ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কাকরাইল মসজিদে তাবলিগ জামাতের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৯ এপ্রিল ২০১৮

কাকরাইল মসজিদে তাবলিগ জামাতের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তাবলিগ-জামাতের মারকাজ রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে সাদপন্থী ও হেফাজতপন্থী দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় ছয় মুরুব্বির ওপর সোমবার পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। দিনভর উত্তেজনার পর শনিবার দুপুরে কাকরাইল মসজিদে চলমান সমস্যা সমাধানে শুরা সদস্য এবং প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এই সমঝোতা হয়। এ দিকে গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে শত শত শিক্ষার্থী এনে তাবলিগ জামাতের প্রধান কেন্দ্র (মারকাজ) সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিরোধীরা দখলে নিয়েছিল। সাদের দেয়া কোন সিদ্ধান্ত আর এ দেশে বাস্তবায়িত হবে না বলেও তারা ঘোষণা দেন। এরই সূত্র ধরে দুইপক্ষের মধ্যে এই হাতাহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়। সূত্র জানায়, বৈঠকে দুটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুরা সদস্য মাওলানা জুবায়ের আহমদ ও সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মারকাজ মসজিদের বাইরে অবস্থান করবেন। এ ছাড়া দুইগ্রুপের চারজন শুরা সদস্য সাময়িক মারকাজ মসজিদে আসতে পারবেন না। তারা হচ্ছেন, (নেজামুদ্দীন অনুসারী) মাওলানা আবদুল্লাহ মনছুর, ড. এরতেজা হাসান। (আলমি শুরার) ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজ হান্নান ও আজগর আলী। ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জানান, মসজিদের পরিবেশ রক্ষায় ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে কাকরাইল মসজিদ থেকে বহিরাগতদের বের করে দেয়া হয়েছে। মসজিদের স্বাভাবিক কাজকর্ম চলবে। বাইরে থেকে কেউ এসে মসজিদে অবস্থান করতে পারবেন না। তবে নামাজ আদায় করা যাবে। আমরা বহিরাগত সবাইকে বের করে দিয়েছি। মসজিদের স্বাভাবিক কাজকর্ম চলবে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, তাবলিগের আট শুরা সদস্য এবং ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন, রমনা জোনের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদারসহ আরও বেশ কয়েক শীর্ষ কর্মকর্তা বৈঠক করেন। বৈঠকের সমন্বয়ক ছিলেন আম্বরশাহ মসজিদের খতিব মাওলানা মাজহারুল ইসলাম। তিনি জানান, বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ দুটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। কাকরাইল মসজিদ ঘিরে বর্তমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দেশের বাইরে থাকায় আপাতত এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিনি আসার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সকালে কাকরাইল মসজিদে তাবলিগ-জামাতের সাদপন্থী ও হেফাজতপন্থীদের দুইগ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এরপর মসজিদের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। দুইপক্ষকেই বের করে দিয়ে মসজিদ ফাঁকা করে পুলিশ। পরে পুলিশ কাকরাইল মসজিদ থেকে মোবাইল ফোনের জ্যামারের মতো যন্ত্রও উদ্ধার করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে মাওলানা সাদের অনুসারীরা বৈঠকে যোগ দিতে এলে তাদের বাধা দেন মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা। তখন বাঁধে মারামারি। মাওলানা সাদের অনুসারী আকরাম হোসেন জানান, বৈঠকে আমরা যেতে চাইলে গেটে আমাদের বাধা দেয়া হয়। বৈঠকের রুমে ঢুকতে গেলে ওই পক্ষের লোকজনের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। এরপর পুলিশ এসে দুইপক্ষকে সরিয়ে দেয়। বাধাদানকারীরা কওমি মাদ্রাসার ছাত্র বলে জানান তিনি। আকরাম হোসেন জানান, পুলিশ দুই পক্ষেরই শীর্ষ নেতাদের স্থান ত্যাগ করে চলে যেতে বলার পর তারা বেরিয়ে আসেন। এর আগে তাবলিগের দুইপক্ষের বিরোধ অবসানে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটির সদস্য আবদুল কুদ্দুস জানান, আমি ঢাকার বাইরে আছি। নিজেদের মধ্যে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করছি। এরপরই সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। দুপুরের দিকে পুলিশের রমনা বিভাগের কয়েক কর্মকর্তাও ঘটনাস্থলে গিয়ে চলমান সমস্যা সমাধানে শুরা সদস্যদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন। কাকরাইলের মুসল্লিরা জানান, সাদবিরোধীরা কয়েক দিন ধরে মারকাজ ও এর পার্শ্ববর্তী মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে ছাত্রদের জড়ো করতে শুরু করেন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তারা মারকাজ সংলগ্ন কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলার দুটি কক্ষে মোবাইল ফোন ‘জ্যামার’ বসান। এতে পুরো মারকাজের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে শনিবার সকালে দৈনন্দিন পরামর্শ সভা থেকে সাদের সিদ্ধান্ত আর না মানার ঘোষণা দেয়া হয়। সূত্রগুলো জানায়, দেশে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১১ শুরা সদস্য আছেন। এর মধ্যে কাকরাইল মসজিদের খতিব ও পার্শ্ববর্তী উলুম উদ দুনিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম জুবায়ের আহমদের নেতৃত্বে পাঁচজন মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। অন্যদিকে রয়েছেন ওয়াসিফুল ইসলামের নেতৃত্বে বাকি ছয়জন। এই ১১ জনের যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন ছয়জন। যাদের ফয়সাল (সিদ্ধান্তদাতা) বলা হয়। শুরা সদস্যের মধ্যে কারা ফয়সাল হবেনÑ তা এত দিন মাওলানা সাদ নির্ধারণ করে দিতেন। সম্প্রতি আরও দুই শুরা সদস্যকে তিনি ফয়সাল হিসেবে নিয়োগ দেন। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন জুবায়ের আহমদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ শুরা সদস্য। শুক্রবার জুমার নামাজে কাকরাইল মসজিদে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাধারণ মানুষ অংশ নেন। সাদের অনুসারী মিজানুর রহমান নামে এক মুসল্লি জানান, মারকাজে প্রতিদিন সকালে পরামর্শ সভা বা মাসোয়ারা বসে। এর নেতৃত্বে থাকেন একজন ফয়সাল। প্রতি সাত দিন পরপর এই নেতৃত্ব বদল হয়। এখন নেতৃত্বে রয়েছেন শুরা সদস্য রবিউল হক। যিনি জুবায়ের আহমদের অনুসারী। শুক্রবার সকালে তার নেতৃত্বে যখন পরামর্শ সভা বসে। তখন বাইরে থেকে আসা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা লাঠি হাতে তাদের ঘিরে রাখে।
×