ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মুন্সীগঞ্জের ত্রাস বাবা আরিফ ক্রসফায়ারে নিহত

প্রকাশিত: ০৫:০২, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

মুন্সীগঞ্জের ত্রাস  বাবা আরিফ  ক্রসফায়ারে নিহত

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জের ত্রাস শীর্ষ মাদক বিক্রেতা অস্ত্র ব্যবসায়ী ও ১২ মামলার আসামি সাইফুল ইসলাম ওরফে বাবা আরিফ (৩৭) ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে। অবৈধ মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা যান। একই ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। আহত এসআই মোঃ আসলাম ও কনস্টেবল কালামকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার রাত আড়াইটার দিকে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের চর হায়দারাবাদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত বাবা আরিফের বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র, ডাকাতিসহ ১২টি মামলা রয়েছে। মুন্সীগঞ্জ সদর থানার পঞ্চসার ইউনিয়নের মিরেশ্বরাই গ্রামের জুলহাস বেপারীর ছেলে এই আরিফ। সদর থানার ওসি আলমগীর হোসাইন জানান, বুধবার রাত ১০টার দিকে সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের দুর্গাবাড়ি এলাকা থেকে ১১০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ সাইফুল ইসলাম আরিফ ওরফে বাবা আরিফকে আটক করা হয়। পরে আরিফের দেয়া তথ্য মতে বুধবার রাত আড়াইটার দিকে তাকে নিয়ে সদর থানা পুলিশ মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে নামে। এ সময় চর হায়দারাবাদ এলাকার জাকির মোল্লার ভিটে বাগানে পৌঁছলে আরিফের সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় আরিফ দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তার সহযোগীদের গুলিতে আহত হয়। আরিফকে রাত সাড়ে ৩টার দিকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আনা হলে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুই রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি পিস্তল, দুটি রামদা ও একটি রড ও ৮ রাউন্ড গুলিসহ কিছু ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করে। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে ৪টার দিকে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের মালিরপাথর এলাকায় কারেন্ট জাল ছিনতাই করার সময় গণপিটুনি দেয় আরিফকে। মুমূর্ষু অবস্থায় পুলিশ হেফাজতে আরিফকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কয়েক দিন চিকিৎসা দিয়ে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর আরিফ দীর্ঘদিন কারাভোগের পর মাসখানেক আগে জামিনে মুক্ত হয়। এরই মধ্যে পুলিশের সঙ্গে পরকীয়া ও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে আরিফের স্ত্রী সাবিনা আক্তার রুনু। গত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় কর্মরত এএসআই আলম সরোয়ার্দি রুবেলকে তার বাসা ও কর্মস্থল থেকে ৪৯ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গ্রেফতার করা হয়। পরে পুলিশ সদস্য আলমের স্বীকারোক্তিতে আরিফের স্ত্রী রুনুকে পুলিশ আটক করে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়। বর্তমানে আরিফের স্ত্রী কারাগারে রয়েছে। আরিফ এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন তিনি। জেল থেকে বেরিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে আরিফ। গড়ে তুলে ইয়াবার সাম্রাজ্য। চাঁদাবাজি, ছিনতাইও করে বেড়ায়। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল এলাকাবাসী। হুমকি ধামকি অত্যাচার করে একাধারে। পুলিশও তাকে গ্রেফতারে মরিয়া হয়ে ওঠে। বুধবার আটকের পর অবশেষে রাত আড়াইটার দিকে নিহত হয় আরিফ। এই মাদক সম্রাটের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পঞ্চসারে আনন্দ মিছিল হয়। এলাকাবাসী একে অপরকে মিষ্টি খাইয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএম বলেন, আরিফ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। শুধু মাদক ব্যবসায়ীই নয় সঙ্গে অস্ত্র ব্যবসাও করত। এছাড়া ছিনতাই ডাকাতিসহ এমন কোন অপরাধ নেই যার সঙ্গে সে জড়িত ছিল না। শুধু মুন্সীগঞ্জেই নয় তার বিরুদ্ধে কুমিল্লা, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জেও মাদক মামলা রয়েছে। তাকে নিয়ে অস্ত্র এবং মাদক উদ্ধারে বের হলে তার সহযোগীরা পুলিশের ওপর হামলা করে।
×