ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বার কাউন্সিল নির্বাচন ১৪ মে, চলছে জোর প্রচারাভিযান

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

বার কাউন্সিল নির্বাচন ১৪ মে, চলছে জোর প্রচারাভিযান

বিকাশ দত্ত ॥ আইনজীবী নিয়ন্ত্রণ ও তদারককারী সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচন ঘিরে দেশের বিভিন্ন বারে জোর প্রচারাভিযান চলছে। ১৪ মে দেশের ৭৮ কেন্দ্রে বার কাউন্সিলের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ মনোনীত সাদা প্যানেল ও বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ জয়ের ধারা ধরে রাখতে ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল তাদের বিজয় ফিরে পেতে দেশের বিভিন্ন বারে বারে যাচ্ছে। দুই প্যানেলের নেতৃবৃন্দই আশাবাদী তারা নির্বাচনে পুরো প্যানেলে জয়লাভ করবে। নির্বাচন ঘিরে দেশের বারগুলোয় এখন নির্বাচনী হাওয়া বিরাজ করছে। সিনিয়র ও জুনিয়র আইনজীবীদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধনের সৃষ্টি হয়েছে। আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বার কাউন্সিলে প্রতি তিন বছর পর পর নির্বাচন হয়ে থাকে। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল) এবং বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল প্যানেল) পরিষদ ছাড়াও হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে আইনজীবী ঐক্য ফ্রন্ট নামে আরেকটি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। বার কাউন্সিলের ১৪ সদস্য পদের বিপরীতে এবার ৫৯ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সারাদেশে সনদপ্রাপ্ত আইনজীবীদের ভোটে সাধারণ আসনে সাত এবং দেশের সাতটি অঞ্চলের স্থানীয় আইনজীবী সমিতির সদস্যদের মধ্য থেকে একজন করে আরও সাতজন নির্বাচিত হয়ে থাকেন। এ্যাটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। এবারের বার কাউন্সিলের নির্বাচনে বেশ কিছু সিনিয়র আইনজীবীকে নির্বাচনী মাঠে দেখা যাচ্ছে না। এদের মধ্যে রয়েছেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম, ব্যারিস্টার তানিয়া আমির, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ প্রমুখ। অন্যদিকে আইনজীবী ঐক্য ফ্রন্ট নির্বাচনের কথা বললেও তাদের মধ্যে বেশ কিছু সিনিয়র নেতা নিবাচনের মাঠে নেই। একটি সূত্র জানায় সাদা ও নীল উভয় প্যানেলেই প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব নেই বললেও এখনও নেতায় নেতায় দূরত্ব বিরাজ করছে। এর আগে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সাদা প্যানেলের ভরাডুবি হয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন প্যানেল নির্বাচনে বিরোধ থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা কাটিয়ে উঠে। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির (সুপ্রীমকোর্ট বার) ২০১৮-১৯ মেয়াদের নির্বাচনে ১৪ পদের মধ্যে সাদা প্যানেল একটি সহ সম্পাদকসহ মাত্র ৪ পদ পেয়েছে। কী কারণে সাদা প্যানেলের ভরাডুবি হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে আইনজীবীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেই এই ভরাডুবি। যদি এই সূক্ষ্ম কোন্দল এখনও থেকে থাকে তা হলে এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনেও। এ বিষয়ে সাদা প্যানেলের প্রার্থী শ ম রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের নির্বাচনী কর্মকা-ে কোনরূপ কোন্দল বা অভ্যন্তরীণ সঙ্কট না থাকায় ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে প্রচারাভিযান চলছে। দলের পক্ষ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি টিম প্রার্থীদের বিভিন্ন কর্মকা- মনিটর করছে। কেউ যাতে আত্মঘাতী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে না পারে, সে বিষয়েও খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। বেনাভোলেন্ড ফান্ড ৫ থেকে ১০ লাখে উন্নীত করা সরকারের ব্যয়ে ১৫ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ এবং এককালীন ৪০ কোটি টাকা অনুদানের ব্যবস্থা করেছে। এ সকল বিষয় চূড়ান্ত ভাবে বাস্তবায়নের জন্যে তাদেরকেই আইনজীবীরা পুনরায় নির্বাচিত করবে এমন আশা শ ম রেজাউল করিমের। সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ প্রার্থী এইচ এ এম জহিরুল ইসলাম খান (জেড আই খান পান্না) জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলকে উন্নতি সাধন করেছি, সে দিক বিবেচেনা করলে আইনজীবীরা আমাদেরকেই ভোট দেবেন। আমরা নির্বাচনে জয়লাভ করব। আমাদের সময় বেনাভোলেন্ড ফান্ড ৫ থেকে ১০ লাখ টাকায় উন্নীত করেছি। আমাদের ১৫ তলা ভবন উত্তোলনের জন্য একনেকে ১৩৬ কোটি টাকার প্রস্তাব সুবিবেচনার জন্য আছে। সরকারের কাছ থেকে ৪ কোটি টাকা অনুদানের কথা আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক ঘোষণা করেছেন। আমরা অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর প্রায় ৫০ হাজার পরীক্ষা নেয়ার জন্য কাজ করে গেছি। ৩ বছর পরীক্ষা হয়নি। বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলা আপীল বিভাগে পেন্ডিং থাকায় পরীক্ষা নিতে পারিনি। তার পরেও একত্রেও তিন বছরের পরীক্ষা নিতে সক্ষম হয়েছি। বিশেষ করে এই পরীক্ষায় স্বচ্ছতা অবলম্বন করতে পেরেছি। একটি উদাহরণ না দিলেই নয় এমসিকিউ পরীক্ষায় আমার মেয়ে মাত্র দুই নম্বরের জন্য ফেল করেছে। সব দিক বিবেচনা করলে এবারের নির্বাচনে আমাদের পাল্লাই ভারি। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থী এ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে অবশ্যই আমরা জয়লাভ করব। মানুষের কাছে তাদের (সমন্বয় পরিষদ ) ক্যানভাস গতানুগতিক। একটি দেশের জন্য সব চেয়ে বড় গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। এ গুলো না থাকলে ভবন করে কী লাভ। আমাদের মধ্যে ¯্রােতের সৃষ্টি হয়েছে। বন্যা যখন আসে তখন বটগাছও ভেঙ্গে যায়। সাধারণ আইনজীবীরা আমাদের সঙ্গে আছে। এবারের নির্বাচনে আমরাই জয়লাভ করব। আইনজীবী ঐক্য ফ্রন্টের প্রার্থী হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা এখনও পুরো প্যানেল দিতে পারিনি। দু এক দিনের মধ্যে প্যানেল দিতে পারব। তিনি আরও বলেন, সমাজের সচেতন অংশ হিসেবে সক্রিয় রাজনীতি করা বা না করা একজন সম্মানিত আইনজীবীদের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল একটি অরাজনৈতিক কল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠান। নিকট অতীতেও প্রতিষ্ঠানটি জাতির বিবেক হিসেবে গৌরবময় ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু ইদানিং কতিপয় দলীয় সুবিধাভোগী, অতিচালাক ও উচ্চাভিলাষীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে আইনজীবীদের সামগ্রিক কল্যাণে নিবেদিত না করে সঙ্কীর্ণ দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছে, যা আইনজীবী সমাজের জন্য অতীব লজ্জাজনক। আইনজীবীরা এ বিষয়টি বিবেচনা করেই আমাদের ভোট দেবেন। সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ এবারের নির্বাচনে সরকার সমর্থক আইনজীবীদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ থেকে প্যানেল নেতা হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বার কাউন্সিলের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদারকে। এ প্যানেল থেকে সাধারণ আসনে অন্য যাদের প্রার্থী করা হয়েছে তারা হলেন- এ্যাডভোকটে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সৈয়দ রেজাউর রহমান, জেড আই খান পান্না, পরিমল চন্দ্র গুহ ও শ ম রেজাউল করিম। সাত আঞ্চলিক সদস্য পদে যাদের প্রার্থী করা হয়েছে তারা হলেন, ‘এ’ গ্রুপ থেকে কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, ‘বি’ গ্রুপ থেকে কবির উদ্দিন ভুঁইয়া, ‘সি’ গ্রুপ থেকে ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, ‘ডি’ গ্রুপ থেকে এএফ রুহুল আনাম চৌধুরী, ‘ই’ গ্রুপ থেকে পারভেজ আলম খান, ‘এফ’ গ্রুপ থেকে মোঃ ইয়াহিয়া এবং ‘জি’ গ্রুপ থেকে রেজাউল করিম। এদের মধ্যে এ্যাডভোকটে আবদুল বাসেত মজুমদার, জেড আই খান পান্না, ও শ ম রেজাউল করিম এবং কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, পারভেজ আলম খান, মোঃ ইয়াহিয়া এবং রেজাউল করিম বর্তমান কমিটিতে রয়েছেন। জাতীয়তাবাদী ঐক্য প্যানেল বিএনপি সমর্থক আইনজীবী প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী। সাধারণ আসনে এ প্যানেল থেকে অন্য যারা প্রার্থী হয়েছেন এ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, তৈমুর আলম খন্দকার, আলহাজ বোরহানউদ্দিন, হেলালউদ্দিন মোল্লা, আব্বাস উদ্দিন ও আসিফা আশরাফী পাপিয়া। অঞ্চলভিত্তিক আসন থেকে ‘এ’ গ্রুপ থেকে মহসীন মিয়া, ‘বি’ গ্রুপ থেকে বাঁধন কুমার গোস্বামী, ‘সি’ গ্রুপ থেকে দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী ‘ডি’ গ্রুপ থেকে এটিএম ফয়েজ উদ্দিন, ‘ই’ গ্রুপ থেকে শাহ ছারিরুর রহমান, ‘এফ’ গ্রুপ থেকে ইসহাক এবং ‘জি’ গ্রুপ থেকে শেখ মোখলেসুর রহমান। দুই প্যানেলের বাইরে প্রার্থী যারা ॥ দুই প্যানেলের বাইরেও প্রার্থী হয়েছেন। এদের মধ্যে সাধারণ আসনে রয়েছেন, শামীম সরদার, মোতাহার হোসেন, দেলোয়ার হোসেন মল্লিক, এস এম শফিকুল ইসলাম, শেখ সিরাজুল ইসলাম, ইসরাফিল, এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান, এস এম আবু বকর, শাহজাদা, আবুল বাশার, ফরহাদ উদ্দিন ভুঁইয়া, আব্দুল মজিদ মল্লিক, গোলাম মোস্তফা, কামাল উদ্দিন, মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল, ইউনুস আলী আকন্দ ও আমাতুন নুর বেগম। গ্রুপ আসনে এ থেকে ইরাফিল, বি থেকে এ কে এম রায়হান উদ্দিন, সি থেকে আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর, ফেরদৌস আহম্মেদ, ডি থেকে জহিরুল ইসলাম, তারিকুর রহমান, ই থেকে আনিস উদ্দিন আহম্মেদ, কে বি এস আহম্মেদ কবির, এফ থেকে শরিফুল ইসলাম, ময়নুল আহাসান, মনিুরুজ্জামান, জি থেকে রফিকুল ইসলাম।
×