ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কালবৈশাখী ও বজ্রপাত

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২৮ এপ্রিল ২০১৮

কালবৈশাখী ও বজ্রপাত

অকালে কালবৈশাখীর কবলে পড়ছে রাজধানীসহ দেশের অনেক এলাকা। এ সময়ে বজ্রপাত হচ্ছে। আগের বছরের তুলনায় এবার বজ্রপাত অনেকটা বেড়েছে। অবশ্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটা বেশি করে হচ্ছে। তাই জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনটা হচ্ছে কিনা। বিশেষজ্ঞরাই ভাল বলতে পারবেন। আশা করা যায় তারা এ নিয়ে যথাশীঘ্র কথা বলবেন। বুধবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭৪ থেকে ৭৮ কিমি বেগে প্রচণ্ড কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। এ সময় ধূলিঝড়, বজ্রপাত এবং কোথাও মুষলধারে বৃষ্টিপাতের খবরও পাওয়া গেছে। সন্ধ্যায় ধূলিঝড়ে আক্রান্ত হয়ে পড়ে গোটা রাজধানী। শোঁ শোঁ শব্দে প্রচণ্ডবেগে ধাবিত হতে থাকে কালবৈশাখী। সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত এবং কালবৈশাখীর তান্ডব শুরু হয়। এতে বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা উপড়ে পড়ে। কোন কোন এলাকা বিদ্যুতবিহীন হওয়ায় ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়। প্রতিবছর সারাবিশ্বে বজ্রপাতের কারণে গড়ে ২৪ হাজার লোক মৃত্যুবরণ করে এবং আহত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার। ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত উন্নত বিশ্বে (যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া) বজ্রপাত ছিল একটি ভয়াবহ দুর্যোগ, কিন্তু বিংশ শতাব্দী থেকে বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে মূলত নগর জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং কৃষিজ জনসংখ্যার হ্রাসের কারণে। বিশ্বে মোট বজ্রপাতের ৭৮ শতাংশ সংঘটিত হয় ক্রান্তীয় অঞ্চলে। দক্ষিণ এশিয়া, তথা বাংলাদেশ যেহেতু ক্রান্তীয় অঞ্চলের খুব কাছাকাছি অবস্থিত, প্রাক্-মৌসুম (মার্চ-জুন) থেকে শুরু করে মৌসুমি (জুলাই-অক্টোবর) সময় পর্যন্ত বজ্রপাতসহ বজ্রঝড় একটা নিয়মিত বিষয়। যদিও প্রতিবছর বজ্রঝড়, কালবৈশাখী, টর্নেডোতে প্রাণহানিসহ ফসলাদির ক্ষতি কিছু না কিছু হয়েই থাকে, বজ্রপাতে নিহত বা আহত ব্যক্তিদের কোন পরিসংখ্যান বা ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ এখন পর্যন্ত বিশদ সংরক্ষিত হয়নি। বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করার পরিকল্পনা অবশ্যই নিতে হবে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে আগে তালগাছ বা খেজুর গাছ বজ্রপাত থেকে মানুষকে রক্ষা করত। এখন গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এবং শহরাঞ্চলে গাছের ডালপালা ছেটে ফেলায় বজ্রপাতের ক্ষতির ঝুঁকি বেড়ে গেছে। তাই মোবাইল ফোনের টাওয়ার ছাড়াও যেসব টাওয়ার বেশ উঁচু, সেগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে আর্থিংয়ের মাধ্যমে বজ্রপাত থেকে মানুষ রক্ষা পেতে পারে। বজ্রবৃষ্টিতে মেঘ তৈরি হয়, সে মেঘ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তৈরি হয়ে। আধা ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা, ঝড়-বৃষ্টি দিয়ে বজ্রপাত দিয়ে ২/১ ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। এভাবে কোন কালো মেঘ আকাশে দেখা দিলে বা বিদ্যুত চমকালে বা বজ্রপাতের গর্জন শোনা গেলে খোলা জায়গায় থাকা অনুচিত। একটা ভবনের ভেতরে চলে যেতে হবে। তবে টিনের চালা বা ছাউনির নিচে যাওয়া যাবে না। ঘরের ভিতরে অনেকে মনে করেন অবস্থান করলে জীবন বেঁচে যাবে, আসলে তা সঠিক নয়। বাস্তবে বজ্রপাতে এক-তৃতীয়াংশ লোক ঘরের ভিতরেই আঘাতপ্রাপ্ত হয়। বজ্রপাতের সময় খোলা জানালার পাশে যাওয়া বা ঘরের বারান্দায় যাওয়া ঠিক হবে না। এ সময় কোন ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতির প্লাগ খুলতে যাওয়া বা স্পর্শ করাও উচিত হবে না। বলাবাহুল্য, ভবনের ক্ষেত্রে আমাদের উচিত অবশ্যই বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপন করা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেশব্যাপী বজ্রপাত থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা অচিরেই গ্রহণ করবেন- এটাই প্রত্যাশা।
×