ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মোঃ শাহজাহান কবীর

আউশ ধানের আবাদ এবং প্রাসঙ্গিকতা

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২৯ এপ্রিল ২০১৮

আউশ ধানের আবাদ এবং প্রাসঙ্গিকতা

আউশ একটি আদি ধান। ‘আশু’ শব্দ পরিবর্তিত হয়ে আউশ হয়েছে যার অর্থ আগাম। আশি থেকে এক শ’ বিশ দিনের ভেতর এই ধান ঘরে তোলা যায়। দ্রুত (আশু) ফসল উৎপন্ন হওয়ার বিচারে এই ধানের এমন নামকরণ হয়েছে। খনার বচনে আছে ‘আউশ ধানের চাষ, লাগে তিন মাস, কোল পাতলা ডাগর গুছি, লক্ষ্মী বলে হেথায় আছি অর্থাৎ আউশ ধান চাষে তিন মাস লাগে; ফাঁক ফাঁক করে লাগালে গোছা মোটা হয় এবং ফলনও বেশি হয়’। আরও সহজ কথায় আউশে আমন-বোরোর মত যতœ নিলে ফলন কোন অংশেই কম নয়। আউশের জীবনকাল কম এবং পানি সাশ্রয়ী। কথায় আছে জ্যৈষ্ঠে খরা ধানের ভরা। অথ্যাৎ জ্যৈষ্ঠ মাসে একটু বৃষ্টি পেলেই আউশের জমি সবুজ ধানে ভরে যায়। এজন্য আউশ আবাদে বৃষ্টি ছাড়া অতিরিক্ত পানির দরকার হয় না। সার দেয়ার প্রয়োজনীয়তাও কম। কোন কোন আউশ ধান নিজে থেকেই আগাছা দমন করার যোগ্যতা রাখে। এক সময় সারাদেশে বহু এলাকায় এ ধানের আবাদ করা হতো। আমাদের দেশে শুকনো মৌসুমে বোরো চাষে সেচ কাজে পানির চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায় যা মেটাতে ভূ-গর্ভস্থ পানি অধিক উত্তোলন করা হয়। ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর ব্যাপক চাপ পড়ে ও ভৌগোলিক পরিবেশ বিঘিœত হয়। গবেষণায় দেখা যায়, প্রতি কেজি চাল উৎপাদনে বোরো মৌসুমে ২৫০০-২৮০০ লিটার পানির প্রয়োজন যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই বোরো আবাদ আর না বাড়িয়ে বরং আউশের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। বর্তমান অবস্থা ও প্রেক্ষাপট স্বাধীনতার পরপর আউশের জমি ছিল ৩.০ মিলিয়ন হেক্টর। আর বোরোর জমি ছিল ১.০ মিলিয়ন হেক্টরের কাছাকাছি। বোরো শুধু হাওর আর বিল এলাকার আশপাশে চাষ করা হতো। আউশ করা হতো কিছুটা উঁচু জায়গায়। কালের বিবর্তনে বোরো আবাদ এলাকা সম্প্রসারণ হতে থাকে। বোরোর আওতা এখন ৫.০ মিলিয়ন হেক্টরের কাছাকাছি। এখানে বোরোর জমি এবং আউশ থেকে রূপান্তরিত জমি গভীর পানির ধান আবাদ এলাকা ও কিছু পতিত জমি রয়েছে। রূপান্তরিত বোরোর পুরো জমি আউশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। আউশ আবাদ বৃদ্ধিতে করণীয় বাংলাদেশে প্রতিবছর ২০-২২ লাখ নতুন মুখ যোগ হচ্ছে। এছাড়া মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে ১০ লাখ রোহিঙ্গা মোট জনসংখ্যার সঙ্গে যোগ হয়েছে, এই অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে খাওয়াতে প্রতিবছর অতিরিক্ত ৩.৫-৪.০ মিলিয়ন টন চাল উৎপাদন করতে হবে। তাছাড়া বোরো ও আমানের মাঝে প্রায় ছয় মাস কোন দানাদার শস্য হার্ভেস্ট না হওয়ায় দেশে খাদ্য নিরাপত্তা অনেকটাই অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে থাকে। এ সময়ে আউশ আবাদ সম্প্রসারণের মাধ্যমে একটা ভাল ফলন ঘরে তোলা গেলে এ ক্ষেত্রে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। যেখানে ভূগর্ভস্থ পানির স্বল্পতার কারণে সেচের সমস্যা রয়েছে, যেমন- বরেন্দ্র এলাকা, বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল, পার্বত্য চট্টগ্রাম ইত্যাদি এলাকায় আবাদ সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া বোরো-পতিত-রোপা আমন শস্যবিন্যাসে উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে আউশের আবাদ সম্প্রসারণ করা যাবে। দেশে মোট আবাদযোগ্য জমি ৮৫০৫২৭৮.১৪ হেক্টর, মোট সেচকৃত জমি ৭১২৪৮৯৫.৪১ হেক্টর, এবং আবাদযোগ্য পতিত জমি ২০৪৩৬৬.১৪ হেক্টর। সেচ সুবিধা সংবলিত জমি বোরো উৎপাদনে ছেড়ে আবাদযোগ্য পতিত জমিতে আউশ আবাদ সম্প্রসারণ করা গেলে গড় ফলন ৩.০টন/হে. ধরলেও ৬.১৩ মিলিয়ন টন ফলন জাতীয় উৎপাদনে যোগ হবে। এক্ষেত্রে নি¤েœাক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে- ক্সবোরো (৪.৮০ মিলিয়ন হেক্টর) জমি থেকে অন্তত ০.৯০ মিলিয়ন হেক্টর জমি আউশ আবাদের আওতায় এনে আউশের জমি ১.০৫ মিলিয়ন হেক্টর থেকে ১.৮০ মিলিয়ন হেক্টর বৃদ্ধি করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ক্সবর্ধিত জমি থেকে প্রায় ৫.২ মিলিয়ন টন ধান উৎপাদনের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা অপরিবর্তিত রাখা এবং কৃষক পর্যায়ে আউশ ধানের গড় ফলন ২.০ টন/হে থেকে ৩.০-৩.৫ টন/হে বৃদ্ধি করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ক্সউদ্ভাবিত জাত ও বিভিন্ন উৎপাদন প্রযুক্তি কৃষক পর্যায়ে জনপ্রিয়করণে বিএডিসি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরসহ অন্যান্য সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ দৃঢ় করা। ক্সআউশ মৌসুমের জন্য উদ্ভাবিত বিআর২০, বিআর২১, বিআর২৪, বিআর২৬, ব্রি-ধান৪২, ব্রি-ধান৪৩, ব্রি-ধান৬৫ ও ব্রি-ধান৮৩ বোনা হিসেবে এবং বিআর২৬, ব্রি-ধান২৭, ব্রি-ধান৪৮, ব্রি-ধান৮২ ও ব্রি-ধান৮৫ রোপা হিসেবে চাষ করা। ক্সতাছাড়া বোরো মৌসুমের চাষযোগ্য বিআর১, বিআর২, বিআর৩, বিআর৬, বিআর৭, বিআর৮, বিআর৯, বিআর১২, বিআর১৪, বিআর১৫, বিআর১৬, ব্রি-ধান২৮, ব্রি-ধান৫৫ আউশ মৌসুমে চাষ করা। ক্সআউশ মৌসুমের জন্য উদ্ভাবিত বিআর২৬ এর বিকল্প জাতগুলো মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারণে কাজ করতে হবে। ক্সআউশ ধান রোপণের সময় প্রয়োজনে ভূ-গর্ভস্থ পানি দিয়ে সম্পূরক সেচ নিশ্চিত করে আবাদি এলাকা বৃদ্ধি করা। ক্সউন্নতমানের বীজ সঠিক সময়ে কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং বিপণন ব্যবস্থা জোরদার করা। ক্সকৃষকদের উপকরণ ক্রয়ে প্রণোদনা প্রদান করে আউশ চাষ উৎসাহিত করা। ক্সবৃহত্তর বরিশালে রোপা আমন-রিলে খেসারি/রিলে ফেলন-পতিত, রোপা আমন-মুগ/তিল-পতিত, রোপা আমন-তরমুজ/মরিচ-পতিত ফসল ধারায় পতিত জমিতে বিআর২৬/ব্রি-ধান৪৮/ব্রি-ধান৮২ চাষ করা। ক্সপোল্ডারের অভ্যন্তরে খাল খনন ও মরা বা হাজামজা খাল ও নদী পুনঃখনন করে তাতে সংরক্ষিত পানি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ক্স লো-লিফ্ট পাম্পের (খখচ) মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থা উন্নত করা এবং ১/২ কিউসেক বা ১ কিউসেক পাম্প সরবরাহ বৃদ্ধি করা। আউশের প্রকারভেদ দু’রকমের আউশ হয়। যথা- বোনা ও রোপা আউশ। বোনা আউশ চৈত্রের শুরু থেকে বৈশাখের মধ্যে (মার্চের মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত) এবং রোপা আউশ বৃষ্টিপাতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে (মের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে) জমি তৈরি ও বীজ বপনের কাজ করতে হবে। বপন সময়ের তারতম্যের জন্য আউশ ধানের ফলনে তেমন পার্থক্য হয় না। কিন্তু দেরি করে ধান বপন করা হলে একই জমিতে রোপা আমন লাগাতে দেরি হয়ে যায়। ফলে আমন ধানের ফলন অনেক কমে যায়। এ ধানের ভাল ফলন পেতে হলে ভালভাবে জমি তৈরি করতে হবে। বোনা আউশ ধান চৈত্র-বৈশাখে বুনে আষাঢ়-শ্রাবণে কাটা যায়। বোনা আউশ সাধারণত উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে ৯০-১০০ দিনে জন্মে। বোনা আউশ রোপা আউশের চেয়েও আগাম। উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি বন্যামুক্ত। কিন্তু মাঝারি নি¤œ জমি বন্যাকবলিত হতে পারে তাই উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি আউশ আবাদের জন্য নির্বাচন করা ভাল। রোপা আউশ বন্যামুক্ত মাঝারি উঁচু ও মাঝারি নি¤œ জমিতে জন্মে যা আংশিক সেচ নির্ভর। ফলে ওই জমিতে আউশ ধান কাটার পরপরই আমন রোপণ করা হয়। আউশ ধান পানি সাশ্রয়ী এবং স্বল্প জীবনকালীন, যদিও ফলন কিছুটা কম। চ্যালেঞ্জসমূহ ক্স আগে আউশ আবাদ স্থানীয় জাত নির্ভর ছিল। স্থানীয় জাতের গড় ফলন ছিল হেক্টর প্রতি ২.০০ টন থেকে ২.৩৫ টন পর্যন্ত। ব্যতিক্রম ছিল কেবল কটকতারা, যার এর হেক্টর প্রতি ফলন ছিল ৩.৩৫ টন। তবে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনিস্টিটিউট (ব্রি) এখন পর্যন্ত ১১টি আউশের জাত উদ্ভাবন করেছে; যার মধ্যে বোনা হিসাবে বিআর২০, বিআর২১, বিআর২৪, ব্রি ধান৪২, ব্রি-ধান৪৩ ও ব্রি-ধান৮৩ এবং রোপা হিসাবে বিআর২৬, ব্রি-ধান২৭, ব্রি-ধান৪৮, ব্রি-ধান৮২ ও ব্রি-ধান৮৫সহ প্রতিটি জাতের ফলন কটকতারার চেয়ে অনেক বেশি। তাছাড়াও বোরো মৌসুমের ১২টি জাত আউশ মৌসুমে চাষ করা যায়। এগুলোর ফলন ৩.৫-৫টন/হে. এর বেশি। এছাড়া আরও বেশ কটি সম্ভাবনাময় জাত অবমুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। ক্স বোনা আউশে আগাছার উৎপাত রোপা ধানের তুলনায় অনেক বেশি। এ জন্য মৌসুম শুরুর আগেই শুকনো জমিতে ২-৩টি চাষের পর মই না দিয়ে জমি খোলা অবস্থায় রেখে দিতে হবে। এতে মাটি ভালভাবে শুকিয়ে যাবে ফলে অনেক আগাছা এবং পোকামাকড় ও রোগজীবাণু মরে যায়। তাছাড়া এ অবস্থায় বৃষ্টি হলে জমিতে আগাছার বীজ সহজেই গজাতে পারে। জমির আগাছা গজানো সম্পন্ন হলে আবারও চাষ ও মই দিয়ে (জো-থাকা অবস্থায়) মাটিকে ঝুর-ঝুরে তৈরি করতে হবে। এবার দেরি না করে বীজ বুনে ফেলতে হবে। বীজ বপন বোনা আউশের বীজ তিনভাবে বপন করা যায়- ক্স ছিটিয়ে- এতে শতকরা ৮০ ভাগ অঙ্কুরোদগম সম্পন্ন ভাল বীজ হেক্টর প্রতি ৭০-৮০ কেজি হারে বুনে দিতে হবে, এরপর হাল্কাভাবে একটা চাষ ও মই দিয়ে মাটি সমান করতে হবে। ক্স সারি করে- এতে ২৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে ৪-৫ সেমি গভীর করে সারি তৈরি করতে হবে এবং হেক্টর প্রতি ৪৫-৫০ কেজি হারে বীজ বপন করতে হবে। এবার মই দিয়ে মাটি সমান করতে হবে। ক্স ডিবলিং পদ্ধতিতে- এতে বাঁশ বা কাঠের দ- দিয়ে ২০ সেন্টিমিটার পর পর মাটিতে গর্ত করে গর্ত প্রতি ২/৩টি করে বীজ বপন করে মই দিয়ে মাটি সমান করে দিতে হবে। এ পদ্ধতিতে বীজের হার হলো হেক্টর প্রতি ২৫-৩০ কেজি। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কোন বীজ মাটির উপরে না থাকে। আবার বেশি গভীর ধান বপন করা হলে অনেক ধান ঠিকমতো গজাতে পারে না। জমিতে রস না থাকলে বীজ বপন না করাই ভাল। এতে কিছু সংখ্যক বীজ গজানোর পর মাটিতে রসের অভাবে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। চারা গজানোর এক সপ্তাহ পর আচড়া দিয়ে জমির মাটি আলগা করে দিতে হবে। এতে চারার ঘনত্ব ঠিক থাকে, গাছের বাড়-বাড়তিও ভাল হয় এবং আগাছা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। চারা রোপণ রোপা আউশে বীজতলায় বীজ বপনের সময় হলো ১৫ চৈত্র-৫ বৈশাখ (৩০ মার্চ-১৫ এপ্রিল) এবং চারা রোপণের সময় ৫-৩০ বৈশাখ (১৫ এপ্রিল-১০ মে)। চারার বয়স হতে হবে ২০-২৫ দিন। চারার রোপণ দূরত্ব সারি থেকে সারি ২০ সে. মি. এবং চারা থেকে চারা ১৫ সে.মি.। সার প্রয়োগ জমি তৈরির শেষ চাষের সময় শতাংশ প্রতি ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২১০ গ্রাম টিএসপি ও ৩৩০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বৃষ্টিবহুল বোনা আউশ এলাকায় ইউরিয়া সমান দু’কিস্তিতে প্রয়োগ করা ভাল। প্রথম কিস্তি শেষ চাষের সময় এবং দ্বিতীয় কিস্তি ধান বপনের ৩০-৪০ দিন পর। রোপা আউশে চারা রোপণের ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে ইউরিয়া উপরিপ্রয়োগ শেষ করতে হবে। জমিতে গন্ধক এবং দস্তার অভাব থাকলে শতাংশ প্রতি ১৩৫ গ্রাম জিপসাম ও ২০ জিঙ্ক সালফেট প্রয়োগ করতে হবে। আগাছা দমন বোনা আউশ ধানে আগাছার খুবই উপদ্রব হয়। সময়মতো আগাছা দমন না করলে শতকরা ৮০-১০০ ভাগ ফলন কমে যায়। সাধারণত হাত দিয়ে, নিড়ানি যন্ত্রের সাহায্যে অথবা আগাছানাশক ব্যবহারের মাধ্যমে আগাছা দমন করা যায়। হাত দিয়ে আগাছা নিড়ানো কষ্টকর ও শ্রমসাধ্য। এক্ষেত্রে বীজ বপনের ১৫-২০ দিন পর প্রথমবার এবং ৩৫-৪০ দিন পর দ্বিতীয়বার আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। সারি করে বপন বা রোপণ না করলে নিড়ানি যন্ত্র ব্যবহার করা যায় না। আগাছানাশক ব্যবহারের মাধ্যমে আগাছা দমন করা সহজ ও সাশ্রয়ী। এক্ষেত্রে বোনা আউশের জন্য প্রি-ইমারজেন্স আগাছানাশক হিসেবে পেনডামিথাইলিন, অক্সাডায়ারজিল এবং অক্সাডায়াজন গ্রুপের যে কোন আগাছানাশক বপনের ২/৩ দিনের মধ্যে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে জমি ভেজা থাকলেও কোন দাঁড়ানো পানি রাখা যাবে না। রোপা আউশ ধানের ক্ষেত্রে প্রি-ইমারজেন্স আগাছানাশক হিসেবে বেনসালফিউরানমিথাইল+এসিটাফ্লোর,মেফেনেসেট+বেনসালফিউরান মিথাইল সালফেনট্রাজোন ইত্যাদি গ্রুপের আগাছা নাশক রোপণের তিন দিনের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে। রোপা/বোনা আউশ ধানের ক্ষেত্রে পোস্ট ইমারজেন্স আগাছানাশক প্রয়োগেও আগাছা ভালভাবে পরিষ্কার হয়। সে ক্ষেত্রে বিসপাইরিবেক সোডিয়াম, বেনসালফিউরাল মিথাইল, ডায়াফিমনি ইথক্সিসালফিউরান, ফেনক্সলাম গ্রুপের আগাছানাশক জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। পরবর্তীতে আগাছার অবস্থা বুঝে ৩৫-৪০ দিন পর একবার হাতে নিড়ানি দিতে হবে। আগাছানাশক ব্যবহারের মাধ্যমে আগাছা দমন করলে খরচ দু’বার হাত নিড়ানির চেয়ে কম পড়ে। পোকামাকড় ... নিবিড় চাষাবাদ ও আবহাওয়াজনিত কারণে আউশে পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাব ও আক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। ফলে ক্ষতিকর পোকা দমন এবং ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বাড়বে। আউশে মুখ্য পোকাগুলো হলো- মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, লেদা পোকা, ঘাস ফড়িং, সবুজ শুঁড় লেদা পোকা, ঘোড়া পোকা, সবুজ পাতা ফড়িং, বাদামি গাছ ফড়িং, সাদা পিঠ গাছ ফড়িং, ছাতরা পোকা, গান্ধি পোকা, শীষকাটা লেদা পোকা ইত্যাদি। পোকার ক্ষতির মাত্রা পোকার প্রজাতি, পোকার সংখ্যা, এলাকার সামগ্রিক পরিবেশ, জমি বা তার আশপাশের অবস্থা, ধানের জাত, ধানগাছের বয়স, উপকারী পরভোজী ও পরজীবী পোকামাকড়ের সংখ্যা ইত্যাদির উপর নির্ভরশীল। ধান ক্ষেতে ক্ষতিকারক পোকা দেখা গেলে এর সঙ্গে বন্ধু পোকা, যেমন মাকড়সা, লেডি-বার্ড বিটল, ক্যারাবিড বিটলসহ অনেক পরজীবী ও পরভোজী পোকামাকড় কি পরিমাণে আছে তা দেখতে হবে এবং শুধু প্রয়োজনে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। প্রধান প্রধান ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ দমন করলে বোরো, আউশ এবং রোপা আমন মৌসুমে যথাক্রমে শতকরা ১৩, ২৪ এবং ১৮ ভাগ ফলন বেশি হতে পারে। (চলবে...) লেখক : মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট
×