ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাহাঙ্গীর হোসেন বাদশাহ ॥ অদ্ভুত এক খেয়ালে বসে খেলা করলে কবিতা আসে না; কবিতা আসে সময়-অসময়ে নিবিড় কোলাহলে। কখনও সে আসে শঙ্খচিলের মতো; কখনও বা বাবুইয়ের মতো এক শৈল্পিক ঘরের খুড়কুটো ফেলে আবার উদাও হয়ে যায় অজান্তে; তারে ধরে রাখা যায়না; বেঁধে রাখা যায় না; কপালের

কবিতা এক সিন্ধুবিশেষ ॥ তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা চর্যাপদ’র ভূমি

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

কবিতা এক সিন্ধুবিশেষ ॥ তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা চর্যাপদ’র ভূমি

সন্তাপ মাকড়শার মানচিত্রে যখন বিড়ালের থাবা, কালকুটের নখে মাটির চাঁদ উড়াবে বংশীর কপোত, কাকেরা বিড়াল তাড়াবে; মাকড়শা বসে বসে সূর্য শিকারে ভুলবশত গিলে খাবে পৃথিবী। চোখ তুলে নিষিদ্ধ ফানুস- আঁধারি কুচকাওয়াচ ঠেলে পায়ের উপর নক্ষত্র নেমে এলেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখি- মানুষের কান্না, বেদনার মিছিল। . নির্বাক কাঁপিয়ে তুললে তুমি আধেক নিয়মে! দোসর হতে গেলে হাতে ডাংগুলি নিয়ে খেলতে বসো, নির্বাক অথবা লিখতে বসো স্বাভাবিক মৃত্যুর চিঠি, তোমার নিঃশ্বাসে উড়াই বেলুন। নিজেকে কতটুকু কেটেছ, কতটুকু ভেঙেছ- ছিঁড়ে ফুঁড়ে এই আমি ঘুড়ির বাহুতে ছিটিয়েছি হাওয়ার মুক; ঘোর বরিষণে দাঁড়িয়ে উলকো প্রেম ছিটাই- পাখি হয়েছ; প্রেমিকা হতে পেরেছ কতটা আমার! . নির্ময়ী শামুকের জলে পা ভিজিয়ে নাইতে নেমেছ; হাঁসেদের মন পিড়ানি বেড়েছে ঢেউয়ে; বর্শি বাইতে গিয়ে বনিবনা দেখেছি তোমাদের। শুদ্ধ হও তোমরা; জলের যৌবন ফুরিয়ে এলে জলও হয় বৃদ্ধ। কাগুজে নৌকোর খেলা শেষ হলে আরও একবার পরদেশী বক তোমাকে নিয়েও খেলুক, আমি খেলতে খেলতে হেরে যাব; জিতে গিয়েও তুমি রটবে পঙ্খপাতায়; জলকেলির মতো যা ঘটে যায় বার কয়েক তা বনেদী হোক, ঘাটপাড়ে হাটে তোমার শূন্য কলসীÑ মেয়েÑ মাটি তোমার পা খায়, তুমি হতে পারোনি গাঁয়ের বধূ! . পিরান কড়া নেড়ে চৌকাঠ পেরোলেই যদি বেজে উঠতো প্রেমের ঘুণ্টি; কালো সিগারেটে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে ফেলতাম জীবন; খুচরো মশকড়ায় জীবনের উপর জমেছে বড্ড অভিমান। এক কাঠপেন্সিল দিয়েই যদি নির্মাণ করা যেত পথের মানচিত্র; সময়ের সঙ্গে দৌড়ে দৌড়ে ধরে নিতাম শখের সোনালি মাছ; কোন এক বৃন্দাবন ছেড়ে সুমহান কলিজায় দিয়েছি হাত; সিথানে ঘুমায় পোষা বিড়ালÑ ঘুম ভাঙে আমার দেরিতে; উদলা ঘর, সব প্রেম আজ ঘরে ফিরুক! . শরীর শরীরের হাড়ে যখম; কালবাতাশের ওম! এ শরীর শবযাত্রায় যাবে; এ শরীর কত স্বাদের নৌকো; কেউ জানে না; মাঘী বৃষ্টির খেলা হয়! চৈত্রের পোড়ানি! মানুষের নামে কত চুনের বাটা গিলে খায়! শরীর নাইওর খায়; শরীর মাখে বরইপাতার গরম পানি। ইস্কাটনের মোড়ে পড়ে থাকে কত উচুনীচু শরীর; ও শরীর কথা বলে; মরে থাকে, মরে যায়- মাছিরাও হাসতে হাসতে থুথু ছিঁটায়; এ শরীর শব হবে; খড়কুটো হবে, বাতাশ তাড়াবে; শরীর হাটে; শরীর ধোঁয়া খায়; ধুলো খায়; শরীরের ভেতর মানুষ ঢুকে গেলে শরীর ঘুমায় ! . মায়া মোমবাতি জ্বালিতে যখন কাঁদো; ফড়িংয়ের দুঃখগুলো একা, তুমি অপঠিত কবিতার চেয়েও নিবিষ্ট চাঁদ এক, আহ! ফড়িং আর তুমি কেমন এক কলসি জলে ফেল পা, তাবৎ এই করাতকলের দিনে তুমি, আমি, সে- বড্ড আনকড়া । নগরের চিল যখন আকাশ ছেড়েছে তোমার টানে বুঝে গেছি- তুমি কতটা অমিমাংসিত, অপাঙ্ক্তেয়। সবুজ সংকেতের ভেতর দিয়ে যাওয়া শৈশবী প্রেমের হুল বিঁধে আড়ষ্ট বেদম অকালপক্কের মতো- সুখী থাকার অসুখ যখন ভুলে বসি; তোমার প্রেম তখন পোড়াতে থাকে নিবিড়। . বিভুঁই থালা ভরা পুটি মাছ খেয়েছে সন্ধ্যের জোনাক- তোমার কাটতে দেরি মাছ- বটিতে নেই ধার। ঘুঘু যায় শিকারে; আবহমান হতে থাকি রঙচটা প্রেমে, উনুন কাঁদে; তুমি রান্না কর আমার মন! কাঁধে লাঙ্গল; শরীরে রাখালি ঘাম- মাটির অসুখও পেয়ে বসেছে বেশ; অনর্থক ঘাসফুলের মালা গেঁথেছি গামছার ছেঁড়া সুতোয়। পুড়ে যায় তোমার আমন ধানের ভাত, উনুন হাসে! পোড়াভাত খেয়েই কাটিয়ে দেই এক শতাব্দী; হায়! বধূ তুমি প্রেম বোঝো না... . এবার বর্ষণ হোক শাহীন ভূঁঞা এবার বর্ষণ হোক, উঠোনে রোপণ করা হবে নক্ষত্র, সুবাসিত গোলাপ। হায়েনার হিংস্রতায় আর কতোটা রক্তপাত হবে? কতোদিন গোলাপি চিবুক রোপণ হবে তার হাতে? ডাকিনী পড়েছে আজ—মানবতার সবুজ ক্ষেতে। পুঁতে দেয়া হবে গোলাপ আর রোপণ করা হবে রক্ত। গোলাপ চুষে ঝরাচ্ছে যারা, এখনও বেঁচে আছে সে-চারাগুলো তাদের পাপড়ি রোপিত হতে দেবে। যে-ফুলগুলো সুবাস বিলাতো হৃদয় থেকে হৃদয়ে সে-ফুলগুলো আজ রোপিত হয়—হায়েনার হাতে। . মুখোশ শারমিন সুলতানা রীনা ট্রেনের কামরায় যখন তুলে দিলে টিকিটখানা হাতে দিয়ে কী অবলীলায় বললে ভালো থেকো। জানো এখন আমি অনেক ভালো আছি। জানালার গ্রিল ধরে একদৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি না। বৃষ্টিতে ভেজার ইচ্ছেটাও মুমূর্ষু হয়ে আছে। জোসনা লুটোপুটি করে না করতলে। পুকুরের টলমলে জল আর ডাকে না সাঁতার কাটতে যে ভুলে গেছি। ভুলে গেছি চাওয়া পাওয়ার হিসেবের গরমিল। ভুলে গেছি দিন আর রাত্রির ব্যবধান আকাশের শরীর বেয়ে নেমে আসা অন্ধকার যে রাত ভুলে গেছি তাও, তাই গভীর অন্ধকারে চৌকিদার যখন বাঁশি বাজিয়ে চোর তাড়ায় আমার তখন ভীষণ হাসি পায় কে এসে কী আর নেবে? হৃদয়ের সিঁদ কেটে একদিন সব গেছে চুরি বাসনাও হয়ে গেছে ফিকে স্বপ্ন ছড়িয়ে দিয়েছি নীলিমার নীলে। বিশ্বাস করো আজ আমার কোন দুঃখ নেই শুধুমাত্র বিলাসীতায় মুখোশটা পরে আছি।
×