ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে প্রবাসী আয়

প্রকাশিত: ০৭:১৯, ২৯ এপ্রিল ২০১৮

বাড়ছে প্রবাসী আয়

বাংলাদেশ ১৯৭০’র দশক থেকেই জনশক্তি রফতানি করছে। শুরু থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির প্রধান বাজার। ১৯৮০’র দশক থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশে জনশক্তি রফতানি শুরু হয়। লিবিয়া, সুদানসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশেও তখন থেকেই জনশক্তি রফতানি শুরু হয়। ১৯৯০’র দশক থেকে দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রুনাই, মিসর, মরিসাসসহ কয়েকটি নতুন বাজার সৃষ্টি হয়। নতুন সহস্রাব্দে ব্রিটেন, ইতালী, জাপানসহ এশিয়া ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে জনশক্তির চাহিদা সৃষ্টি হয়। বিগত কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের জনশক্তির বাজার উন্মুক্ত হয়েছে। ইরাক, আফগানিস্তান, থাইল্যান্ড, স্পেন, তিউনেসিয়া, চিলি, পেরুসহ শতাধিক দেশে বাংলাদেশ বর্তমানে জনশক্তি রফতানি করছে। এর মধ্যে ২০-২২টিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনশক্তি যাচ্ছে। ১৯৭০’র দশকে এক-দুই হাজার জনশক্তি রফতানি দিয়ে শুরু হলেও ১৯৯৭ সালে এক লাখের বেশি জনশক্তি রফতানি হয়। ২০০৭ সালে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৪ হাজার জনশক্তি রফতানি হয়েছে। ২০০৯ সালেই চাহিদা ১৫ হাজারে নেমে আসে। ২০১২ সালে ২১,২৩২ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজার চাহিদায় আরও বেশি উত্থান-পতন হয়েছে। শুরুর দিকে বছরে কয়েক হাজার জনশক্তি রফতানি হলেও ১৯৯০’র দশকের প্রথমভাগে দেশটিতে ১৫-২০ হাজার জনশক্তি রফতানি হয়েছে। জনশক্তির বাজারে চাহিদা ওঠা-নামার পিছনে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণ থাকে। প্রবাসীরা তাদের কষ্টার্জিত আয় দেশে পাঠান যা আমাদের অর্থনীতিতে গতিশীলতা বৃদ্ধি করে। সম্প্রতি ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) বাড়ছে। ডলারের বিনিময়মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে দেশে। গত মার্চ মাসে প্রবাসীরা বৈধ পথে ১৩০ কোটি ডলার আয় পাঠিয়েছেন, যা ২০১৭ সালের মার্চের তুলনায় প্রায় ২১ শতাংশ বেশি। গত বছরের মার্চে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ১০৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এসেছিল ১৩৭ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। আর ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল ১১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশীরা এক হাজার ৭৬ কোটি ১৩ লাখ ডলার ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। এদিকে রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি, ব্যাংকগুলোতে ডলারের বিনিময় হারে ঊর্ধ্বগতি এবং হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে প্রবাসী আয়ে এ ইতিবাচক ধারা দেখা দিয়েছে। প্রবাসীরা ১ ডলার পাঠালে বাংলাদেশে থাকা তাঁদের আত্মীয়রা এখন ব্যাংক থেকে পাচ্ছেন ৮৩ টাকা, আগে যা ছিল ৮০ টাকার নিচে। এ কারণেই প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে আয় পাঠাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। এ ছাড়া দেশে ডলার সংকটের কারণে এক্সচেঞ্জ হাউসের কর্মকর্তারাও এখন আগের চেয়ে বেশি ডলার সংগ্রহ করছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে গত ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১১৬ কোটি ডলার, নবেম্বরে ১২১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, অক্টোবরে ১১৬ কোটি ২৭ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার, আগস্টে ১৪১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার এবং অর্থবছরের শুরুর মাস জুলাইয়ে ১১৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। একটি দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি এর কর্মজীবী মানুষেরা, যাদের আয়ের ফলে বৃদ্ধি পায় দেশের জাতীয় আয়। বর্তমানে বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ থেকেও নিয়ে যাবে আরও অনেক দূর- এমনটাই আশা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
×