ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিখোঁজ ৪০ জনের অবস্থা এখনও রহস্যাবৃত ॥ ফিরেছেন ৩৫ জন

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

নিখোঁজ ৪০ জনের অবস্থা এখনও রহস্যাবৃত ॥ ফিরেছেন ৩৫ জন

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গত এক বছরে ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, সাংবাদিক, রাষ্ট্রদূত, শিক্ষকসহ নানা শ্রেণীর ৭৫ জন মানুষ নিখোঁজ হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ জন ফিরে এসেছে। বাকি ৪০ জনের অবস্থা কেউই জানে না। তারা কি অপহৃত নাকি গুম কিংবা নিখোঁজ সেই রহস্য গত এক বছরেও উদ্ঘাটিত হয়নি। তবে বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছে এমন সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছর ২০১৭ সালে সারাদেশে ৯১ জন নিখোঁজ হওয়ার পর ২৬ জন ফিরে এলেও ৬৫ জন এখনও ফিরে আসেনি। এই সংস্থাটির প্রতিবেদনে নিখোঁজের বিষয়ে অপহরণ, গুম, গুপ্তহত্যার পাশাপাশি নিখোঁজের ঘটনাগুলোর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ের দিকেই সন্দেহের তীর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আসক সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ডিসি (মিডিয়া) মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, কোন ব্যক্তি গুম, নিখোঁজ কিংবা অপহৃত হলে থানা পুলিশকে অবহিত করা মাত্রই তদন্ত শুরু হয়। গত বছর জুড়ে অপহরণ বা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাগুলো তোলপাড় সৃষ্টি করে। তবে এ বছরের গত চার মাসে অপহরণ, নিখোঁজ বা গুম হওয়ার তেমন কোন বড় ধরনের চাঞ্চল্যকর ঘটনা না ঘটায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়নি। নিখোঁজ হওয়া মানেই অপহরণ বা গুম নয়। অনেকে বেড়াতে যান, কেউ নাটক করেন, কেউ স্বেচ্ছায় যান। পুলিশের তৎপরতার কারণে ইতোমধ্যে অনেকে ফিরে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতায় নিখোঁজ ব্যক্তিরা ফিরে এসেছে। এখনও যারা নিখোঁজ রয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই স্বেচ্ছায় কোথাও আত্মগোপনে আছেন এমন খবরও পাওয়া যায়। আবার কেউ কেউ নিখোঁজ হয়ে জঙ্গী সংগঠনে যোগ দেয়। তবে যারাই নিখোঁজ রয়েছে তাদের সন্ধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা চালাচ্ছে বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তার দাবি। পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে কারও মিলেছে লাশ। কেউ নিখোঁজ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। আবার কেউ নিখোঁজ থাকার পর ফিরে এসেছে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গত এক বছরে ফিরে এসেছেন ৩৫ জন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও দেখানো হয়েছে। নিখোঁজ অবস্থা থেকে যাদের মুক্তি মিলছে তাদের ফিরে আসার ধরনও অভিন্ন। চোখ বেঁধে রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়। পরে বাসায় ফেরেন। যারা ফিরেছেন তাদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় না। কেউ কথা বলেন না। গণমাধ্যমকে এড়িয়ে যান তারা। শুধু তাই নয়, নিখোঁজের পর স্বজনরা যেভাবে সরব থাকেন, উদ্ধারের পর তারাই আবার রহস্যজনক কারণে অস্বাভাবিকভাবে হয়ে যান নীরব। তাই কারা তাদের অপহরণ করেছিল, নিখোঁজের দিনগুলোতে তারা কোথায় ছিলেন, কেনইবা অপহরণের পর ছেড়ে দেয়া হচ্ছে- এসব প্রশ্নের কোন সদুত্তর নেই। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তি আলোচিত কেউ না হলে থানা পুলিশ থানায় সাধারণ ডায়েরি করার মধ্য দিয়েই তাদের দায়িত্ব সম্পন্ন করে। হৈ চৈ না হওয়া পর্যন্ত ঘাপটি মেরে থাকে। নিখোঁজ ব্যক্তির স্বজনেরা দিনের পর দিন থানায় বা নগর গোয়েন্দা দফতরে ঘুরেও কোন সহযোগিতা পান না বলে অভিযোগ আছে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, অনেক নাটকীয়তার জন্ম দিয়ে রহস্যে ঘেরা ‘গুম, নিখোঁজ’ ব্যক্তিরা ফিরে আসার ঘটনাও ঘটেছে। গত বছর আরএমএম লেদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিরুদ্ধ রায় নিখোঁজ থেকে ফিরে আসার পর দীর্ঘ ১৯ দিন পর্যন্ত তার ফিরে আসার বিষয়টিও গোপন রাখেন তার পরিবার। এভাবে যারা ফিরে এসেছে তারা এতদিন কোথায় কার কাছে কিভাবে ছিলেন সেই বিষয়ে ফিরে আসা ব্যক্তিসহ তার পরিবারের লোকজন মুখ খুলছেন না। এখনও যারা নিখোঁজ বা গুম হওয়া ব্যক্তিদের জন্য যেসব পরিবারের তাদের ফিরে আসার প্রতীক্ষার প্রহর গুণছেন তার অবসান ঘটাতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
×