ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তারেকের বর্তমানে নাগরিকত্ব নেই ॥ আইনমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:০২, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

তারেকের বর্তমানে নাগরিকত্ব নেই ॥ আইনমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশী পাসপোর্ট সমর্পণ করে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়ায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এখন আর বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেই বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক। তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণের জন্য তার পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। তার মানে তারেক বলছেন, তিনি আপাতত বাংলাদেশের নাগরিক থাকতে চান না। এখন তারেকের অবস্থান হচ্ছে, তিনি যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। তার মানে তিনি এই মুহূর্তে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব অস্বীকার করেছেন। তবে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব না থাকলেও বিএনপির তারেক রহমানকে দেশে ফেরাতে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। জাতিসংঘের মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল এ্যাক্ট আইনে তারেক রহমানকে দেশে আনা সম্ভব। প্রয়োজনে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বন্দী বিনিময় চুক্তি করা হবে জানিয়ে তিনি বলছেন, এ বিষয়ে আলোচনাও চলছে। আগামী ২৮ এপ্রিল জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস এ উপলক্ষে উদযাপনের প্রস্তুতি ও এর গুরুত্ব নিয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে তিনি এ সমস্ত বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে ৩ লাখ ৫৯৮ জনকে আইনী সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষগণের আইনগত দাবির প্রেক্ষিতে মধ্যস্থতার মাধ্যমে ৮ কোটি ৩৫ লাখ ৯ হাজার ৪৫৪ টাকা আদায় করা হয়েছে। ২৮ এপ্রিল সারাদেশে আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপনের জন্য জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানসহ লিগ্যাল এইড মেলা ২৮ এপ্রিল শনিবার সকাল ১০টায় ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজন করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক উপস্থিত ছিলেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আরও বলেন, উনি (তারেক রহমান) যদি বলে থাকেন আমি পাসপোর্ট সারেন্ডার করে দিলাম, আমি থাকতে চাই না- এর মানেটা কী? আমি বাংলাদেশী পাসপোর্ট রাখতে চাই না, তাহলে এখানে তার আইডেন্টিটিটা কী ? যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি (তারেক রহমান) বাংলাদেশের পাসপোর্টে ছিলেন ততক্ষণ পর্যন্ত তার আইডেন্টিটি ছিল বাংলাদেশের একজন নাগরিক। যেখানে তিনি স্বেচ্ছায় বলছেন, আমি আমার বাংলাদেশী পাসপোর্টটা সারেন্ডার করে দিলাম। যখন তিনি ট্রাভেল ডকুমেন্টটা (পাসপোর্ট) সারেন্ডার করে দেন, তখন কি বলা যাবে তিনি তখনও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব রেখে দিয়েছেন ?’ তার মানে কি আমরা বলতে পারি কেউ রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলে আশ্রয় পাওয়ার পর তিনি বাংলাদেশের নাগরিক নন- এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক তো নয়ই, উনি (তারেক রহমান) পাসপোর্ট ইয়ে (সারেন্ডার) করে দিয়েছেন।’ আইনমন্ত্রী বলেন, পাসপোর্ট সারেন্ডার করার পর তিনি যখন বিদেশে গেছেন, তখন ব্রিটিশ সরকারের একটা ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে গেছেন। এর মানে এই নয়কি যে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব সারেন্ডার করেছেন ? অবকোর্স (অবশ্যই)। পাসপোর্টের সঙ্গে নাগরিকত্বের সম্পর্ক জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশে থাকলে আপনার যদি পাসপোর্ট না থাকে তবে কিন্তু নাগরিকত্ব এফেক্টেড হয় না। পাসপোর্ট জিনিসটা কি, এটা একটা ট্রাভেল ডকুমেন্টের মতো, বাইরে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট প্রয়োজন হয়। বাইরে গেলে আপনি যে বাংলাদেশের নাগরিক সেটার আইডেন্টিটি। ‘আমি যতটুকু তথ্য জানি, যে বিতর্ক হচ্ছে এর থেকে আমি যে তথ্য জানতে পেরেছি তা হচ্ছে- একজন পলাতক দ-প্রাপ্ত আসামি তারেক রহমান। তিনি ইউনাইটেড কিংডমে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করার জন্য তার পাসপোর্ট সারেন্ডার করেছেন। এর মানে তিনি বলেছেন আপাতত আমি বাংলাদেশের নাগরিক থাকতে চাই না। আমি এই পাসপোর্টটা সারেন্ডার করলাম, আপনারা আমাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিন। তিনি (তারেক রহমান) যখন গিয়েছিলেন তিনি মুচলেকা দিয়ে গিয়েছিলেন, গিয়ে তিনি পাসপোর্ট সারেন্ডার করেছেন এর মানে হচ্ছে তিনি স্বেচ্ছায় বলছেন আমি আর বাংলাদেশের নাগরিক থাকতে চাই না। আমাদের এখানে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়া হোক। এখন তার স্ট্যাটাস হচ্ছে তিনি ব্রিটেনের রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন, ইউনাইটেড কিংডম আশ্রয় দিয়েছে কি-না সে বিষয়ে আমার কাছে কোন তথ্য নেই। যদি দিয়ে থাকে ভাল কথা, না দিয়ে থাকলে তা আমি জানি না। তিনি চেয়েছেন। এই মুহূর্তে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ডিনাই (প্রত্যাখ্যান) করেছেন। কিন্তু তার মানে এই না ভবিষ্যতে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হতে চাইলে পারবেন না। এটা তো নয়।’ তারেক রহমান বাংলাদেশর নাগরিক না হলে সরকার কিভাবে তাকে ফিরিয়ে আনবে- এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘তিনি বাংলাদেশের ভূ-খ-ে অপরাধ করেছেন, তখন তিনি বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন। এটা ঠিক যে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আমাদের এক্সট্রাডিশন ট্রিটি (বন্দী বিনিময় চুক্তি) নেই। কিন্তু এক্সট্রাডিশন ট্রিটি করতে কিন্তু কোন বাধা নেই। আমরা সেই রকম আলাপ-আলোচনাও করছি। ‘দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, এটা আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি। মিউচুয়াল লিগ্যাল এ্যাসিটেন্স এ্যাক্ট আমাদের দেশে হয়েছে। এই আইনটি করার প্রয়োজনীয়তা ছিল জাতিসংঘের একটি নির্দেশনার কারণে। জাতিসংঘের যেসব সদস্য আছে তাদের মধ্যে এই আইনটি থাকলে ট্রান্স বর্ডার অপরাধ বা যে কোন অপরাধী এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যায় তাকে যেন ধরে আনার সুবিধাটা থাকে। এজন্য এই আইনটি করা হয়েছে। জাতিসংঘ যখন এই আইনটি করার জন্য সকল দেশকে পরামর্শ দেয়, তখন উদ্দেশ্য এটাই ছিল বলে তারা বলেছে। কারণ আজকাল অনেক ট্রান্সবর্ডার ট্রান্সন্যাশনাল ফৌজদারি অপরাধ ঘটে যাচ্ছে। এজন্য তারেক রহমান যদি বাংলাদেশের নাগরিক এখন নাও থাকেন তাহলেও লিগ্যাল এ্যাসিটেন্স এ্যাক্টের আন্ডারে তাকে ফিরিয়ে আনতে পারব। তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরও তার টেলিফোন কথপোকথনসহ বিভিন্ন বিষয় প্রচার করা হচ্ছে, এতে আদালত অবমাননা করা হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘হাইকোর্টের অর্ডার যদি অমান্য করা হয় তাহলে নিশ্চয়ই সেটা আদালত অবমাননা হবে। সেক্ষেত্রে আমি সবাইকে আদালতের নির্দেশটি পালন করার অনুরোধ করছি। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার ব্যাংক এ্যাকাউন্টে চার কোটি টাকার পে-অর্ডার জমা দেয়ার অভিযোগে ব্যবসায়ী নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা ও মোহাম্মদ শাহজাহানকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি আইনমন্ত্রী। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাসরুরকে গ্রেফতার এবং ছেড়ে দেয়ার যে অভিজ্ঞতা, তা আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। অন্তত আমি শিখেছি এবং আমি সংশ্লিষ্টদের বলেছি যদি আগামীতে পুলিশ এমন ধরনের নালিশ পায়, পদক্ষেপ নেয়ার আগে অনুসন্ধান করে অভিযোগ সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে যেন ব্যবস্থা নেয়। এমন ভুল সরকারের কাম্য নয়। এমন ভুল যদি ভবিষ্যতে হয়, তাহলে যার দ্বারা হবে; তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী বলেন, আর্থিকভাবে অসচ্ছল ,সহায় সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ- সামাজিক কারণে বিচার পেতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে বিপুল অর্থ ব্যয়ে আমরা আইনগত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। আর্থিকভাবে মানুষ ছাড়াও এসিডদগ্ধ নারী পুরুষ, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত মহিলা বিনা বিচারে আটক ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী, পাচারকৃত নারী বা শিশুসহ নানাবিধ আর্থসামাজিক কারণে বিচার পেতে অক্ষম যে কোন নাগরিককে সম্পূর্ণ সরকারী অর্থ ব্যয়ে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
×