার ৫৪৭ হেক্টর। দিনাজপুর জেলায় চরের সংখ্যা হচ্ছে ৩২টি। মোট জমির পরিমাণ ৯০৬ হেক্টর। যার সবই আবাদযোগ্য। তবে ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলায় চর নেই বললেই চলে। চরাঞ্চলগুলো ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারা বছরেই মাটি ভেদে রংপুর অঞ্চলের ৫৮ হাজার ৬৭১ হেক্টর চরাঞ্চরের জমিতে ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, পাট, ধান, গম, সরিষা, ডাল (মুগ, মুসর, মাস কালাই, খেসারি অন্যতম), মসলা জাতীয় পণ্য (পিঁয়াজ, রসুন, ধনিয়া, মৌরি অন্যতম), মরিচ, তিল, তিষি, কাউন, তরমুজ, চিনা বাদাম, আলু, তামাক, মিষ্টি আলু, লাউ, খিড়া, শালুক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, টমেটো, ঢেঁড়স, আখসহ প্রায় ৩৩ প্রকার ফসল চাষ করা হচ্ছে। পীরগাছা উপজেলার চরাঞ্চলের আনোয়ার হোসেন, বজলার রহমান, মানিকসহ কয়েকজন কৃষক জানান, তারা শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে চর ছাওলা, চর রহমত, চর শিবদেব, চর কাশিয়া বাড়ি, চর হাগুরিয়া হাসিম, চর তাম্বুলপুর, কান্দিনা চরে ধান, আলু, তামাক, ভুট্টা, কাঁচা মরিচ, মিষ্টি কুমড়া, পিঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করেন। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকার কারণে আমরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাই না। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিণ পারুলিয়ার তিস্তার চরের শরিফুল, মিলন সরদার, মিঠুনসহ কয়েকজন কৃষক জানান, আমাদের তিস্তার চরে এবার ভুট্টা আবাদে প্রতি একর জমিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। আর প্রতি একরে ভুট্টা ১৫০ থেকে ১৬০ মণ পাওয়া গেছে। বাজারে ভুট্টার দাম ভাল থাকায় আমরা অনেক খুশি। লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) বিধু ভূষণ রায় জানান, চলতি (২০১৭-১৮) বছরে ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এমনকি তিস্তা বিধৌত হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জেগে ওঠা চরেও ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। এসব চরে প্রতি বছর পতিত প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা উৎপাদন হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ শাহ্ আলম জানান, চরের পতিত জমিতে যে ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, আলু, আখসহ প্রায় সকল ধরনের মসলাজাতীয় পণ্য ব্যাপকভাবে উৎপাদন হচ্ছে। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর, যে সকল চর পানিতে কিছুদিন নিমজ্জিত থাকে সেখানে কৃষকদের বিআর-৫১ এবং বিআর-৫২ ধান চাষ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া তিনি নদীশাসন করে চরের জমি আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে মত প্রকাশ করেন। পাশাপাশি চরের জমিতে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে শক্তিশালী বিপণনের ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
×