ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আশা জাগিয়েও পারল না বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৮ এপ্রিল ২০১৮

আশা জাগিয়েও পারল না বাংলাদেশ

রুমেল খান ॥ প্রতিপক্ষ শেষ কাক্সিক্ষত পয়েন্টটা লাভ করতেই শেষ হয়ে গেল সব আশা-ভরসা-স্বপ্ন আর প্রতিরোধ। কোর্টের ঠিক বাইরে গিয়েই একে একে গোল হয়ে ধপ্ করে বসে পড়লেন হরোশিতরা। সবার মুখ থমথমে, মলিন। চোখ ছলছল। কণ্ঠ বাকরুদ্ধ। হ্যাঁ, হেরে গেছে বাংলাদেশ। ‘বঙ্গবন্ধু এশিয়ান সিনিয়র মেনস সেন্ট্রাল জোন ইন্টারন্যাশনাল ভলিবল চ্যাম্পিয়নশিপে’র দ্বিতীয় আসরের ফাইনালে তারা হেরে গেছে শক্তিশালী তুর্কমেনিস্তানের কাছে। অথচ প্রথম সেটটি জিতে এগিয়ে গিয়েছিল স্বাগতিক বাংলাদেশই। কিন্তু শুরুর সেই সাফল্য আর ধরে রাখতে পারেনি তারা। প্রতিপক্ষ তুর্কমেনিস্তান আধিপত্য বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জিতে নেয় ১-৩ সেটে (২৪-২৬, ২৫-২০, ২৫-২১, ২৫-১৭ পয়েন্টে)। এছাড়া তৃতীয়/চতুর্থ স্থান নির্ধারাণী ম্যাচে নেপালকে ৩-০ সেটে হারিয়ে তৃতীয় হয় গত আসরের রাসার্সআপ দল কিরগিজস্তান। এই আসরে গ্রুপ (‘এ’) ম্যাচে বাংলাদেশ হারায় যথাক্রমে নেপাল এবং মালদ্বীপকে। সেমিতে হাড্ডাহড্ডি লড়াই করে হারায় কিরগিজস্তানকে। পক্ষান্তরে ‘বি’ গ্রুপে তুর্কমেনিস্তান যথাক্রমে হারায় উজবেকিস্তান এবং কিরগিজস্তানকে। সেমিতে হারায় নেপালকে। এই হারে ২০১৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাংলাদেশ দল পারলো না শিরোপা অক্ষুণœ রাখতে। সেবার অনুষ্ঠিত প্রথম আসরে লাল-সবুজরা কিরগিজস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। মিরপুরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামের আসন সংখ্যা সাড়ে চার হাজার। কিন্তু গ্যালারিতে ছিল এর দ্বিগুণ দর্শক। আসন না পেয়ে প্রচুর দর্শক দাঁড়িয়েও খেলা উপভোগ করেছেন। মাইকে বেজেছে বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান। কিন্তু সেসব যে লাল-সবুজ বাহিনীকে খুব একটা উদ্দীপ্ত করতে পারেনি তা তাদের ভুলে ভরা এবং হতাশাজনক পারফর্মেন্স দেখেই বোঝা গেছে। বেশকিছু ভুল করেছে তারা। এগুলোরই মাশুল দিতে হয়েছে শিরোপা হাতছাড়া করে। অবশ্য গোটা খেলাতেই তুর্কমেনিস্তানের কৌশল ছিল খুবই উন্নতমানের, যার সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারেনি স্বাগতিক দল। প্রধান ও বিশেষ অতিথিদের ভেন্যুতে পৌঁছাতে দেরি করায় ফাইনাল খেলাও শুরু হয় পাক্কা এক ঘণ্টা দেরিতে। প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী দিনেও একই ঘটনা ঘটেছিল। প্রথম সেটে অবিশ্বাস্যভাবে জিতে আলীপোর আরোজির শিষ্যরা। কেননা এই সেটে শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে তারা। সবমিলিয়ে এই সেটে তারা সমতা ফেরায় মাত্র চার বার, পিছিয়ে পড়ে ১৫ বার। একপর্যায়ে পয়েন্ট পেয়ে ২৪-২৪ পয়েন্টে সমতা এনে ফেলে। সেটের একেবারে শেষদিকে গিয়ে প্রথমবারের মতো নাটকীয়ভাবে লিড নেয় (২৫-২৪) বাংলাদেশ। নিয়ম হচ্ছে ২৪-২৪-এ সমতা হলে যে কোন দলকে টানা ২ পয়েন্ট পেতে হবে। সেই শর্ত পূরণ করেই দুর্দান্ত স্ম্যাশ আর ব্লক করে ২৬-২৪ পয়েন্টে লিড নিয়ে প্রথম সেট (১-০) জিতে নেয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সেটেও শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। পাঁচবার সমতা ফিরিয়েও সেট বাঁচাতে পারেনি তারা। লিড নেয় মাত্র একবার (১৬-১৫)। তুর্কমেনিস্তান সর্বোচ্চ দু’বার চার পয়েন্টের (৮-৪, ২৪-২০) ব্যবধানে এগিয়ে থাকে। ৫ বার সার্ভিস ব্রেক করেও এই সেট জিততে পারেনি বাংলাদেশ। অথচ ৪ বার সার্ভিস ব্রেক করেও এই সেট জিতে নেয় তুর্কমেনিস্তান, ২৫-২০ পয়েন্টে, সেই সঙ্গে ফেরায় সমতা (১-১)। তৃতীয় সেটে এবার কিছুটা ভাল খেলে বাংলাদেশ। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। এই সেটের শুরুর পয়েন্টটি অবশ্য তারাই পেয়েছিল। মাত্র দু’বার লিড নিতে পেরেছিল তারা। বাকিটা সময় দাপট দেখায় তুর্কমেনিস্তান দল। তারা সর্বোচ্চ চারবার (১৩-৭, ১৪-৮, ২১-১৫, ২৩-১৭ পয়েন্ট) ৬ পয়েন্টের ব্যবধান এগিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ২৫-২১ পয়েন্টে হারিয়ে এবার তুর্কমেনিস্তান এগিয়ে যায় ২-১ সেটে। দ্বিগুণ চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। চতুর্থ সেটে গিয়ে এই চাপেই শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে পড়ে বাংলাদেশে। ভুলের পর ভুল, আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলা, টেকনিকে সমস্যা... সবমিলিয়ে আর ফিরে আসতে পারেনি তারা। বরং এই সেটেই সবচেয়ে খারাপ খেলে বাংলাদেশ। অথচ লিড নিয়েছিল ১১ বার! তাছাড়া এই সেটেও প্রথম পয়েন্টটা তারাই পেয়েছিল। কিন্তু শেষ পয়েন্টটা পায় বিপক্ষ দলই। এই সেটে একপর্যায়ে ১২-১২ পয়েন্টে সমতা ছিল। তারপরই নৈপুণ্যের পতন হতে শুরু করে বাংলাদেশের। ১৫-১৭, ১৫-১৯, ১৫-২১, ১৬-২১, ১৬-২২, ১৬-২৩, ১৬-২৪, ১৭-২৪, ১৭-২৫... শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের সব সুনীল স্বপ্ন। ৩-১ সেটে ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে মেতে ওঠে তুর্কমেনিস্তান দল। আর হতাশায় বিহ্বল বাংলাদেশ।
×