ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দীর্ঘ বিরতির পর বাপেক্স ছয় রিগ নিয়ে একত্রে কাজে নামছে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৮ এপ্রিল ২০১৮

দীর্ঘ বিরতির পর বাপেক্স ছয় রিগ নিয়ে একত্রে কাজে নামছে

রশিদ মামুন ॥ দীর্ঘ বিরতির পর আবার ছয়টি রিগ নিয়ে একসঙ্গে গ্যাস অনুসন্ধান উত্তোলনে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় তেল গ্যাস উত্তোলন অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্স। তিনটি অনুসন্ধান কূপের পাশাপাশি ৩টি ওয়ার্কওভার কূপ খনন করতে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোম্পানিটি। সরকার একটি রূপকল্প নির্ধারণ করে দিলেও গত দুই বছর সেই রূপকল্প বাস্তবায়নে অনেকটা গাছাড়া ভাব ছিল কোম্পানিটির। তবে সেই অবস্থা কাটিয়ে আবারও ৬টি রিগ নিয়ে এক সঙ্গে কাজে নামছে কোম্পানিটি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ২০১০ থেকে বাপেক্সকে সক্রিয় করে তোলা হয়। নতুন রিগ এবং তৃতীয় মাত্রার ভূকম্পন জরিপের যন্ত্রাংশ কিনে দিয়ে বাপেক্সকে সক্রিয়া করে তোলা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে আবারও ২০১৪ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর বাপেক্স অজানা কারণেই কার্যক্রম বন্ধ রাখে। বাপেক্সকে বসিয়ে রেখে বিদেশী ঠিকাদার দিয়ে তিনগুণ বেশি খরচে কূপ খনন করা হয়। বাপেক্স এর রিগ বসিয়ে রেখে তাদের নিজেদের গ্যাস ক্ষেত্রেও কাজ করতে নামে বিদেশী কোম্পানি। এর মধ্যে কয়েকবার জ¦ালানি সচিব বদলে বাপেক্স তার পরিকল্পনা বদল ছাড়া তেমন কিছু করেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাপেক্সকে দিয়ে কিছুই হবে না, এমন কিছু প্রমাণে জ¦ালানি বিভাগ গত কয়েক বছর সক্রিয় ছিল। এখানে নানাভাবে বাপেক্সকে ব্যর্থ প্রমাণ করার চেষ্টা ছিল। যাতে বহুজাতিক কোম্পানির হাতে দেশের স্থলভাগের গ্যাস ব্লক ইজারা দেয়া সম্ভব হয়। কিন্তু নানামুখী কারণে সরকারের শীর্ষ পর্যায় এই প্রচেষ্টায় সাড়া না দিলে সিন্ডিকেটটি ব্যর্থ হয়। জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার সাবেক এক চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দুঃখজনক এটা সরকার এত দিন পরে অনুধাবন করতে পেরেছে। কিন্তু মাঝে চারটি বছর কেটে গেছে। এই সময়ে বলতে গেলে তেল গ্যাস উত্তোলন-অনুসন্ধানে তেমন কোন কাজই বাপেক্সকে করতে দেয়া হয়নি। এ সময় চালু রিগগুলোও বসিয়ে রাখা হয়। তিনি বলেন, একটি রিগ বসিয়ে রাখলে তা আবার ঠিক করে কাজ শুরু করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়। কেন এভাবে নতুন রিগ বসিয়ে রাখা হলো সে বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। বাপেক্স সূত্র বলছে, একই ভূতাত্ত্বিক গঠনে বাপেক্স এর শ্রিকাইল এবং বহুজাতিক কোম্পানি তাল্লোর বাঙ্গুরা গ্যাস ক্ষেত্র রয়েছে। তাল্লো গ্যাস ক্ষেত্রটিতে নতুন কূপ খনন করতে চাইলে পেট্রোবাংলা এতে অনুমোদন দিতে চায়নি। পরবর্তীতে সরকারের শীর্ষ এক ব্যক্তির চাপে অনুমোদন দেয়ার পাশাপাশি বাপেক্সকে ঠিকাদার নিয়োগ নিয়ে কূপটি খনন করে দেয়া হয়। ওই সময় শীর্ষ ওই ব্যক্তি বাপেক্সে ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান। বলা হয় বিষয়টি আত্মহত্যার মতোই। যেখানে একই ভূগঠন হওয়ায় বাঙ্গুরা থেকে বেশি গ্যাস তোলা হচ্ছিল সেখানে নিজেদের ক্ষেত্র রেখে বিদেশী কোম্পানির ক্ষেত্রে কূপ খনন করতে বাপেক্সকে বাধ্য করা হয়। বাপেক্স সূত্র বলছে, এপ্রিলের শুরুতেই আইডিসিও-১৭০০ রিগটি বেগমগঞ্জে কাজ শুরু করেছে। আগামী ২৭ এপ্রিল বিজয়-১২ রিগ দিয়ে কসবায় কূপ খনন কাজ শুরু করা হবে। ওই দিন বা ২৯ এপ্রিল বিজয়-১০ সালদাতে কূপ খনন শুরু করবে। হবিগঞ্জে বিজয়-১১ আগামী ৭ মে হবিগঞ্জে কাজ শুরু করবে। এ ছাড়া আইপিএস কার্ডিয়েল রিগটি ভালার ১ নম্বর কূপে ওয়ার্ক ওভার শেষ করেছে আর নতুন রিগ জেড জে ৬৫ কৈলাসটিলা গ্যাস ক্ষেত্রে যাচ্ছে একটি কূপের ওয়ার্কওভার করার জন্য। প্রসঙ্গত এর আগে বাপেক্স এর তিনটি কূপ খনন রিগ এবং দুটি ওয়ার্কওভার রিগ ছিল। নতুন করে এই বহরে জেড জে ৬৫ নামে আরও একটি রিগ যুক্ত হয়েছে। বাপেক্স এর নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম রুহুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বাপেক্স এর সবগুলো রিগ এক সঙ্গে কাজ করছে। আবার বাপেক্স কর্মমুখর হয়ে উঠছে বলে জানান তিনি। তিনি কসবায় ২৭ এপ্রিল কূপ খনন শুরু করার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অন্যগুলোতেও সম্ভাব্য তারিখ ঠিক করা হয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ে সব কাজ শুরু করা যাবে। যদিও পরিসংখ্যান দিয়ে বলা হয় বাপেক্স গত কয়েক বছরে বেশ সফল। গঠনের পর ১৯৯০ থেকে বাপেক্স সত্যিকার অর্থে কাজ শুরু করে। সেখানে ২০১১ পর্যন্ত ২১ বছরে বাপেক্স ৯টি কূপ খনন করে। আর ২০১১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ছয় বছরে ৯টি কূপ খনন করে। যদিও এর মধ্যে ভোলা, শ্রিকাইলে বহুজাতিক কোম্পানিকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে কূপ খনন করা হয়। পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর এ সঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, এটা খুব ভাল উদ্যোগ বাপেক্সের কাজ শুরু করা উচিত। তিনি বলেন, বাপেক্স ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছে তারা কাজ করতে পারে। বাপেক্স বারবার পরীক্ষা দেয়ার পরও তাদের বসিয়ে রাখার কোন মানে নেই।
×