ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিজেপির বিরুদ্ধে সমালোচনা করলেই ছাঁটাই!

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২৮ এপ্রিল ২০১৮

বিজেপির বিরুদ্ধে সমালোচনা করলেই ছাঁটাই!

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রশাসন ও তার দলের সমালোচনা করে খবর প্রকাশ করলে ভয়ভীতি দেখানো ও চাকরিচ্যুত হওয়ার অভিযোগ করেছেন দেশটির কয়েকজন সাংবাদিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাংবাদিকদের বরাত দিয়ে একটি বিদেশী বার্তা সংস্থা জানায়, মোদি সরকার বা তার দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরুদ্ধে খবর প্রকাশ করে গত ছয় মাসে দেশটির প্রভাবশালী কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের অন্তত তিনজন সিনিয়র সম্পাদক চাকরি হারিয়েছেন।- ওয়েবসাইট তাদের একজন ভারতের জনপ্রিয় দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমস এর সাবেক সম্পাদক ববি ঘোষ। গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী মোদি হিন্দুস্তান টাইমস এর মালিকের সঙ্গে দেখা করার পরপরই পত্রিকাটির সম্পাদক ববি চাকরি ছাড়েন। ববির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অন্তত দুইজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রয়টার্সকে বলেন, ববির সম্পাদকীয় নীতি নিয়ে মোদি অসন্তুষ্ট ছিলেন। ববি হেট ট্রাকার নামে একটি ওয়েবপেজ উদ্বোধন করেছিলেন। যেখানে ধর্মীয়, সাম্প্রদায়িক, লিঙ্গ ও যৌন সহিংসতার ঘটনাগুলোর তথ্য নিয়মিত প্রকাশ করা হতো। অক্টোবরে ওই ওয়েবপেজটি বন্ধ করে দেয়া হয়। বিদেশী বার্তা সংস্থা থেকে যোগাযোগ করা হলে ববি তার চাকরি ছাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে অস্বীকৃতি জানান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং হিন্দুস্তান টাইমস কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। কয়েকজন সংবাদ প্রতিবেদক এবং উপস্থাপক রয়টার্সকে মোদি প্রশাসনের দ্বারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেনেস্তা এবং শারীরিক ক্ষতি করার হুমকি পেয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন। অথচ ভারতের সংবিধানে বাকস্বাধীনতার অধিকার সুনিশ্চিত করা আছে। গত বুধবার ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স প্রকাশ করা হয়। তালিকায় গত বছরের তুলনায় দুই ধাপ পিছিয়ে ১৮০ দেশের মধ্যে এখন ভারতের অবস্থান ১৩৮। এমনকী জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তান এবং মিয়ানমারের মতো দেশের থেকেও ভারত তালিকায় পিছিয়ে। অথচ ২০০২ সালে যখন এই তালিকাটি প্রকাশ শুরু হয় তখন ভারত ৮০ নম্বরে ছিল। প্যারিসভিত্তিক সংগঠন রিপোর্টাস উইদাউট বর্ডারসের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে দেশের ভেতর এর বিরোধী সব মত নিয়ে আলোচনা বন্ধ করে ফেলার চেষ্টা চলছে। মূলধারার সংবাদমাধ্যমে স্ব-আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বাড়ছে। সেই সঙ্গে অনলাইনে সাংবাদিকদের হেনস্তার পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চরম জাতীয়তাবাদীরাই এগুলো করছে। তারা সাংবাদিকদের গালিগালাজ, এমনকী মারধরের ভয়ভীতিও দেখাচ্ছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বার্তা ট্রল আকারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে বলেও জানায় গ্রুপটি। সাংবাদিকদের এ অভিযোগ নিয়ে মোদি প্রশাসনের কোন মুখপাত্র মন্তব্য করতে রাজি হননি বলে জানায় রিপোর্টাস উইদাউট বর্ডারস। তবে সব সাংবাদিক এ অভিযোগের সঙ্গে একমত নন। মোদির সমর্থক ভারতের পার্লামেন্ট সদস্য এবং রাজনীতি বিষয়ক কলামিস্ট স্বপন দাসগুপ্ত মনে করেন, তালিকার মাধ্যমে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সঠিক মাত্রা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমার মনে হয় না গত কয়েক বছরে ভারতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হ্রাস পেয়েছে।
×