ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোমাকে বিধ্বস্ত করে ফাইনালের পথে লিভারপুল

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২৬ এপ্রিল ২০১৮

রোমাকে বিধ্বস্ত করে ফাইনালের পথে লিভারপুল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বার্সিলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের আক্রমণভাগকে বর্তমানে সেরা বলা হয়ে থাকে। লিওনেল মেসি-লুইস সুয়ারেজ-ফিলিপ কুটিনহোকে নিয়ে সাজানো বার্সার ফরোয়ার্ড লাইন। আর প্রতিপক্ষকে তছনছ করার জন্য রিয়ালের নেতৃত্বে থাকেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো-করিম বেনজেমা-গ্যারেথ বেলরা। তবে স্প্যনিশ ক্লাব রিয়াল-বার্সার এই বিখ্যাত লাইনআপকেই যেন ছাড়িয়ে গেছে ইংলিশ জায়ান্ট লিভারপুল। দ্য রেডসদের আক্রমণভাগ সামলাচ্ছেন মোহামেদ সালাহ, রবার্টো ফিরমিনো ও সাডিও মানে। তিনজনই আছেন তুখোড় ফর্মে। প্রতিনিয়তই যে কোন প্রতিপক্ষ খড়কুটোর মতো উড়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগেও এ দৃশ্য দেখা গেছে। এ্যানফিল্ডে লিভারপুল ৫-২ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে অতিথি ইতালিয়ান ক্লাব এএস রোমাকে। ইংলিশ জায়ান্টদের হয়ে দু’টি করে গোল করেন সালাহ ও ফিরমিনো। বাকি গোলদাতা মানে। মানের একটি গোল অফসাইডের কারণে বাতিল হয়। আরও কয়েকট্ িসহজ সুযোগ নষ্ট হয়। তা না হলে হয়তো আরও গোলের মালা উপহার পেতো রোমের ক্লাবটি। এই নিয়ে রোমা চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগের এ্যাওয়ে ম্যাচে পরাজিত হলো। এই সময়ে তারা হজম করেছে ১৩টি গোল। দারুণ জয়ের পর লিভারপুল ফাইনালের পথে এগিয়ে গেলেও শেষদিকে এসে দু’টি এ্যাওয়ে গোল করায় আশা বাঁচিয়ে রেখেছে রোমা। দ্বিতীয় লেগে নিজেদের মাঠে ৩-০ গোলে জিততে পারলে ফাইনালে উঠে যাবে ইতালিয়ান ক্লাবটি। এর আগে কোয়ার্টার ফাইনালে বার্সিলোনার বিপক্ষে প্রথম লেগে ৪-১ গোলে পিছিয়ে থেকেও চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ম্যাচ উপহার দিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছিল রোমা। ম্যাচ শুরুর ১৮ মিনিটেই এ্যালেক্স-অক্সলেড চেম্বারলেইনের ইনজুরি লিভারপুলকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছিল। ইনজুরির কারণে মাঠ ছাড়া এই ইংলিশ মিডফিল্ডারের সামনে এখন বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে সাময়িক এই ধাক্কা ভালভাবেই সামলে ওঠে জার্গেন ক্লপের দল। ১৯ মিনিটে আলেক্সান্ডার কোলারোভের দূরপাল্লার শট গোলরক্ষক লোরিস করিয়াসকে পরাস্ত করলেও ক্রসবারে লেগে ফেরত আসে। ফলে এগিয়ে যেতে পারেনি অতিথি রোমা। মূলত এরপর থেকেই ধীরে ধীরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের করে নেয় স্বাগতিকরা। সালাহ, ফিরমিনো, মিলনারদের একের পর এক আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে অতিথিরা। গত বছর ৪২ মিলিয়ন ইউরোতে লিভারপুলের কাছে ছেড়ে দেয়া সালাহই সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে প্রথম গোল করেন। ৩৬ মিনিটে গোল এরিয়ার মধ্য থেকে দারুণ এক কার্লিং শটে গোলপোস্টের টপকর্নারে বল পাঠিয়ে লিভারপুলকে এগিয়ে দেন মিসরীয় তারকা। ব্রাজিলের এক নম্বর গোলরক্ষক এ্যালিসন দারুণ ফর্মে থাকলেও সালাহ’র এই গোলে তার কিছুই করার ছিল না। বিরতির ঠিক আগ মুহূর্তে অনেকটা এগিয়ে আসা এ্যালিসনকে পরাস্ত করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন সালাহ। বিরতির পর ৫৬ মিনিটে হ্যাটট্রিকের সুযোগ পেয়েও সতীর্থ মানের দিকে বল বাড়িয়ে দেন সালাহ। সেই পাস থেকে মানে কোন ভুল করেননি মানে। ম্যাচের ৬১ মিনিটে তার ক্রসেই ফিরমিনো দলের পক্ষে চতুর্থ গোল করেন। ৬৮ মিনিটে জেমস মিলনারের কর্নারে ফিরমিনোর হেডে স্বাগতিকরা ৫-০ গোলে এগিয়ে যায়। এটি চলতি মৌসুমে লিভারপুলের ভয়ঙ্কর ত্রয়ী আক্রমণভাগের সবমিলিয়ে ৮৮তম গোল। ম্যাচ শেষের ১৫ মিনিট আগে সালাহকে মাঠ থেকে উঠিয়ে নেয়ার ক্লপের সিদ্ধান্ত ব্যুমেরাং হয়ে দেখা দেয়। সালাহ’র অনুপস্থিতিতে ৮১ মিনিটে এডিন জেকো রোমাকে প্রথম গোল উপহার দেন। এটি মৌসুমে তার ২১তম গোল। এরপর ৮৫ মিনিটে মিলনারের হ্যান্ডবল থেকে প্রাপ্ত পেনাল্টিতে দিয়াগো পেরোট্টি দ্বিতীয় গোল করেন অতিথিদের হয়ে। লিভারপুল তাদের সুযোগগুলো নষ্ট করার পাশাপাশি শেষের দিকে রক্ষণভাগের ব্যর্থতায় পিছিয়ে পড়লেও ১১ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলার পথে ভালভাবেই এগিয়ে গেছে। ম্যাচ শেষে দলটির কোচ জার্গেন ক্লপ বলেন, অবশ্যই আমরা যদি ৫-০ কিংবা ৫-১ গোলে জিততাম তবে আরও বেশি খুশি হতাম। কিন্তু ৫-২ ব্যবধানও দারুণ ফলাফল। আমরা সেখানে যাব ও নিজেদের যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আমরা যে গোলগুলো করেছি তার থেকে আরও বেশি গোলের সুযোগ পেয়েছিলাম। এটাই এই ম্যাচের ইতিবাচক দিক। সালাহকে প্রশংসায় ভাসিয়ে ক্লপ বলেন, কোন সন্দেহ নেই, সালাহ যেভাবে খেলছে তাতে এই মুহূর্তে তাকে বিশ্বসেরা ফুটবলার বলা যেতেই পারে। ওর প্রথম গোলটার কোন বিশ্লেষণ হয় না। সাবেক ইংলিশ তারকা সালাহর এমন পারফর্মেন্সের পর তাকে ব্যালন ডি’অরের প্রধান দাবিদার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। রোমা কোচ ইউসেবিও ডি ফ্রান্সেসকো বলেন, এই গোল দুটি আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। এ কারণেই ফিরতি ম্যাচটিতে লড়াই করার আশা থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি ফুটবলে সবকিছুই সম্ভব। বার্সিলোনার বিপক্ষে ম্যাচের থেকে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ম্যাচ। সবকিছুর পরও জয়ের লক্ষ্যেই আমরা মাঠে নামব।
×