রুমেল খান ॥ খেলোয়াড়ী জীবন খুব বেশিদিনের নয়। খেলা ছাড়ার পর অনেকেই হন ব্যবসায়ী, কেউ ধারাভাষ্যকার, কেউ কোচ, কেউ কর্মকর্তা, কেউ সংগঠক বনে যান। জাহিদ হাসান এমিলিও তেমনই কিছু হবেন। জাতীয় দলে বহুবার খেলা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অভিজ্ঞ এই ফরোয়ার্ডের বেলায় অবশ্য ‘হবেন’ শব্দটি না লিখে বরং এখনই ‘হয়েছেন’ লেখা যায়। সেটা কিভাবে?
আজ থেকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে ১২ দলের অংশগ্রহণে ‘ওয়ালটন অ-১৮ ফুটবল টুর্নামেন্ট’। এতে অংশ নেবে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডও। আর এই দলের ম্যানেজারের ভূমিকায় দেখা যাবে ৩০ বছর বয়সী এমিলিকে। জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে পিরোজপুরে জন্ম নেয়া ৫ ফুট ৬ ইঞ্চির অধিকারী এমিলি জানান, ‘খেলা ছাড়ার পর ফুটবল সংগঠক হওয়ার ইচ্ছা আছে। এই ইচ্ছার কথা মোহামেডানের ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবু ভাই আগে থেকেই জানতেন। তিনিই আমাকে প্রস্তাব দিয়েছেন, এই মৌসুমে যেহেতু কোন খেলা নেই, তাই অ-১৮ ফুটবল টুর্নামেন্টে মোহামেডানের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতে। এভাবেই মূলত সম্পৃক্ত হওয়া। দল হিসেবে মোহামেডান বড় এবং ঐতিহ্যবাহী দল। তাই এখানে কাজ করতে পারলে আমার অনেক কিছু শেখা হবে, অভিজ্ঞতাও হবে।’
তবে ভবিষ্যতে কখনও কোচ হবেন না এটা নিশ্চিত করেছেন এমিলি। ‘যেটা হতে পারি তা হলো কোন ক্লাব বা বাফুফের কর্মকর্তা (এক্ষেত্রে নির্বাচন করে আসতে হবে)। সেখান থেকে ফুটবলে কাজ করতে পারি।’
এমিলি নিজেও বয়সভিত্তিক ফুটবল খেলে এই পর্যন্ত এসেছেন। বাফুফের অ-১৮ ফুটবল টুর্নামেন্টে মোহামেডান দলটি কেমন হয়েছে? ‘আমার কাছে মনে হয়েছে মোহামেডান দলে অনেক মেধাবী খেলোয়াড় আছে। অল্প কিছু খেলোয়াড় নেয়া হয়েছে তৃতীয় বিভাগ থেকে, বেশিরভাগই নিয়েছি ট্রায়ালের মাধ্যমে। এই খেলোয়াড়দের ভবিষ্যত আমাদের হাতে, আমরা কিভাবে তাদের কাজে লাগাব তার ওপর। যদি তাদের এই আসর খেলিয়ে তাদের দুই-তিনজনকে সিনিয়র দলে অন্তর্ভুক্ত করে বাকিদের ছেড়ে দিই তাহলে এদের অনেকেই হারিয়ে যাবে। পরের কোন ধাপে গিয়ে খেলতে পারবে না। এমনটা যেন না হয়, এ জন্য উচিত হবে এই খেলোয়াড় সবাইকে অন্তত দুই বছর ধরে রাখা। সেক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে একটি কার্যকর চুক্তি করা আবশ্যক। এতে করে খেলোয়াড়রা যেমন লাভবান হবে তেমনি উপকৃত হবে ক্লাবও। অ-১৮ পর্যায়ে খেলা মানেই সিনিয়র বা জাতীয় দলে খেলার হাতছানি। আমাদের উচিত তাদের এই সুযোগটা করে দেয়া।’ যেহেতু এমিলি আগামী মৌসুমেও মোহামেডানে খেলবেন বলে চুক্তিবদ্ধ, সেহেতু মোহামেডানের অ-১৮ দল নিয়ে তার পরিকল্পনা হচ্ছেÑ এই দল থেকে তিন-চার ফুটবলারকে আগামী মৌসুমে মোহামেডানের সিনিয়র দলে খেলানোর। এমন কিছু খেলোয়াড়কে ইতোমধ্যেই তার পছন্দ হয়েছে। গত মৌসুমে মোহামেডান সিনিয়র দলে অ-১৮ বছর বয়সী ফুটবলার ছিল তিনজন। তারা পরে জাতীয় দলেও খেলেছে। এবারও তাই থাকবে বলে আশা করেন তিনি।
মোহামেডানের অ-১৮ দলগঠন প্রক্রিয়ায়ও ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন এমিলি। ট্রায়ালের সময় কোচ রাশেদ আহমেদ পাপ্পুর সঙ্গে খেলোয়াড় বাছাই করেছেন। ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে তৃতীয় বিভাগ উপেক্ষা করে যারা একদম নতুন তাদেরই বেছে নেয়ার চেষ্টা করেছি।’ এমিলির ভাষ্য। মোহামেডানের সিনিয়র দলের কী অবস্থা? এমিলির ভাষ্য, ‘দলগঠন প্রক্রিয়া অনেকদূর এগিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ১০-১২ ফুটবলারের সঙ্গে পাকা কথা হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে থাকবে বেশকিছু জুনিয়র খেলোয়াড়। এবার দলে জুনিয়রই সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবে। সিনিয়র খেলোয়াড় থাকবে মাত্র পাঁচ-সাতজন। মোটকথা আমাদের দল হবে তারুণ্যনির্ভর।’ জাহিদ হোসেন এবং মামুনুল ইসলামের মোহামেডানে যোগ দেয়ার গুজব প্রসঙ্গে এমিলি বলেন, ‘মামুনুলের বিষয়ে কিছু জানি না। তবে জাহিদের মোহামেডানে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা আছে বলে শুনেছি। সঙ্গে আতিকুর রহমান মিশু, মিঠুন চৌধুরী, লেফটব্যাক শাকিলও আসতে পারে।’ মারাত্মক ইনজুরি এবং সার্জারির কারণে গত মৌসুমে আনফিট থাকায় বলতে গেলে প্রিমিয়ার লীগ খেলতেই পারেননি। ‘এখন আমি সম্পূর্ণ ফিট। আশাকরি আগামী মৌসুমে ভালভাবেই খেলতে পারব এবং শততম লীগ-গোল করার স্বপ্ন পূরণ করতে পারব।’ মজা করে এমিলি আরও যোগ করেন, ‘শততম লীগ-গোল না করে কিন্তু খেলা ছাড়ছি না।’ ১৯১৫ থেকে ২০১৭। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে যত লীগ অনুষ্ঠিত হয়েছে বা এই লীগগুলোতে যত ফুটবলার খেলেছেন, তাদের মধ্যে লীগে কমপক্ষে ১০০ গোল করেছেন মাত্র চারজন। এদের সবাই স্বাধীন বাংলাদেশ আমলের ফুটবলার। তারা হলেন : কাজী মোঃ সালাউদ্দিন, শেখ মোঃ আসলাম, ইমতিয়াজ আহমেদ জান, নকীব এবং আলফাজ আহমেদ। ১৭৭ গোল করে শীর্ষে আছেন আসলাম।
২০০৩ সাল থেকে লীগ খেলে আসছেন এমিলি। তার ভাষ্যমতে বি লীগ, বাংলাদেশ লীগ এবং বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ... সব লীগ মিলিয়ে এ পর্যন্ত গোল করেছেন ৮৫টি। এখন দেখার বিষয়, অবসর নেয়ার আগে লীগে নিজের শততম গোলটি করার স্বপ্নপূরণ করতে পারেন কি না এবং ফুটবল সংগঠক হিসেবে নতুন ক্যারিয়ার গঠনে সফলকাম হন কি না এমিলি।