ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৪৭ বছর পর পারিবারিক পেনশন ॥ শহীদ পরিবার পেল অনুদান

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

৪৭ বছর পর পারিবারিক পেনশন ॥ শহীদ পরিবার পেল অনুদান

সমুদ্র হক ॥ স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর সরকারী কর্মচারীর স্বীকৃতি পেল মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যায় শহীদ মোঃ আব্দুল ওয়াহাবের পরিবার। সরকার তার পরিবারকে অনুদান দিয়েছে। পথ প্রশস্ত করে দিয়েছে পারিবারিক পেনশনের। ঘটনাটি প্রায় চার যুগ চাপা পড়ে ছিল। বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী আব্দুল ওয়াহাবের স্ত্রী রহিমা খাতুন ও কন্যা নাসিমা খাতুনের হাতে সরকারী অনুদানের চেক ও কাগজপত্র তুলে দেন ২২ এপ্রিল। ৪৭ বছর আগে ২৫ এপ্রিল হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার বিহারিরা আব্দুল ওয়াহাবকে পবিত্র কোরআন পাঠরত অবস্থায় তুলে নিয়ে হত্যা করে মসজিদের সামনে। ১৯৭১ সালে আব্দুল ওয়াহাব চাকরি করতেন বগুড়া ভূমি অফিসে। তিনি ছিলেন লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক (এলডিসি)। তার বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলায়। স্ত্রী ও তিন মেয়ে নিয়ে ছিল তার সংসার। থাকতেন বগুড়া মালতিনগর স্টাফ কোয়ার্টারের ৪ নম্বর বিল্ডিংয়ে। আব্দুল ওয়াহাব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হয়ে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন। ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে প্রতিরোধ গড়ে তেলার কাজে শরিক হন। এলাকার অবাঙালী বিহারি ও জামায়াতিরা তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে নজর রাখত। আব্দুল ওয়াহাব তার পরিবারের সদস্যদের বগুড়া ডিসি অফিসের তৎকালীন কর্মচারী আব্দুস সালামের সহযোগিতায় সারিয়াকান্দি পাঠিয়ে দেন। তখন সারিয়াকান্দি ছিল দুর্গম বন্ধুর পথ। প্রতিরোধে হানাদার পাকিস্তানী সেনারা বগুড়া প্রবেশ করতে পারে না। ফিরে যায়। তারপর ২৯ দিন বগুড়া মুক্ত থাকে। এ সময় আব্দুল ওয়াহাব স্টাফ কোয়ার্টারে থাকেন ও আশ্রয় দেন বগুড়ায় অবস্থানরত বাইরের অনেককে। বরিশালের আরেক হিন্দু ধর্মাবলম্বী পরিবারও সেখানে থাকতেন। এ জন্য বিহারিরা তার ওপর আরও ক্ষিপ্ত ছিল। ২৪ এপ্রিল বিকেলে হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সাঁজোয়া বহর ও জেট প্লেন দিয়ে বোমা ফেলে বগুড়া দখল করে। পরদিন ২৫ এপ্রিল ভোরে আব্দুল ওয়াহাব ফজরে নামাজের পর কোরআন পাঠ করছিলেন। হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনী, রাজাকার ও বিহারিরা বাড়ির তিন তলায় উঠে টেনে হেঁচড়ে বের করে নিয়ে আসে আব্দুল ওয়াহাব ও আশ্রিত পরিবারগুলোকে। বাড়ির সামনে বেড়ায় ঘেরা টিনশেডের মসজিদের সামনে নিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করা হয় তাদের। বিষয়টি জেনে আব্দুল ওয়াহাবের পরিবার তাদের এক পরিচিতজনের সহযোগিতায় অনেক ঘুর পথে কয়েক দিনে চলে যান ওয়াহাবের শ্বশুরবাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ির বশিরপাড়া গ্রামে। আব্দুল ওয়াহাবের স্ত্রী রহিমা খাতুন তিন মেয়ে নিয়ে সেখানে থাকেন। তিনি দিন রাত খেটে মেয়েদের লেখাপড়া শেখান। ওই সময় তার বড় মেয়ে নাসিমা খাতুনের বয়স ছিল ৬ বছর। নাসিমা খাতুন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রী নেয়ার পর ২০০৯ সালে বগুড়ায় গিয়ে তার বাবার ঘটনা খুঁজে বের করেন। লোকজন জানায় তার বাবার কঙ্কাল সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে পাওয়া যায়। নাসিমা খাতুন জানান, স্মৃতি হাতরে মালতিনগর ভূমি অফিস খুঁজে বের করেন। ওই এলাকায় তার বাবার কথা জানেন এমন প্রবীণ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে তাদের ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চান। ওই ভূমি অফিসে অনেক পুরানো কাগজপত্রের মধ্যে দুইটি রেজিস্ট্রারের কাগজে তার বাবার নাম পান। এই দুই কাগজ নিয়েই নাসিমা সুলতানার লড়াই শুরু হয়। বাবার চাকরির স্বীকৃতি পেতে সরকারের ওপর মহলে যোগাযোগ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের কাছে আবেদন জানান।
×