ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের দেখতে আজ আসছে উচ্চ পর্যায়ের জাতিসংঘ দল

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২৮ এপ্রিল ২০১৮

রোহিঙ্গাদের দেখতে আজ আসছে উচ্চ পর্যায়ের জাতিসংঘ দল

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে আগামীকাল শনিবার বাংলাদেশ সফরে আসছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলটি প্রথমে বাংলাদেশ সফর করবেন। এরপর বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার যাবেন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল শনিবার কক্সবাজার পৌঁছাবে। সেখানে তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। রবিবার বিকেলে ঢাকায় ফিরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। সোমবারই তারা মিয়ানমারের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। মিয়ানমারে দুই দিন অবস্থান করবেন তারা। সূত্র জানায়, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্তে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী ১৫ সদস্য রাষ্ট্রই একমত হয়েছে। যদিও নিরাপত্তা পরিষদের প্রভাবশালী দেশ চীন ও রাশিয়া তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য মিয়ানমারকে সমর্থন করে আসছে। তবে এই প্রতিনিধি দলে এবার চীন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিও থাকছেন। নিরাপত্তা পরিষদে একাধিকবার রোহিঙ্গা সঙ্কট ও রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারও নিজ নিজ পক্ষের বক্তব্য দিয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রায় সব সদস্যের মনোভাব একই রকম। তবে ভেটো ক্ষমতার অধিকারী এমন দুই একটি দেশের কারণে শক্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ জাতিসংঘকে অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা যে কোন সময় আসতে চাইলে বাংলাদেশ তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। বাংলাদেশ চায় উভয় দেশ সফর করে নিরাপত্তা পরিষদই পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করুক। নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলকে মিয়ানমারে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল মিয়ানমার। প্রতিনিধি দলকে প্রথমে রাখাইন এলাকা পরিদর্শনের অনুমতি দিতে চায়নি মিয়ানমার। তবে মিয়ানমার চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত তাদের রাখাইনে যেতে দিতে রাজি হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি ও জাতিসংঘে নিযুক্ত পেরুর স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত গুস্তাভো মেজা সুআদ্রা পরিষদের সদস্যদের রাখাইন ও কক্সবাজার সফরের বিষয়ে জানিয়েছেন, জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলের সফরে রাখাইনের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিষয়টিই তাদের মূল ফোকাস। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি গুস্তাভো মেজা সুআদ্রা আরও বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহীদের দমনের নামে মিয়ানমারের সেনারা বর্বর কায়দায় যে অভিযান চালিয়েছে তা থেকে প্রাণে বাঁচতে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে পাশের বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে এখনও কিছু রোহিঙ্গা রয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি বলেন, রাখাইনের বাস্তব পরিস্থিতি দেখার চেয়ে তাদের সফরে ভাল কিছু আর হতে পারে না। রাখাইনের ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে কথিত রোহিঙ্গা জঙ্গীদের হামলার পর ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক অভিযান শুরু করে। ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ। সেনাবাহিনীর ওই অভিযানের পর থেকে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমার সফরের কথা থাকলেও এতদিন দেশটির সরকার অনুমোদন দিচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত মিয়ানমার সরকার অনুমতি দিয়েছে। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরের আয়োজন করছে যুক্তরাজ্য, কুয়েত ও পেরু।
×