ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী মাসে শুরু হচ্ছে মূল ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ কাজ

পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, ২৬৬ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি সই

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৮ এপ্রিল ২০১৮

পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, ২৬৬ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি সই

মশিউর রহমান খান ॥ দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মে মাসেই শুরু হচ্ছে পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ স্থাপনের মূল ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। রেল কর্তৃপক্ষের ভূমি অধিগ্রহণ, মাটি পরীক্ষা, সংযোগ সড়ক স্থাপন, বিদেশী পরামর্শক কর্তৃক নিয়মিত পর্যবেক্ষণসহ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সেতু নির্মাণের প্রাথমিক প্রায় সব কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। বৈদেশিক অর্থায়ন নিশ্চিত হওয়ার পর সেতুটির নির্মাণকাজ আরও দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার চীনে বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টায় এ প্রকল্পের আওতায় ২ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন বা ২শ’ ৬৬ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা প্রায় ২১ হাজার ৮শ’ ১২ কোটি টাকা। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব (এশিয়া উইং) জাহিদুল হক এবং চীনা এক্সিম ব্যাংকের পক্ষে সংস্থাটির ভাইস প্রেসিডেন্ট চান পিং চুক্তিতে সই করেন। চুক্তি অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব জাহিদুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ প্রকল্পের পরিচালক ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। ২০১৬ সালের ৩ মে পদ্মা সেতু হয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে নতুন রেলওয়ে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয় একনেক সভায়। তবে জমি অধিগ্রহণের কারণে প্রকল্পের ব্যয় আরও ৪ হাজার ২শ’ ৬৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। কয়েক দফায় বেড়ে প্রকল্পের মোট ব্যয় গিয়ে দাঁড়াবে ৩৯ হাজার ৯শ’ ৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। প্রকল্পে মোট ব্যয়ের সরকারী অর্থায়ন ১৮ হাজার ২শ’ ২১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আর চীনের এক্সিম ব্যাংক ২১ হাজার ৮শ’ ১২ কোটি টাকা অর্থায়ন করতে সম্মত হয়েছে। তবে প্রকল্পে চীনা ঋণ সহায়তা কমলেও সরকারী অর্থায়ন বেড়েছে। রেল সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর ওপর সম্পূর্ণ আলাদা রেলপথ হবে। যার দৈর্ঘ্য হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। পদ্মায় রেলসেতু নির্মাণের মাধ্যমেই দক্ষিণাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের আশা পূরণে সরকারও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে দক্ষিণবঙ্গের যশোর পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারিত হচ্ছে। আর এ জন্য ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত মোট ১শ’ ৬৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে। রেল সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারিতে চীন সরকার কর্তৃক প্রকল্পে অর্থায়ন নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে পদ্মা সেতুতে দ্রুততার সঙ্গে রেলসংযোগ স্থাপনের কাজ শুরু করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। চীন সরকারের অর্থ ছাড়ের সর্বশেষ কাজ হিসেবে শুক্রবার বাংলাদেশ ও চীনের মাঝে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মাধ্যমে পুরোদমে সেতুতে রেলসংযোগের কাজের অর্থায়ন চিন্তামুক্ত হলো। ফলে পদ্মায় রেলসংযোগ স্থাপনে আর কোন প্রকার বাধাই রইলো না। এর আগে গত বছরের ৮ আগস্ট চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের সঙ্গে ২৭ হাজার ৬শ’ ৫২ কোটি টাকার কমার্শিয়াল চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। এরপর চীন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ঋণ নেগোসিয়েশন সম্পন্ন হয়। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ভেটিং সম্পন্ন ও হার্ডটার্ম লোন কমিটি কর্তৃক সুপারিশ করা হয়। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ঠিকাদার কর্তৃক মাওয়া ভাঙ্গা অংশের এলাইনমেন্ট ও টপোগ্রাফিক্যাল সার্ভে কাজ শেষ হয়েছে। একইসঙ্গে এই এলাকার মাটি পরীক্ষা তথা সয়েল ইনভেস্টিগেশন কাজ শেষ করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ও ফরিদপুর জেলার ৫শ’ ৮২ দশমিক ৬১ একর ভূমি হস্তান্তর করা হয়েছে বাকি জমি হস্তান্তর কাজ চলমান রয়েছে বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া সড়ক ও জনপথ, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ভূমি হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানীর গে-ারিয়া রেলস্টেশন থেকে নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন পর্যন্ত লাইনের দু’পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে ঢাকার গে-ারিয়া থেকে খুলনার দূরত্ব কমবে ২শ ১২ কিলোমিটার এবং ঢাকা থেকে খুলনা যেতে মাত্র তিন ঘণ্টা সময় লাগবে। ২০১৬ সালের ৩ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন করা হয় পদ্মা রেল সেতুর সংযোগ প্রকল্পটি। এতে ব্যয় ধরা হয় ৩৪ হাজার ৯শ’ ৮৮ কোটি টাকা। প্রকল্প গ্রহণের শুরুতে পুরো টাকা চীনের এক্সিম ব্যাংক দেয়ার কথা থাকলেও পরবর্তী সময়ে ২৭ হাজার ৬শ ৫২ কোটি টাকা ঋণ দিতে সম্মত হয়। রেল সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১শ’ ২০ কিলোমিটার গতিতে চলবে ট্রেন। আর ঢাকা থেকে যশোর যেতে সময় লাগবে মাত্র আড়াই ঘণ্টা। বর্তমানের চেয়ে দূরত্ব কমবে কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার পথ। মূলত এ লক্ষ্য দ্রুত বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বেশ জোরেশোরে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেল মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে রেলওয়ের আওতায় আনার জন্য পদ্মায় রেলসংযোগ স্থাপনের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশে পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ প্রকল্প-১ (ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-৮২.৩১ কি.মি.) এবং প্রকল্প-২ (ভাঙ্গা-নড়াইল-যশোর-৮৪.০১ কি.মি.) ২টি প্রকল্প গ্রহণ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেললাইনে মোট ৮২.৩২ কিলোমিটার রেললাইন ও ২৭ কিলোমিটার লুপ লাইন ছাড়াও এ সেকশনে ১শ ২৫টি ছোট বড় রেলসেতু নির্মাণ করতে হবে। বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীতে নৌচলাচলের জন্য পর্যাপ্ত ক্লিয়ারেন্সের জন্য গে-ারিয়ার পর ১৬ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড রেলপথ এবং ২ দশমিক ২ কিলোমিটার র‌্যাম্প নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও পদ্মার দু’পার মিলিয়ে মোট ২৩ দশমিক ৩শ ৬৮ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ করা হবে। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নে রেলপথ ও সড়ক পথকে আলাদা করতে ৪০টি আন্ডারপাস সেতু ও তিনটি ওভারপাস নির্মাণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকার গে-ারিয়া অংশে পাঁচটি লেভেল ক্রসিংয়ে গেট বসানো হবে। রেল সূত্র জানায়, নতুন এ রেলপথটি নির্মাণ হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক-চতুর্থাংশ জনগোষ্ঠী ও দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিপুল অবদান রাখবে। এছাড়া রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াত ও বাণিজ্য সুবিধা বর্তমানের চেয়ে কয়েকগুণ বাড়বে। রেল সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুতে ট্রেনলাইন চালু করতে আলাদা রেল সেতু তৈরি করা হবে। সেতুর ২ প্রান্তের সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন করতে হলে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এতে ঢাকা বিভাগের ৬ জেলায় বিদ্যমান দুটি স্টেশন ছাড়াও নতুন ৬টি রেলস্টেশন স্থাপন করা হবে। এগুলো হলো- কেরানীগঞ্জ, নিমতলা, শ্রীনগর, মাওয়া, জাজিরা ও শিবচর। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, সিরাজদিখান, শ্রীনগর, লৌহজং, জাজিরা, শিবচর ও ভাঙ্গা উপজেলার প্রায় ৮৭টি মৌজার ওপর দিয়ে এই রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে। রেলপথটি নির্মাণে মোট ৩শ ৬৫ দশমিক ১০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হচ্ছে। এর মধ্যে ২শ ৭৩ হেক্টর ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং ৯২ হেক্টর সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ)। প্রকল্পের আওতায় বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যাসহ ৪টি বড় ও ৫৬টি ছোট রেল সেতু নির্মাণ করতে হবে। ৫টি রেলক্রসিংসহ ৪০টি পয়েন্টে আন্ডারপাসসহ জাতীয় মহাসড়কে ৩টি ফ্লাইওভার থাকবে। জানা গেছে, এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে চীনের সিআরইসি (চায়না রেলওয়ে গ্রুপ) কোম্পানি। প্রাথমিকভাবে পদ্মা নদীর ওপর সড়ক সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করে সরকার। এ লক্ষ্যে ২০০৭ সালের ২০ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) এ সংক্রান্ত প্রকল্প অনুমোদন করে তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পদ্মা সেতুতে রেলপথ যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি পদ্মা সেতুর সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী, সড়ক ও রেলপথ বিশিষ্ট দ্বিতল সেতু নির্মাণের নক্সা চূড়ান্ত করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ে মাস্টার প্ল্যানে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে রেলওয়ের আওতায় আনার লক্ষ্যে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও চীন দু’দেশের মধ্যে জি টু জি পদ্ধতিতে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে। চীন সরকার তাদের দেশের চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি দ্বারা কাজ করবে। গে-ারিয়া থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রকল্পের ফেজ-১-এর আওতায় ৮৬ দশমিক ৩২ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হবে। দ্বিতীয় ফেজে ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত লাইন নির্মাণ হবে ৯৬ কিলোমিটার। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি এ প্রকল্পের সুপারভিশন পরামর্শক হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স এবং বুয়েটের বিআরটিসি সমন্বয়ে গঠিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, পদ্মা নদীতে রেলসংযোগ নির্মাণের লক্ষ্যে সরকার অতি দ্রুততার সঙ্গে কাজ চলমান রেখেছে। এ বৈদেশিক অর্থায়ন সংশ্লিষ্ট সকল কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়ে গেছে। বাকি কিছু কাজ শেষে মে মাসের শেষের দিকে মূল ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। এর আগে প্রাথমিক কাজ হিসেবে ঠিকাদার কর্তৃক মাওয়া ভাঙ্গা অংশের এলাইনমেন্ট ও টপোগ্রাফিক্যাল সার্ভে কাজ, মাটি পরীক্ষা তথা সয়েল ইনভেস্টিগেশন কাজ শেষ করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ও ফরিদপুর জেলার ৫শ ৮২ দশমিক ৬১ একর ভূমি হস্তান্তর করা হয়েছে বাকি জমি হস্তান্তর কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া সড়ক ও জনপথ ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ভূমি হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। একইসঙ্গে রাজধানীর গে-ারিয়া রেলস্টেশন থেকে নারায়ণঞ্জ রেলস্টেশন পর্যন্ত লাইনের দু’পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এর আগে গত বছরের ৮ আগস্ট চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের সঙ্গে ২৭ হাজার ৬শ ৫২ কোটি টাকার কমার্শিয়াল চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। এরপর চীন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ঋণ নেগোসিয়েশন সম্পন্ন হয়। মহাপরিচালক বলেন, পদ্মায় প্রায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার রেল সেতু নির্মাণের মাধ্যমেই দক্ষিণাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের আশা পূরণে সরকারও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে দক্ষিণবঙ্গের যশোর পর্যন্ত মোট ১শ’ ৬৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে। প্রথমে কিছুটা অর্থসঙ্কট থাকলেও চীন সরকারের অর্থ ছাড়ের সর্বশেষ কাজ হিসেবে ২৭ এপ্রিল শুক্রবার বাংলাদেশ ও চীনের মাঝে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আমজাদ হোসেন বলেন, ২০১৬ সালের ৩ মে পদ্মা সেতু হয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে নতুন রেলওয়ে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয় একনেক সভায়। তবে জমি অধিগ্রহণের কারণে প্রকল্পের ব্যয় আরও ৪ হাজার ২শ ৬৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। কয়েক দফায় বেড়ে প্রকল্পের মোট ব্যয় গিয়ে দাঁড়াবে ৩৯ হাজার ৯শ’ ৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। প্রকল্পে মোট ব্যয়ের সরকারী অর্থায়ন ১৮ হাজার ২শ’ ২১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আর চীনের এক্সিম ব্যাংক ২১ হাজার ৮শ’ ১২ কোটি টাকা অর্থায়ন করতে সম্মত হয়েছে। তবে প্রকল্পে চীনা ঋণ সহায়তা কমলেও সরকারী অর্থায়ন বেড়েছে। মূল রেল সেতুর নির্মাণকাজ অতিদ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সেতুটি নির্মাণের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের দীর্ঘ বছরের আশা পূর্ণ হবে।
×