ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নগরীগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বছরে অন্তত ১২ শতাংশ

২০২৫ সালে মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ বাস করবে নগরে

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৯ এপ্রিল ২০১৮

২০২৫ সালে মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ বাস করবে  নগরে

সমুদ্র হক ॥ দ্রুত বাড়ছে নগরায়ণ। গত তিন দশকে যে হারে নগরায়ণ বাড়ছিল তা টপকে আট বছরে নগরায়ণের হার কয়েকগুণ বেড়েছে। একটা সময় অভাবপীড়িত গ্রামের লোক কাজের সন্ধানে নগরমুখী হতো। তা ছিল নগরে মানুষের চাপ। এখন নগরমুখীর এই ধারা অনেকটা রূপান্তর ঘটেছে। এসেছে ভিন্নভাবে। গ্রামের অনেক বড় গৃহস্থ ও উঠতি ধনী পরিবার গ্রামের বাড়ির পাশাপাশি শহর ও নগরীর বাসিন্দা হচ্ছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষের বাস ছিল গ্রামাঞ্চলে। গত শতকের আশির দশকের শেষভাগ থেকে গ্রামের লোক বিচ্ছিন্নভাবে শহরের দিকে পাড়ি দিতে থাকে। বাড়তে থাকে শহরের আবাসনের সমস্যা। জরিপে দেখা গেছে, দেশের মোট আয়তনের প্রায় ১৫ ভাগ শহর ও নগর এলাকা। বর্তমানে সেখানে বাস মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৫ শতাংশের। কর্মসংস্থান ও জনজীবনের আর্থসামাজিক উন্নয়নে শহর ও নগরীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পরিসংখ্যান বিভাগ বলছে, বার্ষিক জাতীয় আয়ে গ্রামীণ কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে নগরায়ণের অবদান বাড়ছে। যে কারণে নব্বইয়ের দশকের মধ্যভাগ থেকে নগরায়ণের এলাকাগুলোতে সরকার ও দাতাসংস্থা অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছে। দেশের নগরীগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বছরে অন্তত ১২ শতাংশ করে। এই হার ক্রমেই বাড়ছে। বর্তমানে মোট জনসংখ্যার অন্তত ৩৫ শতাংশের বাস নগর মহানগর ও শহরাঞ্চলে। নগরবিদদের ধারণা ২ হাজার ২৫ সালে মোট জনসংখ্যার অন্তত ৪৫ শতাংশের বাস হবে নগর মহানগর ও জেলা শহরগুলোতে। নগরে আগমনের অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, চাকরি, সন্তানের লেখাপড়া, ব্যবসা বাণিজ্য, জীবনযাপনের নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা। অনেক ধনী গৃহস্থ গ্রামের জমিজমা থেকে উৎপাদিত ফসল বিক্রির অর্থের ওপর ভিত্তি করে নগরীতে বাস করছে। গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন ও বিদ্যুতায়ন নগরায়ণের অগ্রযাত্রাকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে। কৃষকের জীবনমান উন্নত হচ্ছে কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহারে বাড়তি ফসল উৎপাদনে। এই জীবনমান নিচে থেকে ওপরে উঠছে। পালা বদলের এই ধাপ এ রকম- দিনমজুর ক্ষুদ্র কৃষকে পরিণত, ক্ষুদ্র কৃষক মাঝারি কৃষকে, মধ্যম কৃষক ছোট ধনী কৃষকে, গৃহস্থ ও জোতদার ধনী কৃষকে উন্নীত হচ্ছে। এর বাইরে গ্রামে বিদ্যুতের সরবরাহে বড় গৃহস্থের একটি অংশ ছোট শিল্প, ডেইরি ফার্ম ইত্যাদি গড়ে তুলে আর্থিকভাবে সচ্ছল হচ্ছে। ওপরের সিঁড়িতে ওঠার এই পালায় বড় ও ধনী কৃষক পাড়ি দিচ্ছে গ্রাম থেকে শহরে। কেউ গ্রামে বসতভিটা রেখে দিয়ে নিজেদের জেলা শহরের দিকে যাচ্ছে। শহরের মধ্যে বাড়ি ভাড়া নিয়ে কিছুকাল বসবাসের পর শহরতলী বা অতি নিকটে কোন এলাকায় জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ করছে। এদের মধ্যে যে পরিবারের সঙ্গে রাজধানী ঢাকায় কোন না কোনভাবে পারিবারিক সংযোগ আছে তারা নিজেদের আরও আপগ্রেড করে রাজধানীমুখী হচ্ছে। সেখানেও একইভাবে প্রথমে ঢাকা মহানগরীতে কিছুটা সময় ভাড়ায় বাসের পর চারধারে কোন না কোন ডেভেলপারের প্লট কিনে মহানগরবাসী হচ্ছে। একইভাবে দেশের বড় নগরীগুলোতেও মাইগ্রেট করছে গ্রামের ধনী-শ্রেণী। যেমন উত্তরাঞ্চলের মধ্যনগরী বগুড়ায় গ্রাম ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পরিবার আবাসন গড়ে তুলছে। অন্যদিকে মহানগরী ঢাকার রিক্সা চলাচলের সড়কে রিক্সা ও সিএনজিচালিত অটোরিক্সা চালকের মধ্যে অনেকেরই দেখা মিলবে যাদের বাড়ি বৃহত্তর রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায়। উত্তরের চলনবিল দিন দিন শুকিয়ে যাওয়ায় জেলে পরিবারের অনেকে নগরমুখী হয়েছে। অস্তিত্বের লড়াইয়ে এসব মানুষ মাইগ্রেট করছে। শহর ও নগরে এভাবে জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি সমান তালে উপজেলাগুলোতে উন্নত স্থাপত্য অবকাঠামো গড়ে উঠায় কার্যত নগরায়ণের প্রাথমিক ধাপের দিকেই যাচ্ছে। শহরের যা বৈশিষ্ট্য তার প্রায় সবই এখন উপজেলাগুলোতে পৌঁছে গিয়েছে। সত্তরের দশকে দেশের ছোট জেলাগুলোর যেমন অবকাঠামো ছিল বর্তমানের উপজেলাগুলোতে তার চেয়ে ভাল অবকাঠামো লক্ষ্য করা যায়। উপজেলাগুলোর বেশিরভাগ সড়ক পাকা। যেখানে রিক্সা, অটো ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিক্সা চলাচল করে। বাস টার্মিনাল আছে। ঘরবাড়ি নির্মিত হচ্ছে আধুনিক ধাঁচে। শহরের মতো নিউমার্কেট, শপিংমল, ফাস্ট ফুড, উন্নত রেস্তরাঁ কোথাও আবাসিক হোটেল স্থাপিত হয়েছে। বিউটি পার্লার এখন উপজেলাগুলোতেও আছে। বিদ্যুতায়িত হওয়ায় তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির সবই এখন মাঠ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাড়তি এই জনসংখ্যা নগরী ও শহরে অপ্রতুল সীমিতি সম্পদের ওপর চাপ বাড়িয়ে তুলছে। নিয়মানুযায়ী প্রতিটি নগরীতে তার আয়তনের অন্তত ২৫ শতাংশ সড়ক থাকার কথা। রাজধানী ঢাকাসহ কোন নগরীতে ও শহরে তা নেই। কোথাও ৫ শতাংশেরও কম রাস্তা আছে। গত দশ বছরে মূল নগর অবকাঠামোর তেমন পরিবর্তন হয়নি। বিদ্যমান অবকাঠামোর ওপরেই বাড়তি জনসংখ্যার চাপে ভৌত অবকাঠামো হুমকির মুখে পড়েছে। নগরায়ণ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি নগরীর আশপাশের এলাকায় বাসস্থান সম্প্রসারিত হচ্ছে। নগর জীবনে নগরবাসীর যেসব সুবিধা ও প্রয়োজন থাকার কথা তা নেই।
×