ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তদন্ত কমিটি ২ মে কাজ শুরু করবে

তালহার পর আরও কয়েক কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৯ এপ্রিল ২০১৮

তালহার পর আরও কয়েক কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হতে পারে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার খন্দকার এম তালহার পর সেখান থেকে আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হতে পারে। আর সরকারের উচ্চ পর্যায়ে গঠিত তদন্ত কমিটি আগামী ২ মে থেকে তদন্ত কাজ শুরু করবে। এছাড়া ডেপুটি হাইকমিশনার তালহা আগামী ৩ মে ঢাকায় ফিরবেন। লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে বিএনপির হামলা, ভাংচুর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি খুলে ভাংচুরের ঘটনায় একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেনের নেতৃত্বে এই তদন্ত কমিটিতে ৫ সদস্য রয়েছেন। সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার খন্দকার এম তালহাকে আগামী ৭ মে’র মধ্যে দায়িত্ব ছেড়ে ঢাকায় ফিরে আসতে বলা হয়েছে। তবে এর আগেই তিনি আগামী ৩ মে ঢাকায় ফিরবেন। এ নিয়ে হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনায় খন্দকার এম তালহা সে সময় হাইকমিশনের দায়িত্বে থাকলেও তিনি তাৎক্ষণিকভাবে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেননি। এছাড়া তিনি দায়িত্বে থাকাকালে হাইকমিশনের মধ্যে ঢুকে হামলা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ভাংচুরের ঘটনায় যথাযথ ভূমিকা না নেয়ায় তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তিনি লন্ডন হাইকমিশনে প্রায় চার বছর কর্মরত রয়েছেন। তবে এই ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার জন্য হাইকমিশনের অন্তত আরও দু’জন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হতে পারে বলে জানা গেছে। এছাড়া হাইকমিশনে বিএনপির হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি আগামী ২ মে থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করবে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার রায়কে কেন্দ্র করে গত ৭ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য বিএনপি শাখা থেকে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা চালানো হয়। বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলার দিন হাইকমিশনে ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন ডেপুটি হাইকমিশনার খন্দকার তালহা। আর যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার নাজমুল কাউনাইন তার পরিচয়পত্র প্রদানের জন্য তখন আয়ারল্যান্ডে অবস্থান করছিলেন। সে সময় লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনের সামনে বিএনপি যুক্তরাজ্য শাখা ও এর অঙ্গ সংগঠনসমূহ আয়োজিত বিক্ষোভ শেষে স্মারকলিপি হস্তান্তরের নামে একদল বিক্ষোভকারী জোরপূর্বক দূতাবাসের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে দূতাবাসের কর্মচারীদের আক্রমণ করে এবং দূতাবাসের সম্পত্তি ভাংচুর করে। একই সঙ্গে হাইকমিশনে রাখা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি অবমাননা করে। ঘটনার পর লন্ডন পুলিশ হাইকমিশনকে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ হস্তান্তরের পাশাপাশি একজনকে গ্রেফতার করে। ওই ঘটনার পরে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, হাইকমিশন কর্তৃক স্মারকলিপি গ্রহণ একটি নিয়মিত ও নিয়মতান্ত্রিক বিষয়। উক্ত দিনেও নিয়মতান্ত্রিকভাবে হাইকমিশনের নির্ধারিত কর্মকর্তার নিকট স্মারকলিপি হস্তান্তরের জন্য কর্তব্যরত পুলিশের মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের অনুরোধ করা হয়। পরবর্তীতে বিক্ষোভকারী কর্তৃক ন্যক্কারজনক ও সহিংস কার্যক্রম থেকে প্রতীয়মান হয় যে স্মারকলিপি প্রদানের বিষয়টি হাইকমিশনে আক্রমণের অজুহাত ছিল মাত্র। বিক্ষোভ সমাবেশের শুরুতেই কোন কারণ ছাড়া বিক্ষোভের শীর্ষ নেতৃত্বসহ কতিপয় বিক্ষোভকারী হাইকমিশনের এক কর্মচারীকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করে। এই প্রেক্ষিতে হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় যুক্তরাজ্য বিএনপি শাখা থেকে পরবর্তীতে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে হামলার ঘটনায় বিএনপি দুঃখপ্রকাশ করে। তবে বিএনপির বিবৃতিতে অসত্য তথ্য দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে যুক্তরাজ্য হাইকমিশন। ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পর লন্ডন হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার খন্দকার তালহাকে গত বৃহস্পতিবার প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাশাপাশি পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেনকে এই তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর দফতর, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনে ২২ মার্চ যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের এক সভায় বক্তব্যে এ বিষয়ে কড়া অবস্থান নিতে বলেন। এরপরই ডেপুটি হাইকমিশনার তালহাকে প্রত্যাহার করা হয়।
×