ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বাস্থ্যসেবায়-

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২৮ এপ্রিল ২০১৮

স্বাস্থ্যসেবায়-

জনস্বাস্থ্যসেবায় দেশে-বিদেশে অনন্য নজির রয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকের। বিশ্বব্যাংকও এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতী ইউনিয়নের গিয়াসালা কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মাধ্যমে এর শুভ সূচনা করা হয়। সেই থেকে দিনটি পালিত হয়ে আসছে কমিউনিটি ক্লিনিক দিবস হিসেবে। বর্তমানে সারাদেশে ১৩ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবা বিশেষ করে নারী ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা এবং টিকাদান কর্মসূচীতে অবশ্য সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। বিশ্বের অনেক দেশ এর কার্যক্রম রোল মডেল বিবেচনায় চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে নিজ দেশে। সরকারের অনেক সাফল্যের অন্যতম একটি দেশব্যাপী কমিউনিটি ক্লিনিক। সম্প্রতি এটি পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, বিশেষ করে বিশ্বব্যাংকের মতো বহুজাতিক দাতা সংস্থার। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সার্বিক স্বাস্থ্য খাতের উন্নতিতে ‘অসাধারণ ভূমিকা’ রাখছে কমিউনিটি ক্লিনিক। স্বাস্থ্য খাতে অভাবনীয় উন্নতির উল্লেখ করে সংস্থাটি বলেছে, এটি সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছে। এর ফলে নবজাতক ও শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু, প্রজনন হার নিয়ন্ত্রণসহ ১০টি সূচকে সন্তোষজনক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা এবং পুুষ্টি সেক্টরের উন্নয়ন কর্মসূচীর সুবাদে সম্ভব হয়েছে এই অগ্রগতি। এর আওতায় ২০১৪ সাল থেকে দেশে ১৩ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। এর ফলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীর সেবা নেয়ার হার ২১ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশে। হামের টিকা গ্রহণের প্রবণতা দাঁড়িয়েছে ৮৬ শতাংশে। ইপিআই কর্মসূচীর মৌলিক টিকা গ্রহণের হার বর্তমানে ৮৮ শতাংশ। এসব সূচকের অগ্রগতির কারণে দেশের মানুষের গড় আয়ুও বেড়েছে অনেক, প্রায় ৭১ বছরের কাছাকাছি। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) আওতায় ৫ বছরের কমবয়সী শিশুমৃত্যুর হার কমানোর জন্য সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ ২০১০ সালে জাতিসংঘের এমডিজি এ্যাওয়ার্ড অর্জনে সক্ষম হয়, যা বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করে তোলে। শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্তকরণের প্রাথমিক কাজটি ন্যস্ত হতে পারে এদের হাতে। বিশ্বব্যাংকের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দারিদ্র্য, চিকিৎসা উপকরণের অভাব, বিভিন্ন রোগের প্রকৃতির পরিবর্তন ইত্যাদিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। নারী ও শিশুর অপুষ্টির কথাও বলা হয়েছে। তদুপরি নগরায়ণসহ জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্বাস্থ্য সেবার চাহিদাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। মোট দেশজ আয়ের তুলনায় (জিডিপি) পর্যাপ্ত রাজস্ব আহরণ না হওয়ায় সরকারের একার পক্ষে চাহিদা পূরণ করাও কঠিন। ফলে অনেকেই সরকারের সরবরাহের বাইরে স্বাস্থ্যসেবা নিতে বাধ্য হচ্ছে। এর ফলে অনেক দরিদ্র মানুষ আরও গরিব হচ্ছে। তবে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবা আরও সম্প্রসারণসহ প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে দেয়া গেলে অচিরেই এর সুফল পাবে সাধারণ মানুষ। এই সমস্যা মোকাবেলায় দাতাদের অর্থছাড়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সরকারী তহবিলের অর্থছাড়ের সমন্বয় সাধন করতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত ও গতিশীল রাখতে হলে কমিউনিটি ক্লিনিকসহ স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে হবে তৃণমূল পর্যায়ে। সে অবস্থায় যক্ষ্মা ও অন্যান্য রোগীর সংখ্যাও কমে আসবে ক্রমশ।
×