ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজ্জাকের ঘূর্ণিতে চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণাঞ্চল ॥ রানার্সআপ বিসিবি উত্তরাঞ্চল

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

রাজ্জাকের ঘূর্ণিতে চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণাঞ্চল ॥ রানার্সআপ বিসিবি উত্তরাঞ্চল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কী সৌভাগ্য মাশরাফি বিন মর্তুজার। এবার বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগে (বিসিএল) একটি ম্যাচ খেললেন। প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চলের হয়ে ষষ্ঠ ও শেষ রাউন্ড খেললেন। তাতেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ভাগ্য জুড়ে গেল। বিসিএলের ষষ্ঠ বা শেষ রাউন্ডের তৃতীয়দিন শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার। হাতে আরও একদিন বাকি আছে। তবে সেই দিনটির জন্য আর অপেক্ষা নয়। একদিন আগেই লীগের চ্যাম্পিয়ন দল নিশ্চিত হয়ে গেছে। স্পিনার আব্দুর রাজ্জাকের ঘূর্ণির জালে পড়ে তিনদিনেই বিসিবি উত্তরাঞ্চলকে ইনিংস ও ৬৩ রানে হারিয়ে সর্বোচ্চ পয়েন্ট নিয়ে শিরোপা জিতে গেছে দক্ষিণাঞ্চল। হারের পরও উত্তরাঞ্চল শিবিরে একটি প্রাপ্তি যুক্ত হচ্ছে। সেটি হচ্ছে, রানার্সআপ হওয়া। দলটি রানার্সআপ হয়েছে। চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ওয়ালটন মধ্যাঞ্চল ও ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চলের ম্যাচটি আনুষ্ঠানিকতাতেই পরিণত হয়ে গেছে। রাজ্জাকের অসাধারণ বোলিং ॥ কি দুর্দান্ত বোলিং করলেন স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক। দুই ইনিংসে তার অসাধারণ বোলিংয়েই অসম্ভবকে যেন সম্ভব করে তুলল দক্ষিণাঞ্চল। রাজ্জাক প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে উত্তরাঞ্চলের ইনিংস ধসে দিয়েছিলেন। ১৮৭ রানের বেশি করতে পারেনি উত্তরাঞ্চল। দ্বিতীয় ইনিংসেও রাজ্জাকের ঘূর্ণি জাদুতে ধরা পড়েছেন উত্তরাঞ্চলের ব্যাটসম্যানরা। রাজ্জাক ৬ উইকেট শিকার করেছেন। তাতে ১১৫ রানেই গুটিয়ে যায় উত্তরাঞ্চল। ইমরুল কায়েসের সেঞ্চুরিতে দক্ষিণাঞ্চল যে ৮ উইকেট হারিয়ে প্রথম ইনিংসে ৩৬৫ রান করেছিল তা দুই ইনিংস মিলিয়ে অতিক্রম করতে পারেনি উত্তরাঞ্চল। তাতেই দক্ষিণাঞ্চল বাজিমাত করে। উত্তরাঞ্চলের পয়েন্ট তালিকায় যে অবস্থা ছিল তাতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলের ক্রিকেটাররা এতটাই ভাল খেলেছেন যে উড়ে গেছে উত্তরাঞ্চল। ম্যাচ থেকে তাই দক্ষিণাঞ্চল জয় ও বোনাস পয়েন্ট মিলিয়ে ১৮ পয়েন্ট তুলে নিয়ে মোট ৬৫ পয়েন্ট পেয়েছে। আর উত্তরাঞ্চল ২ পয়েন্ট পেয়ে ৬২ পয়েন্ট যুক্ত করতে পেরেছে। বিসিএলের অপর দুই দল মধ্যাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চল চাইলেও এ দুই দলের পয়েন্টকে হার মানাতে পারবে না। আর তাই দক্ষিণাঞ্চল চ্যাম্পিয়ন ও উত্তরাঞ্চল রানার্সআপ হয়ে গেছে। এবারের আসরটি ষষ্ঠ আসর। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হলো দক্ষিণাঞ্চল। শেষ পর্যন্ত উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে শিরোপা লড়াইয়ে বাজিমাত করল দক্ষিণাঞ্চল। প্রথম ইনিংসে উত্তরাঞ্চল ১৮৭ রান করে। দক্ষিণাঞ্চল ৩৬৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। তখনই বোঝা হয়ে গিয়েছিল দক্ষিণাঞ্চল জয় পেতে পারে। তাই বলে তিনদিনেই সেই জয় মিলে যাবে? উত্তরাঞ্চল প্রতিরোধই গড়তে পারবে না? প্রথম ইনিংস শেষেই ১৭৮ রানে এগিয়ে যায় দক্ষিণাঞ্চল। দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে দ্বিতীয়দিন যখন দুই ওপেনার মিজানুর রহমান (১৭*) ও জুনায়েদ সিদ্দিকী (১৪*) মিলে ৩২ রানে নিয়ে যান তখনও দক্ষিণাঞ্চল ১৪৬ রানে এগিয়ে থাকে। তৃতীয়দিন যেন তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়ে উত্তরাঞ্চলের ইনিংস। মিজানুর ৩ রান ও জুনায়েদ আরও ২ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করে আউট হওয়ার পর ৬৫ রানেই ৭ উইকেটের পতন ঘটে যায়। শেষ মুহূর্তে সোহরাওয়ার্দী শুভ ৪১ রান করতে না পারলে তো জয়ের ব্যবধান আরও বাড়ত। এরপরও ১১৫ রানের বেশি করতে পারেনি উত্তরাঞ্চল। রাজ্জাক টানা বল করতে থাকেন আর উইকেট নিতে থাকেন। ২১.২ ওভার বল করে ৫ মেডেনসহ ৪৮ রান দিয়ে ৬ উইকেট তুলে নেন রাজ্জাক। তাতেই দক্ষিণাঞ্চল বিশাল ব্যবধানে জিতে চ্যাম্পিয়নও হয়। মাশরাফি বল হাতে একটি উইকেটও নিতে পারেননি। তবে তিনি যে ঘরোয়া লীগে ভাগ্যবান তা আবারও প্রমাণ হলো। এ মুহূর্তে এবারের ঘরোয়া লীগের মৌসুমে সবকটি শিরোপা মাশরাফির দলের দখলে আছে। বিসিএলে চ্যাম্পিয়ন হলো দক্ষিণাঞ্চল। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে আবাহনী লিমিটেড চ্যাম্পিয়ন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল টি২০) রংপুর রাইডার্স চ্যাম্পিয়ন। জাতীয় ক্রিকেট লীগে (এনসিএল) খুলনা বিভাগ চ্যাম্পিয়ন। কি সৌভাগ্য মাশরাফির। তবে বিসিএলে মাশরাফির ঝুলিতে সেই সৌভাগ্য এনে দিয়েছেন স্পিনার রাজ্জাক। তার ঘূর্ণিতেই যে কুপোকাত হয়েছে উত্তরাঞ্চল। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দক্ষিণাঞ্চল। লিটনের ডাবল সেঞ্চুরি ও ধ্রুবর সেঞ্চুরি ॥ চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে না মধ্যাঞ্চল। তা আগেই নিশ্চিত হয়। তিনদিনেই উত্তরাঞ্চলকে হারিয়ে দিয়ে দক্ষিণাঞ্চল চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাওয়ায় রানার্সআপও হতে পারবে না মধ্যাঞ্চল। মধ্যাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের ম্যাচটি তাই আনুষ্ঠানিকতাতেই পরিণত হয়ে গেল। ম্যাচটি থেকে জয় বের করে নেয়াও এখন কঠিন হয়ে পড়েছে মধ্যাঞ্চলের। পূর্বাঞ্চলের লিটন কুমার দাস (২৭৪) ও আফিফ হোসেন ধ্রুব (১৪২) অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন। তাতে করে ম্যাচ এখন ড্র’র দিকেই ঝুঁকে গেছে। আব্দুল মজিদের ২০৫ ও সাদমান ইসলামের ১১২ রানে মধ্যাঞ্চল প্রথম ইনিংসে যখন ৫৪৬ রান করল তখন মনে হলো কিছু একটা হতে পারে। কিন্তু ওপেনার লিটন কুমার দাস দ্বিতীয়দিনই ১৩৯ রান করে অপরাজিত থেকে জবাব দিচ্ছিলেন। সেই জবাব দীর্ঘ করে তুলেছেন লিটন। ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেছেন। ২৯৩ বলে ৩৫ চার ও ২ ছক্কায় ২৭৪ রানের ইনিংস খেলেন লিটন। তবে ১৯০ বলে যে ডাবল সেঞ্চুরি করেন লিটন, তা দেশের দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি করার রেকর্ড। তার সঙ্গে ধ্রুবও যখন দ্বিতীয়দিন ৩১ রানে অপরাজিত থাকা ইনিংসকে ২২৭ বলে ১৫ চার ও ৫ ছক্কায় ১৪২ রানে পরিণত করেন তখনই ৪৯৯ রানে চলে যায় পূর্বাঞ্চল। ম্যাচ তখনই ড্র’র দিকে হেলে পড়ে। দ্বিতীয়দিন ৩ উইকেটে ২৬৪ রান করেছিল পূর্বাঞ্চল। ২৮২ রানে পিছিয়ে ছিল। সেই রানকে এখন ৫৯২ রানে নিয়ে গেছেন লিটন ও ধ্রুব। দুইজন মিলে চতুর্থ উইকেটে ২৯৮ রানের জুটি গড়েন। যে জুটিই মধ্যাঞ্চলের রানার্সআপ হওয়ার আশাও শেষ করে দেয়। পূর্বাঞ্চল উল্টো ৪৬ রানের লিড নিয়ে নেয়। হাতে এখনও ৪ উইকেট বাকি আছে। দুই দলের দুই ইনিংসও বাকি আছে। ম্যাচ নিশ্চিত ড্র’র দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। লিটন ও ধ্রুবর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়েই তা সম্ভব হয়েছে। স্কোর ॥ দক্ষিণাঞ্চল-উত্তরাঞ্চল ম্যাচ-খুলনা উত্তরাঞ্চল প্রথম ইনিংস ॥ ১৮৭/১০; ৫৮.৩ ওভার (সোহরাওয়ার্দী ৫৯*, শান্ত ৫০; রাজ্জাক ৫/৫৩, সাকলায়েন ২/২০ ও দ্বিতীয় ইনিংস ॥ দ্বিতীয় দিন ৩২/০; ৮ ওভার (মিজানুর ১৭*, জুনায়েদ ১৪* ও তৃতীয়দিন ১১৫/১০; ৪৩.২ ওভার (সোহরাওয়ার্দী ৪১, মিজানুর ২০, জুনায়েদ ১৬, জহুরুল ১০; রাজ্জাক ৬/৪৮, সাকলাইন ৩/৩৪)। দক্ষিলাঞ্চল প্রথম ইনিংস ॥ ৩৬৫/৮ (ইনিংস ঘোষণা); ১০৫ ওভার (ইমরুল ১০৭, বিজয় ৮৯, তুষার ৬৫, মিঠুন ৪৯; ফরহাদ ৫/৫৭)। ফল ॥ দক্ষিণাঞ্চল ইনিংস ও ৬৩ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ আব্দুর রাজ্জাক (দক্ষিণাঞ্চল)। মধ্যাঞ্চল-পূর্বাঞ্চল ম্যাচ-রাজশাহী মধ্যাঞ্চল প্রথম ইনিংস ॥ ৫৪৬/১০; ১২৫.৩ ওভার (মজিদ ২০৫, শুভাগত ৭১, শরীফ ৪১; সোহাগ ৫/১৮৮)। পূর্বাঞ্চল প্রথম ইনিংস ॥ দ্বিতীয়দিন ২৬৪/৩; ৪৬ ওভার (লিটন ১৩৯*, তাসামুল ৬৭, আফিফ ৩১*; শুভাগত ২/৮২) ও তৃতীয়দিন ৫৯২/৬; ১৩৬ ওভার (লিটন ২৭৪, ধ্রুব ১৪২, জাকের ৩২*, সাইফউদ্দিন ২৯*; শুভাগত ৩/১৫৬)। তৃতীয়দিন শেষে।
×