ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাবিহা রহমান

গরমের ফ্যাশন টি-শার্টে

প্রকাশিত: ০৭:৪৭, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

গরমের ফ্যাশন টি-শার্টে

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২০ সালে লেখক এফ স্কট ফিজারল্ড তার লেখা উপন্যাস দিস সাইড অব প্যারাডাইসে ‘টি-শার্ট’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর টি-শার্ট হাইস্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের পোশাক হিসেবে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে জামার নিচে ও জামা ছাড়া শুধু টি-শার্ট পরার উভয় সুবিধার কারণে এখন সারা বিশ্বে টি-শার্ট এক অন্যতম জনপ্রিয় পোশাক। ছেলেমেয়ে উভয়ই এখন টি-শার্ট পরে। যেভাবে এলো টি-শার্ট টি-শার্টের উৎপত্তি ১৯১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর সদস্যদের জন্য প্রথম টি-শার্ট নামক পোশাকের ডিজাইন করা হয়। এভাবেই জন্ম হয় বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় পোশাকের। আকারটা ইংরেজী টি অক্ষরের মতো হওয়ায় নাম হয়েছিল টি-শার্ট। ১৯২০ সালে অভিধানে স্থান পায় টি-শার্ট শব্দটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত টি-শার্ট ছিল শুধু মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য তৈরিকৃত পোশাক। ১৯৫১ সালে অস্কারজয়ী হলিউডি সিনেমা ‘এ স্ট্রিট কার নেমড ডিসায়ার’-এ মারলন ব্র্যান্ডো প্রথম টি-শার্ট গায়ে অভিনয় করেন। এর বছর চারেক পর সে সময়ের আমেরিকার আরেক জনপ্রিয় নায়ক জেমস ডিনকেও টি-শার্ট গায়ে সিনেমায় দেখা গেল। এরপর রক এ্যান্ড রোল উন্মাদনা আর ষাটের দশকের হিপ্পি আন্দোলন কত কিছুই হয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে। সঙ্গে বাড়তে থাকল টি-শার্টের জনপ্রিয়তা। তারুণ্যের উন্মাদনা টি-শার্টকে ছড়িয়ে নিয়ে গেল বিশ্বের নানা প্রান্তে। এ পোশাক আর যুক্তরাষ্ট্রের গ-িতে আটকে থাকল না। ১৯৩২ সালে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাথলিটদের টি-শার্টে লেখা ছিল ‘টি-শার্টটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি’। আর সেই মর্যাদাবান পোশাক নিজের গায়ে চাপাতে অনেকেই চুরির পথও বেছে নিলেন। এভাবেই টি-শার্ট তারুণ্যের প্রতীক হয়ে উঠতে শুরু করল। ১৯৩৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম বিক্রি হওয়া টি-শার্টের দাম ছিল ২৪ সেন্ট। রংবেরঙের টি-শার্টে লেখা হতে থাকল নানা রকমের স্লোগান ও বক্তব্য। রাজনীতিবিদরা ভোটের বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করলেন এই পণ্যের গায়ে। টি-শার্টের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলল যখন থেকে রক এ্যান্ড রোল ব্যান্ডগুলোর নাম ও তারকাদের ছবির ছাপ পড়া শুরু হলো এর গায়ে। গোটা পৃথিবীর তরুণরা পেয়ে গেলেন তাদের মনের মতো পোশাক। তবে মজার ব্যাপার হলো, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে কাস্টম ইঙ্ক নামে একটি টি-শার্ট বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান উদযাপন করল টি-শার্টের শততম জন্মদিন। ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে তালিকা করা হয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০০টি টি-শার্টের। তালিকা করা হয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত টি-শার্টগুলোরও। আরো খুঁজে বের করা হয়েছে কুমিরের চামড়ার তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ৯০ হাজার ডলারের টি-শার্টটিও! কোথায় পাবেন, কেমন দামে ফুটপাথের দোকান থেকে শুরু করে নামী-দামী অনেক দোকানে পাওয়া গেলেও, হালফ্যাশনের গুণগত মানের টি-শার্ট কিনতে হলে একটু যাচাই-বাছাই করাই বুদ্ধিমানের কাজ। ক্যাজুয়াল আর ফরমাল, নগরীর সব শপিংমলেই পাওয়া যায় টি-শার্ট। একটু কম দামে কিনতে চাইলে চলে যেতে পারেন আজিজ সুপার মার্কেট, বঙ্গবাজার কিংবা নিউমার্কেট। ভাল ব্রান্ডের দামী টি-শার্ট কিনতে চাইলে যেতে পারেন নগরীর বসুন্ধরা সিটি, পলওয়েল মার্কেট আর এলিফেন্ট রোডের শোরুমগুলোতে। ভাল মানের টি-শার্ট পাওয়া যাব- সোউল ড্যান্স, ডোরস, লা-রিভ, ক্যাটস আই, মেনজক্লাব, প্লাস পয়েন্ট, ওয়েস্কিন, টেক্সমার্ট, জেন্টেল পার্ক, ইস্টওয়ে, ইনফিনিটি প্রভৃতি শোরুমে। সব ধরনের টি-শার্টের দাম নির্ভর করে ফেব্রিক, ডিজাইন ও ব্র্যান্ডের ওপর। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে ক্যাজুয়াল শার্ট ৮০০ থেকে ১৮০০ টাকা, ব্র্যান্ডের ফরমাল শার্ট ১৪০০ থেকে ৩৫০০ টাকা, ডেনিম শার্ট ১০০০ থেকে ২৫০০ টাকা, নন-ব্র্যান্ডের ফুলহাতা শার্ট ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা, গোল গলা টি-শার্ট ২০০-৩০০ টাকা, কলার টি-শার্ট ২৫০-৭০০ টাকা। আরেকটু ভালমানের টি-শার্ট কিনতে এক হাজার টাকা পর্যন্ত গুনতে হতে পারে। তবে এসব জায়াগা থেকে কিনতে হলে দর কষাকষি করা পারদর্শিতা এবং ভাল কাপড় চেনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। দেশীয় ধাঁচের টি-শার্ট কিনতে এবং দর কাষাকষির ঝামেলা এড়াতে চলে যেতে পারেন শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে। এখানের প্রায় সবগুলো দোকানেই ছেলে, মেয়ে এবং বাচ্চাদের টি-শার্ট আছে। ডিজাইনেও মিলবে ভিন্নতা। এছাড়াও আছে বরণ, বিটুইন, দেশীয়া, ইজি ইত্যাদি দোকান। এসব দোকানে আড়াই শ’ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে টি-শার্ট পাওয়া যাবে। ছবি : ইজি
×