ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিজিবি বিএসএফ ঐকমত্য

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২৯ এপ্রিল ২০১৮

বিজিবি বিএসএফ ঐকমত্য

বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী হলো ভারত, একইসঙ্গে সুদীর্ঘকালের পরীক্ষিত মিত্র। তাই সামান্য কারণে দুই দেশের সীমান্ত পরিস্থিতিতে অস্বস্তি বিরাজ করুকÑ এটা কোন পক্ষেরই কাম্য হতে পারে না। চোরাচালান যে কোন দেশের সীমান্তের জন্যই একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। এছাড়াও সীমান্তকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অপরাধ বিস্তার লাভ করে থাকে। সেসব মোকাবেলাও বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তও তার ব্যতিক্রম নয়। চোরাচালান রোধ করা পুরোপুরি সম্ভব হলে সেটি উভয় রাষ্ট্রের জন্যই মঙ্গলজনক। যাহোক, শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত সুসংবাদ মিলেছে। পিলখানার বিজিবি সদর দফতরে সদ্যসমাপ্ত বিজিবি-বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ে ৪৬তম সীমান্ত সম্মেলনে সীমান্তে হত্যাসহ সব ধরনের অপরাধ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে একমত বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এজন্য বাহিনী দুটির মহাপরিচালকরা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান। প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার ফলে চলতি বছর সীমান্তে কোন হত্যাকা-ে ঘটনা ঘটেনি। বিজিবি মহাপরিচালকের ভাষ্যমতে, বিএসএফ সীমান্তে অনেক দিন ধরেই প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করছে না। ফলে সীমান্তে হত্যা অনেক কমে এসেছে। বিগত বছরগুলোতে সীমান্তে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তবে চলতি বছর এখন পর্যন্ত একটিও সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটেনি। বিএসএফ সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার ফলে তারা অপরাধীদের হামলার শিকার হচ্ছেন। বলা দরকার, ফেলানী হত্যার ঘটনাটি একটি সংবেদনশীল ইস্যু হয়ে আছে দেশের জন্য। তবে এ সংক্রান্ত মামলাটি ভারতের আদালতে বিচারাধীন থাকায় বিজিবি বা বিএসএফ কোন পক্ষই এ বিষয়ে আলোচনা করেনি। বিজিবি মহাপরিচালক ও বিএসএফ মহাপরিচালক সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে গবাদিপশু ও মাদক চোরাচালানপ্রবণ এলাকায় সমন্বিত যৌথ টহল পরিচালনা, সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বিধিনিষেধ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি ও অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম বন্ধে যৌথ পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে একমত হয়েছেন। এটি জরুরী ছিল। যৌথ সিদ্ধান্তের ফলেই ভারতের আগরতলায় ইটিপি এবং বাংলাদেশের আখাউড়া আইসিপির ভারতীয় অংশে বক্স কালভার্ট ড্রেনেজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এতে করে দুই দেশের ওইসব এলাকায় দূষণ কমবে বলেও আশা করা যায়। উল্লেখ্য, পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা ও ভারতের ফুলবাড়ী সীমান্তে বিজিবি ও বিএসএফের পক্ষ থেকে দুই দেশের জাতীয় পতাকা যৌথভাবে অবনমনের (জয়েন্ট রিট্রীট সেরিমনি) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে শুক্রবার। বলাবাহুল্য, এ ধরনের উদ্যোগ সীমান্তে সম্প্রীতির সুবাতাস এনে দেয়। অহেতুক উত্তেজনা পরিহারে এ ধরনের প্রীতিকর দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগ আরও নেয়া যেতে পারে। জয়েন্ট রিট্রীট সেরিমনি সম্পর্কে বিজিবি ও বিএসএফÑ উভয় কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া সন্তোষজনক ও বন্ধুসুলভ। বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, দুই দেশের সীমান্ত বাহিনীর মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির লক্ষ্যে এই উদ্যোগ। এটা চালুর মাধ্যমে দুই বাহিনীর সম্পর্কের নতুন দ্বার উন্মোচন হলো। অপরদিকে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, এটা মাইল ফলক হয়ে থাকবে। এখান থেকে দুই দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের নতুন ইতিহাস শুরু হলো। কিছুকাল আগে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রদত্ত তথ্যে উঠে আসে ভারতের পাঁচটি রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৪০৯৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩০০৬ কিলোমিটারে রয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। বাকি ১০৯০ কিলোমিটারের মধ্যে ৪০৬ কিলোমিটার ভৌগোলিক কারণে বেড়া দেয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত স্বস্তিকর থাকুক, অপরাধ বন্ধ হোক, সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে স্থানীয় জনসাধারণের সম্পর্ক থাকুক প্রীতিকরÑ এটাই প্রত্যাশা।
×