ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাগেরহাটের লবণাক্ত অঞ্চলে ব্রি ৬৭ ধানের বাম্পার ফলন

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

বাগেরহাটের লবণাক্ত অঞ্চলে ব্রি ৬৭ ধানের বাম্পার ফলন

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ উপকুলীয় জেলা বাগেরহাটের লবণাক্ত অঞ্চলে ব্রি ধান ৬৭-এর বাম্পার ফলন হয়েছে। লবণ সহিষ্ণু নতুন এই ব্রি ধান ৬৭ জাতের এমন বাম্পার ফলনে এসব এলাকার অন্য চাষীরাও এই জাতের ধান চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, ব্রি ধান ৬৭ এই অঞ্চলের জন্য একটি সম্ভাবনাময় জাত। বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) ফলিত গবেষণা বিভাগ কর্তৃক উদ্ভাবনী ব্যয় খাতের বিশেষ বাজেট এএসআরএস-এর অর্থায়নে বাগেরহাট সদর, কচুয়া, রামপাল, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা ও ফকিরহাট এই ৬টি উপজেলার ব্রি ধান ৬৭ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। বাগেরহাটের এই ৬টি উপজেলায় এ বছর প্রায় ১ শ’ বিঘা জমিতে এই ধানের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে শরণখোলা উপজেলার কিছু পতিত জমিও রয়েছে। লবণাক্ততার কারণে যেসব জমি অনাবাদি হিসেবে পড়ে থাকত সেসব জমিতেও এই জাতের ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। রামপাল উপজেলা মানিকনগর এলাকায় কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, তিনি আগে যে জমিতে ব্রি ধান ২৮ লাগাতেন তার কিছু জমিতে এ বছর ব্রি ধান ৬৭ লাগিয়েছেন। তুলনামূলকভাবে এই ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাছাড়া এই ধানের রোগবালাই কম হওয়ায় সার ওষুধও কম লেগেছে। আগামীতে আরও বেশি জমিতে তিনি এই ধান লাগাবেন বলে জানান। এই এলাকার কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পাশের অন্য কৃষকের জমিতে এই জাতের ধানের ফলন দেখে তিনিও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগামীতে তার জমিতেও তিনি ব্রি ধান ৬৭ চাষ করবেন। শরণখোলা উপজেলার সিডর বিধ্বস্ত সাউথখালী ইউনিয়নের খুড়িয়াখালী গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন জানান, লবণাক্ততার কারণে ধান না হওয়ায় তিনি তার এই জমিতে কোন ধানের চাষ করত না। কৃষি বিভাগের পীড়াপিড়িতে তিনি পরীক্ষার জন্য কিছু পতিত জমিতে ব্রি ধান ৬৭ চাষ করেন। এই জমিতে ধানের এমন ফলন হবে তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। একই এলাকার কৃষক বাবুল হোসেন, দুলাল হাওলাদারসহ অন্যরাও ব্রি ধান ৬৭ চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়ে হতবাক হয়েছেন। রামপাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাছরুল মিল্লাত জানান, রামপালে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর বেশি জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এর বেশির ভাগই ব্রি ধান ২৮-এর চাষ করেছে। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় কিছু জমিতে ব্রি ধান ৬৭ চাষ করা হয়েছে। কিন্তু অন্য ধানের চেয়ে ব্রি ধান ৬৭ ফলন অনেক ভাল হয়েছে। এতে কৃষকরা অনেক বেশি খুশি হয়েছেন। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) ফলিত গবেষণা বিভাগের এএসআরএস প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. বিশ্বজিৎ কর্মকার বলেন, ব্রি কর্তৃক সম্প্রতি আবিষ্কৃত ব্রি ধান ৬৭ বোরো মৌসুমে অত্যন্ত সম্ভবনাময় লবণ সহিষ্ণু জাত। লবণাক্ততার জন্য দেশের দক্ষিণে অনেক জমি অনাবাদি থাকে যেখানে অন্য জাতের ধান আবাদ করে তেমন ফলন পাওয়া যায় না সেখানে ব্রি ধান ৬৭ খুবই উপযোগী। ফলে এ জাতের আবাদ বৃদ্ধি করে এদেশের খাদ্য নিরাপত্তা আরও টেকসই করা সম্ভব হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অর্থায়নে চলতি বোরো মৌসুমে বাগেরহাটের ৬টি উপজেলা (রামপাল, কচুয়া, মোড়লগঞ্জ, শরণখোলা, সদর ও ফকিরহাট) এবং খুলনার ৫টি উপজেলায় (কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা) প্রায় ২ শ’ বিঘা জমিতে ব্রি ধান ৬৭-এর বীজ উৎপাদন ও সম্প্রসারণ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হয়েছে যা লবণাক্ত অঞ্চলে উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ জাতের ফলন বিশেষ করে ব্রি ধান ২৮-এর চেয়ে বিঘা প্রতি গড়ে প্রায় ২ মণ বেশি, জীবনকাল ব্রি ধান ২৮-এর চেয়ে মাত্র ৩ দিন বেশি। ব্রি ধান ৬৭ এর বিশেষ গুণ হচ্ছে, এ জাত সম্পূর্ণ জীবনকালে ৮ ডিএস/মিটার লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে, রোগ পোকার আক্রমণ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম লবণাক্ত অঞ্চলে ব্রি ধান ২৮ সহ অন্যান্য জাত আবাদ করা যায় না কিন্তু সেখানে ব্রি ধান ৬৭ সহজে আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে।
×