ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা- বিনা বিচারে কেউ যেন আটক না থাকেন ॥ আইনমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৯ এপ্রিল ২০১৮

প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা- বিনা বিচারে কেউ যেন আটক না থাকেন ॥ আইনমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কারাগারকে সংশোধনাগারে পরিণত করার জন্য আধুনিক কারা আইন ও পরিবর্ধিত কারাবিধি প্রণয়ন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট নির্দেশনা হচ্ছে বিনা বিচারে কেউ যেন কারাগারে আটক না থাকেন এবং মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তার এই নির্দেশনার আলোকে সব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ করে কারাবন্দীদের বিচার দ্রুততম সময়ে শেষ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সরকারী আইনী সহায়তা কার্যক্রমের সাফল্য নির্ভর করছে জনসচেতনতার ওপর। কারণ এখনও এদেশের জনগণের একটি অংশ দরিদ্র ও নিরক্ষর। এই দরিদ্র ও নিরক্ষর জনগণ তাদের আইনগত অধিকার সম্পর্কে ততটা সচেতন নয়। তাই ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। এছাড়া দেশের সকল বিচারক, আইনজীবী, এনজিও কর্মী ও সুশীল সমাজকে সরকারের আইনগত সেবা প্রদান কার্যক্রমের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে হবে। শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী এ তথ্য জানান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হক। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক এবং জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক মোঃ জাফরুল হাসান। আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা আইনগত সহায়তার পাশাপাশি ন্যায় বিচার প্রদানের জন্যে দক্ষ ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই। সেই ইচ্ছাকে বাস্তব রূপ দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ আদালত থেকে অধস্তন আদালত পর্যন্ত সকল বিজ্ঞ বিচারকদের বেতন ও সুবিধাদি বৃদ্ধি করেছি। দেশীয় প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিজ্ঞ বিচারকদের বিদেশে নিয়ে গিয়ে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। আমি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলতে পারি এবারই প্রথম সরকারী উদ্যোগে বিচারকদের বিদেশে নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার সরকার গঠনের পর আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার পেতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে সরকারী খরচে আইনগত সহায়তা প্রদানের জন্য ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ প্রণয়ন করেন এবং সরকারী আইনী সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা’ প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনের পর এই আইনের বাস্তবায়ন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় সরকার গঠন করলে উক্ত আইনের বাস্তবায়ন কার্যক্রমকে বেগবান ও ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয় কতিপয় উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। কার্যকর করা হয় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থাকে। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দেশের ৬৪টি জেলায় জেলা জজের নেতৃত্বে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করা হয় জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির পাশাপাশি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এবং চৌকি আদালতসহ সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্টে লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করে সেখানে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা সরকারী আইনী সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। এ ছাড়া দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শ্রমিকদের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে শ্রমিক আইন সহায়তা সেল স্থাপন করে সেখানে সরকারী আইন সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এই আইনী সহায়তা কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে সকল শ্রম আদালতে চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।‘আমরা প্রত্যেক জেলায় লিগ্যাল এইড অফিসগুলোকে কার্যকর, গতিশীল ও সেবাবান্ধব করতে একজন করে সিনিয়র সহকারী জজ বা সহকারী জজকে নিয়োগ করেছি। তারা আইনগত সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি বিনামূল্যে আইনগত পরামর্শ প্রদান এবং বিভিন্ন পক্ষের মধ্যকার বিরোধ বা মামলা বিকল্প বিরোধ পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি করছেন।’ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আরও বলেন, ‘এখন বিশ্বের উন্নত দেশের মতোই অফিস চলাকালীন আইনী পরামর্শের জন্য দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে যে কেউ জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থায় স্থাপিত টোল ফ্রি জাতীয় হেল্প লাইন ১৬৪৩০ নম্বরে ফোন করে আইনী সেবা নিতে পারছেন। সরকারী আইনী সহায়তা কার্যক্রম সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করার লক্ষ্যে শনিবার জাতীয়ভাবে আইনগত সহায়তা দিবস পালন করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এবারের প্রতিপাদ্য হলো- উন্নয়ন আর আইনের শাসনে এগিয়ে চলছে দেশ/লিগ্যাল এইডের সুফল পাচ্ছে সারা বাংলাদেশ। দেশের বিচারক, সব আইনজীবী, এনজিও কর্মী ও সুশীল সমাজ সরকারের এ আইনগত সেবা দেয়ার কার্যক্রমের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এই উদ্যোগকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দেবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন আনিসুল হক। বিনামূল্যে সরকারের আইনগত সহায়তা নেয়া তিন ব্যক্তি তাদের অভিজ্ঞতা তুল ধরেন অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে একটি উপস্থাপনার মাধ্যমে সরকারের আইনগত সহায়তার সাফল্যের চিত্র তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া আইনগত সহায়তা নিয়ে সচেতনতামূলক তিনটি টিভি বিজ্ঞাপন উদ্বোধন করেন আইনমন্ত্রী। আইনগত সহায়তা দিবসের অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনের পর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সামনে আইনগত সহায়তাবিষয়ক মেলা ও রক্তদান কর্মসূচীও উদ্বোধন করেন আইনমন্ত্রী।
×