ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অবৈধ দোকানে হুমকির মুখে কুমিল্লার ধর্মসাগর নগর উদ্যানের পরিবেশ

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৮ এপ্রিল ২০১৮

অবৈধ দোকানে হুমকির মুখে কুমিল্লার ধর্মসাগর নগর উদ্যানের পরিবেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নাগরিক জীবনে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষেরা প্রকৃতির ছোঁয়ায় একটু স্বস্তি পাওয়ার জন্য রোজ ছুটে আসেন। স্বাস্থ্য সচেতন লোকজন সকালে ও সন্ধ্যায় হেঁটে বেড়ান এখানে। তবে দোকানপাট বেড়ে যাওয়ায় সে পরিবেশ নষ্ট হতে বসেছে। বাণিজ্যকেন্দ্রে রূপ নিয়েছে উদ্যান এলাকা। কুমিল্লার ধর্মসাগর নগর উদ্যানের এ অবস্থার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশান (কুসিক)-এর মৌখিক অনুমোদনেই এসব দোকান বসানো হয়েছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে উদ্যানের পরিবেশ। জানা যায়, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়ে কাউন্সিলর ও রাজনৈতিক ক্যাডার এবং স্থানীয়দের ছত্রছায়ায় স্থাপন করা হয়েছে এসব দোকানপাট। বড় আকারে পাকাপোক্তভাবে নির্মাণ করা হয়েছে দোকানগুলো। সরেজমিনেও দেখা যায়, সুনসান নীরবতা ও নির্জন সৌন্দর্যের স্থান বলে পরিচিত এ স্থানটিতে ইদানীং বাজারের কোলাহল শুরু হয়েছে। দিন দিন দোকানপাট বাড়ছে, হকারদের আনাগোনা আর বখাটেদের উৎপাতও বেড়েছে। ময়লা-অবর্জনায় ধর্মসাগর দিঘির পানি স্বচ্ছতা হারাতে বসেছে। নগর উদ্যানে আগের মতো বসে প্রকৃতির ছোঁয়ায় একটু স্বস্তি নেয়ার সুযোগ নেই। বসার স্থানগুলো দখল করে ২৬ থেকে ২৭টি অবৈধ বাণিজ্যিক দোকান-স্থাপনা গড়ে উঠেছে। তারমধ্যে শেষ বেলা ও ক্ষণিকালয় নামে দু’টি দোকানের অনুমোদন থাকলেও বাকিগুলো অবৈধ। অন্যদিকে ধর্মসাগর পাড়ের প্রবেশ মুখেও দেখা গেছে- হোটেল, ভেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অস্থায়ী দোকান ও হকার। যেন উদ্যান নয়, একটা বাজার। প্লাস্টিকের চেয়ার পেতে সেখানে চালানো হচ্ছে দোকানদারি। অবৈধ দখল জায়েজ করতে একজন দিয়ে বসেছেন বইয়ের দোকান, যাতে মানুষের সহানুভূতি মেলে। নগরের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন ও আক্কাস উদ্দিন জানান, নগর উদ্যানের আয়তন অনুসারে এখানে এতো দোকানের কোন প্রয়োজন ছিল না। ধর্মসাগর আর নগর উদ্যানে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষগুলো একটু হাঁটতে ও ঘুরতে আসে, বাজার করতে নয়। এহতেশাম হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘এখানে যে নিরিবিলি পরিবেশ ছিল, তা হারিয়ে যাচ্ছে। একটা-দু’টা করে দোকান বসতে বসতে এখান বাজার হয়ে যাচ্ছে। আমরা বুক ভরা সতেজ নিঃশ্বাস নেয়ার স্থান হিসেবে আগের সেই ধর্মসাগর নগর উদ্যান ফিরে পেতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাণিজ্যিক দোকানের হার বাড়ায় পার্কের সামগ্রিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে। বেড়েছে বখাটেদের উৎপাত। এতে সাধারণ মানুষ ঘুরতে এসে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়ছে।’ এ ব্যাপারে কুসিক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘দোকান স্থাপনে কুসিকের মৌখিক অনুমোদন থাকলেও সেখান থেকে কোন অর্থ আদায় হয় না। ধর্মসাগর পশ্চিম পাড়ে দোকানগুলো হওয়ার পর সাধারণ মানুষ হাঁটা চলায় বিঘœ ঘটেছিল। পরে আমরা এগুলোকে উচ্ছেদ করে দিই। বর্তমানে দোকানগুলো যেভাবে বসেছে, মানুষের হাঁটাচলায় কোন অসুবিধার কথা নয়।’ মানুষের বসার জায়গা দখল এবং বখাটেদের উৎপাতের জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘এগুলো আমরা সীমিত করার চেষ্টা করছি। বখাটেদের উৎপাত রোধে আমরা ব্যবস্থা নেব।’ এ ব্যাপারে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর বলেন, ‘আমি কুমিল্লায় জেলা প্রশাসক হিসেবে এসেছি খুব বেশি দিন হয়নি। উদ্যান বা পার্কে এই ধরনের কোন কর্মকা- ঘটে থাকলে খোঁজ নিয়ে উচ্ছেদের ব্যবস্থা করব।’
×