ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইউরোপ আমেরিকায় ফের শুরু হয়েছে মানব পাচার

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৯ এপ্রিল ২০১৮

ইউরোপ আমেরিকায় ফের শুরু হয়েছে মানব পাচার

ফিরোজ মান্না ॥ মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় গত তিন মাসে দেশটির সীমান্তরক্ষীর হাতে ধরা পড়েছে ১৭১ বাংলাদেশী। দালাল চক্রের প্রতারণার শিকার এসব বাংলাদেশী এখন আমেরিকার জেলে স্থান পেয়েছেন। ভাগ্য পরিবর্তন করতে ঝুঁকিপূর্ণ সাগর ও সড়ক পথে তাদের মেক্সিকো নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ সময় তাদের মেক্সিকো রেখে পর্যায়ক্রমে আমেরিকার সীমান্ত পার করার সময় তারা ধরা পড়েন। এদের প্রতিজনের কাছ থেকে দালাল চক্র ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, বেশকিছু দিন বন্ধ থাকার পরে আবার ইউরোপ আমেরিকায় মানব পাচার শুরু হয়েছে। ভাল বেতন ও স্বপ্নের দেশ আমেরিকা ও ইউরোপে যাওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে শিক্ষিত আধাশিক্ষিত শত শত তরুণ পাড়ি দিচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ পথে। বিভিন্ন দেশ ঘুরে তারা লিবিয়ায়, ইরাক যাচ্ছে। এখান থেকে সাগর পথে আবার ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক পথে জীবনের মায়া ত্যাগ করে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছে যাচ্ছে। যাদের ভাগ্য ভাল তারা স্বপ্নের দেশগুলোতে যেতে পারছেন। আর যাদের ভাগ্য খারাপ তারা ধরা পড়ছে সীমান্ত রক্ষীর হাতে। দেশে মানব পাচার রোধে কঠোর আইন থাকলেও পাচারকারীরা আইনের ভয় পাচ্ছে না। দালালদের খপ্পরে পড়ে বিপজ্জনক পথে পাচার হতে গিয়ে অনেক মারা পড়ছেন। আবার অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। পাচারকারীদের প্রলোভনের শিকার হয়ে বহু মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কারাগারে আটক রয়েছেন। বর্তমানে মালয়েশিয়ার চেয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের দেশগুলোতে সাগর পথে মানব পাচারের ঘটনা বেশি ঘটছে। মালযেশিয়াতেও ট্রলার যোগে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখনও অনেক মানুষ পাচার হচ্ছেন। পাচারকারী চক্রের খপ্পর থেকে প্রতিনিয়ত অনেক নিরহ মানুষ পুলিশের হাতে আটক হয়। কিন্তু পাচারকারী কাউকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে না। অভিযোগ উঠেছে পাচারকারীদের সঙ্গে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি বিভাগের সঙ্গে সক্ষতা রয়েছে। এ কারণেই পাচারকারীরা ধরা ছুঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মানব পাচার বন্ধের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কয়েক দফা চিঠি দিলেও কোন কাজ হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, বেশিরভাগ মানব পাচার হয় মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তানসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে। সর্বশেষ যোগ হয়েছে আমেরিকা। মেক্সিকো সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আমেরিকায় মানব পাচার হচ্ছে। এক শ্রেণীর দালালের মাধ্যমে তারা বেশি বেতনের চাকরির লোভে বিদেশ যাচ্ছে। এতে বৈধ শ্রমবাজারের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এখানে থেকে উত্তরণ না ঘটাতে পারলে দেশের বহু মানুষ নিঃস্ব সর্বস্বান্ত হয়ে পড়বে। সরকার মানব পাচার প্রতিরোধ আইন করলেও তার প্রয়োগ হচ্ছে না বলেই চলে। ‘ন্যাশনাল লেভেল শেয়ারিং ফর এডাপশন অব কমপ্রিহেনসিভ ল’ এগেইনস্ট ট্রাফিকিং ও রেফিউজি এ্যান্ড ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান জানিয়েছেন, চাকরির নামে পাচার ও অবৈধ অভিবাসন নিয়ে মানুষের ধারণা স্পষ্ট না হওয়ার কারণে সীমান্তবর্তী এলাকায় ভিকটিমরা উদ্ধার হলেও পুলিশ পাচারের মামলা রুজু না করে পাসপোর্ট আইনে মামলা করে। মানব পাচার প্রতিরোধে সচেতনতার পাশাপাশি সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সময়োপযোগী ও সর্বজনীন আইন প্রণয়ন করা জরুরী। তাদের অভিযোগ, প্রতিটি জেলায় পাচারের মামলা মনিটরিং সংক্রান্ত কমিটি থাকলেও এর বেশিরভাগের কোন কার্যক্রম নেই।
×