ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কাচিন বিদ্রোহীদের সঙ্গে মিয়ানমার সেনাদের লড়াই শুরু

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২৯ এপ্রিল ২০১৮

কাচিন বিদ্রোহীদের সঙ্গে মিয়ানমার সেনাদের লড়াই শুরু

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধান হওয়ার আগেই মিয়ানমারের উত্তরে কাচিন বিদ্রোহীদের সঙ্গে নতুন করে লড়াই শুরু হয়েছে দেশটির সেনাবাহিনীর। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বর্বর অত্যাচার ও তাদের বুলেট থেকে প্রাণে বাঁচতে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ধীরগতিতে রেখে সময়ক্ষেপণ করছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধান হওয়ার আগেই মিয়ানমারে কাচিন বিদ্রোহীদের সঙ্গে নতুন করে লড়াই শুরু হয়েছে সেনাবাহিনীর। এতে কাচিন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ পালাচ্ছে। কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্ট আর্মি ও সরকারের মধ্যে সম্পাদিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙ্গে যাওয়ার পর কাচিন ও শান রাজ্যের আশ্রয় শিবিরে ৯০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। সূত্র জানায়, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার বাসিন্দা পালিয়েছে। লড়াই কবলিত এলাকাগুলোতে এখনও বহু মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে আছে বলে তথ্য মিলেছে। চলতি মাসে গত তিন সপ্তাহে চীনের সীমান্তবর্তী কাচিন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে কমপক্ষে ৪ হাজার মানুষ। মিয়ানমারের উত্তরে এ লড়াইয়ে বেসামরিক মানুষও নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচি ২০১৬ সালে ক্ষমতা নেয়ার সময় বলেছিলেন, তার অগ্রাধিকার হবে শান্তি প্রতিষ্ঠা। কিন্তু এক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে খুবই ধীর গতিতে। রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর চালানো নৃশংসতায় ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে চলমান অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। স্বাধিকার আদায়ের জন্য এবং বিভিন্ন দাবি নিয়ে মিয়ানমারে সক্রিয় রয়েছে উগ্রপন্থীরা। রয়েছে বর্তমানে আলোচিত সশস্ত্র রোহিঙ্গা জঙ্গী সংগঠন আরসা ক্যাডাররা। তারা দেশটির নাগরিকত্ব, স্বায়ত্তশাসন ও নিজেদের নিয়ন্ত্রণ দাবি করছে। সেখানে সক্রিয় রয়েছে স্থানীয় মিলিশিয়ারা ও মাদক পাচারকারীরা। উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে মিয়ানমার। তারপর থেকে দেশটির সীমান্ত অস্থিতিশীল রয়েছে। ১৯৭৭ সালের শেষের দিকে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে জমিজমার দলিলাদি ও নাগরিকত্বের সনদ ছিনিয়ে নেয়ার পর থেকে রোহিঙ্গা সঙ্কট জোরালো হতে থাকে। ১৯৭৮ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নৃশংস নির্যাতন চালালে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে চার লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। ১৯৮২ সালে আইন পাস করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করার পর দেশটিতে যোগ হয়েছে চরম রোহিঙ্গা সঙ্কট। এদিকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে চলমান অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকছে অস্ত্র, নিপীড়নে ব্যবহৃত সরঞ্জাম, মিয়ানমার সেনাদের প্রশিক্ষণ কর্মকা-েও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে ইউরোপীয় কাউন্সিল। পাশাপাশি রোহিঙ্গা নির্যাতনে জড়িত সেনা কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞা প্রদানের জন্যও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করছে ইইউ। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে ইউরোপীয় কাউন্সিল। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোহিঙ্গা নির্যাতনে জড়িত সকল সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারেও কাউন্সিলের সকল সদস্য একমত পোষণ করেছে। ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞা থাকছে মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত বিজিপি, সেনা সদস্যদের জন্যও। ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞার মধ্যে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং ইউরোপে থাকা সম্পত্তি জব্দকরণের উল্লেখ করেছে কাউন্সিল। রাখাইন রাজ্য থেকে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকরা ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের কালক্ষেপণ অবস্থা দেখে এদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারাও হতাশ হয়ে পড়েছে। উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রিত একাধিক রোহিঙ্গা শনিবার দুপুরে জনকণ্ঠকে বলেন, ‘ক্যাম্পত খানাপিনা, দাবাই, করচোয়র বেগ্যিন পাইদ্দেরি, তওতো আঁরা নিজর ঘর ফেলি জীবনভর বিদেশত থাইক্কুম ইয়ান নয়। আঁরা নিজর দেশত যাইত চাইর। মগে নানিজার। আঁরা পুন্যি তারা এগজা সময় লদ্দে।’ অর্থাৎ আমরা বাংলাদেশে আশ্রিত ক্যাম্পে ত্রাণ সামগ্রী, চিকিৎসাসেবা কাপড়চোপড় সবকিছু পেলেও নিজের ভিটাবাড়ি ফেলে বাংলাদেশে আজীবন থাকবো-এটা হতে পারে না।
×