ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোরিয়া উপদ্বীপে শান্তির আভাস

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

কোরিয়া উপদ্বীপে শান্তির আভাস

কোরিয়া উপদ্বীপে শেষ পর্যন্ত শান্তির বাতাস বইতে শুরু করেছে। দুই দেশের শীর্ষ নেতা আজ সীমান্তের একটি অসামরিকীকৃত ভেন্যুতে মুখোমুখি বৈঠকে বসছেন। কোন পক্ষই এ বৈঠক থেকে বড় কিছু আশা না করলেই একে প্রতীকী গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের মুন জায়ে ইন ইম জং দুই কোরিয়ার মধ্যবর্তী সুরক্ষিত সীমান্তে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে শুভেচ্ছা জানাবেন। এএফপি। কোরিয়া যুদ্ধের পর এই প্রথম একজন উত্তর কোরীয় নেতা দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। ২০০০ ও ২০০৭ সালে পিয়ংইয়ংয়ে সম্মেলনের পর এটি হবে দু’দেশের তৃতীয় শীর্ষ বৈঠক। কিম উন মাস খানেকের মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন। তার আগে দুই কোরিয়ার মধ্যে এই আলোচনা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অনেক দক্ষিণ কোরীয় আগের শীর্ষ বৈঠকগুলো দেখে বর্তমান বৈঠক থেকে খুব বেশি প্রত্যাশা করছেন না। দ্রুত একত্রীকরণের চেয়ে বরং শান্তি প্রতিষ্ঠা এখন তাদের প্রত্যাশা। এ আন্তঃকোরীয় শীর্ষ বৈঠক বসছে দুই কোরিয়াকে পৃথককারী বেসামরিকীকরণ জোনে অস্ত্রবিরতি গ্রাম পানমুন জোনের পিস হাউসে। উত্তর কোরীয়দের মধ্যে কখনও কখনও একত্রীকরণ প্রশ্নে বাগাড়ম্বরমূলক শব্দ ব্যবহার করতে দেখা যায়। কিন্তু আন্তঃকোরীয় সম্পর্কে অগ্রগতির এ পর্যায়ে দক্ষিণ কোরীয় প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন অধিকতর বাস্তবসম্মত লক্ষ্য হিসেবে শান্তি ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠাকে বেছে নিয়েছেন। মুন উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনের সঙ্গে সীমান্তসংলগ্ন গ্রাম পানমুন জোনে শুক্রবারের শীর্ষ বৈঠকে বসবেন। অস্ত্রবিরতির মধ্য দিয়ে কোরীয় যুদ্ধ অবসানের পর থেকে ৬৫ বছরের বেশি সময়জুড়ে দক্ষিণ কোরীয়র কাছে একত্রীকরণের ধারণা সুদূরের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রক্তক্ষয়ী কোরীয় স্মৃতি, কয়েক দশকের সামরিক উস্কানি ও হুমকি এবং পিয়ংইংয়ের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচীর কারণে গভীর বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছে কোরীয়দের মধ্যে। স্বৈরশাসক কিম ও তার প্রশাসন একটি ঐক্যবদ্ধ কোরিয়াকে কীভাবে উপযোগী করে তুলবেন এ বিষয়ে কোন ধারণা নেই। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। অনেক দক্ষিণ কোরীয়র মনোভাব হচ্ছে, দারিদ্র্যপীড়িত উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে তাদের একত্রীকরণে লাভের চেয়ে ক্ষতিই হবে বেশি। সিউলের অফিস শ্রমিক পার্ক জুং হো (৩৫) বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া ছিল বিশ্বে দরিদ্রতম দেশগুলোর অন্যতম। দেশটি আজ উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমাদের মা-বাবাদের প্রজন্মের রক্ত ও ঘামের জন্য ধন্যবাদ। একত্রীকরণের পর আমরা পিছিয়ে যাব। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র রাডোং সিনমুন গত সপ্তাহে বলে, পুনরেকত্রীকরণের রয়েছে ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা। তিনি কিমকে ইতিহাসের কর্ণধার ও বিশ্বের নতুন ধারার দিকনির্দেশক বলে অভিহিত করেন। সিউলের অফিস ওয়ার্কার মুজি লি (৩১) বলেন, একত্রীকরণে দক্ষিণ কোরিয়ায় কেবল সৃষ্টি হবে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের। তিনি বলেন, দুই কোরিয়া পৃথক দুটি দেশ হিসেবেই অপেক্ষাকৃত সচ্ছল হয়ে উঠবে। দক্ষিণ কোরীয়দের পুনরেকত্রীকরণ বিষয়ে মনোভাব কেমন এর ওপর সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এসএনইউ) এক বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়, একত্রীকরণ প্রয়োজনীয় কিনা এ বিষয়ে দক্ষিণ কোরীয়রা প্রায় সমানভাবে বিভক্ত। কিন্তু ২০০৭ সালে রিপোর্টটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে এর পক্ষে দৃঢ় সমর্থকের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। গত বছর ৫৩ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ জবাবে বলেছে, তারা মনে করে পুনরেকত্রীকরণ প্রয়োজনীয়। ২০০৭ সালে তাদের সংখ্যা ছিল ৬৩ শতাংশ। দক্ষিণ কোরিয়ার ৫০ দশমিক ৩ শতাংশ মনে করে শীর্ষ বৈঠকে আলোচ্যসূচীর শীর্ষে থাকা উচিত বিপারমাণবিকীকরণের বিষয়। একটি রাষ্ট্রীয় কোম্পানিতে কর্মরত ড্যানিয়েল হ্যান (৩৭) বলেন, পরিণামে, একত্রীকরণের প্রতি তার সমর্থন রয়েছে। কারণ একটি ঐক্যবদ্ধ কোরিয়ার ভবিষ্যত অর্থনৈতিক সুযোগ রয়েছে। হ্যান বলেন, একত্রীকরণের মূল্যের ব্যাপারে অনেকেরই উদ্বেগ রয়েছে। কিন্তু জার্মানির বিস্ময়ভরা একত্রীকরণের দিকে তাকালে বোঝা যায়, একত্রীকরণে ক্ষতির চেয়ে লাভ বেশি। বয়স্ক দক্ষিণ কোরীয়রা একত্রীকরণে ইচ্ছা পোষণ করেন। উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ যখন একটি দেশ ছিল তখন কেমন ছিল যে কথা স্মরণ করেন তারা এখনও।
×