ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নেতৃত্ব নির্বাচনে সাবধান- জাবি ছাত্রলীগের নেত্রী এখন তারেকের আস্থাভাজন

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৮ এপ্রিল ২০১৮

নেতৃত্ব নির্বাচনে সাবধান- জাবি ছাত্রলীগের নেত্রী এখন তারেকের আস্থাভাজন

বিভাষ বাড়ৈ ॥ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারীদের তৎপরতা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই শোরগোল ফেলে দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মাহবুবা নাজরিন জেবিন। কোন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রথম এ নারী সভাপতিই আজ লন্ডনে বিএনপির শীর্ষনেতা তারেক রহমানের সবচেয়ে আস্থাভাজন! স্বামী ছাত্রদলের জাহাঙ্গীরনগর শাখার সাবেক সভাপতি। লন্ডনে তারেক রহমানের পরিবারের দেখভাল থেকে শুরু করে অধিকাংশ অনুষ্ঠানে তার তৎপরতার দৃশ্য আলোচনার ঝড় তুলেছে সর্বত্র। ছাত্রলীগের সম্মেলনের ঠিক আগমুহূর্তে প্রগতিশীল এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাই নেতৃত্ব নির্বাচনে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রগতিশীল এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বলছেন, লন্ডনের চিত্র আমাদের আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে সঠিক যাচাই-বাছাই ছাড়া কোন পারিবারিক তথ্য না নিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করলে তা ক্ষতির কারণ হবে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি শাখায় এবার নেতৃত্ব নির্বাচনে পারিবারিক ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি তার আস্থা ও কর্মকা-, মেধাসহ অন্যান্য বিষয় নিরপেক্ষভাবে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। বলেছেন, এবারও দল ও আদর্শের কথা চিন্তা না করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কমিটি গঠন হলে ছাত্রলীগে ছাত্রদল, শিবিরের অনুপ্রবেশ ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। তারেক রহমানের আস্থাভাজন হবে এমন চিত্র আর দেখতে চান না ত্যাগী নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগের বর্তমান সহ-সভাপতি ও যিনি আসন্ন কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতৃত্ব দাবিদারদের অন্যতম চৈতালী হালদার চৈতী। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতির বিষয়টিকে একটি উদ্বেগজনক নমুনা হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ওই ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে অনেক ভুল হচ্ছে। শুধু এই ঘটনাই নয়, আমাদের কেন্দ্রীয় সভাপতিও হঠাৎ করে বিএনপির বড় নেতার পদে দেখা গেছে এমন নজিরও আমরা দেখি। আমাদের দাবি হবে ছাত্রলীগ এমন একটা সংগঠন যেটা নিয়ে মানুষ গর্ব করে। এর নেতৃত্ব নির্বাচনে অবশ্যই তার পরিবারিক ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি তার আস্থা ও কর্মকা-, সৎ, মেধাবীসহ অন্যান্য বিষয় নিরপেক্ষভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। এসব বিষয় ভালভাবে নিরপেক্ষভাবে কোনরকম প্রভাবিত না হয়ে দলের স্বার্থে খুঁজে বের করতে হবে। প্রয়োজনে ইন্টারভিউ নিতে হবে। অন্যথায় ক্ষতি হবে আমাদের, ক্ষতি হবে আওয়ামী লীগের, ক্ষতি হবে দেশের। মাহবুবা নাজরিন জেবিন ছিলেন ছাত্রলীগের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি। তিনিই এখন তারেক রহমানের অন্যতম আস্থাভাজন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ২৬ ব্যাচের ছাত্রী ছিলেন। ফজিলাতুন্নেসা হলে থাকা জেবিনকে ২০০২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সভাপতি করে ছাত্রলীগ। সে সময় কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন লিয়াকত শিকদার এবং সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু। কোন বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির প্রথম নারী সভাপতি হিসেবে জেবিন তখন বেশ নজর কাড়তেও সক্ষম হয়েছিলেন। সে সময় ক্ষমতাসীন ছাত্রদলের জাহাঙ্গীরনগর শাখার সভাপতি ছিলেন পারভেজ মল্লিক। তিনিই হচ্ছেন জেবিনের স্বামী। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। জেবিন এখন তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানের দেখাশোনা করেন। তিনি জাইমা রহমানের গাড়ি চালান এবং তাকে দেখাশোনাও করেন। সম্প্রতি তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানকে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অফ-হোয়াইট শাড়ি পরে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন, এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তারেক রহমান ও তার স্ত্রীকে লন্ডনে ভরা মজলিসে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর সামনে ফুলের তোড়া দিয়ে আলোচনায় এসেছেন জেবিন। খালেদা জিয়াকে প্রশংসা করে রচিত একটি গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন এক সময়ের ছাত্রলীগের একটি শাখার সভাপতি জেবিন। ২০০২ সালে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও এর আগে জেবিনের কোন রাজনৈতিক পরিচয়ই ছিল না বলে জানিয়েছেন সে সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা। তারা বলছেন, জেবিনের মুভমেন্ট এবং আচরণ দেখে সবসময়ই আমার মনে হতো সে পারভেজ মল্লিকের (ছাত্রদল সভাপতি) এজেন্ট হিসেবে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী। এখন জেবিন সার্ভিস দিচ্ছে বিএনপিকে। জেবিনের কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন সিরাজী এবং তার অনুসারীদের ক্যাম্পাসে আসতে দিতেন না জেবিন। তার সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিলেন তার প্রেমিক ছাত্রদল নেতা। সে সময়ের অত্যাচারিত ছাত্রলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সিরাজী এখন তবলীগ জামাতে নাম লিখিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যালামনাই বা অন্য কোন সংগঠনের সঙ্গে তার এখন আর যোগাযোগ নেই। একটা ফোন নম্বর পাওয়া গেলেও সেই নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, জনপ্রিয় তরুণ লেখিকা শাশ্বতি বিপ্লব ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তারেক জিয়া নাকি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হইসেন, খুবই সুখবর!! ...এখানে অক্সফোর্ড বা তারেক জিয়া না, ফোকাস হইল ছাত্রলীগ। খাড়ান, বলতেছি। ...এই আনন্দযজ্ঞে বিএনপির যে গর্বিত নারীনেত্রীকে দেখতে পাইতেছেন, ওই যে অফ হোয়াইট শাড়ি গায়ে, জি, জি তিনিই, তিনি হইলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের প্রাক্তন সভাপতি। ভাল না? ’
×