ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বন্দর দিবসে বর্ণাঢ্য সাজ, উৎসব আমেজ

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৬ এপ্রিল ২০১৮

চট্টগ্রাম বন্দর দিবসে বর্ণাঢ্য সাজ, উৎসব আমেজ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ উৎসব আমেজ ও ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে বুধবার উদযাপিত হয়েছে ‘চট্টগ্রাম বন্দর দিবস।’ সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার খ্যাত এই বন্দরের ১৩১ বছর পূর্তিতে সংলগ্ন এলাকা ছিল আনন্দমুখর। বছরের এ একটি দিনের জন্য প্রতীক্ষায় থাকেন বন্দর এবং বন্দর সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিকরা। কর্মসূচীর মধ্যে ছিল ৩০ সহস্রাধিক মানুষের জন্য ভোজের আয়োজন, মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা, আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাত অবধি ছিল বন্দর দিবসের নানা অনুষ্ঠান। ইতিহাস ও বিভিন্ন দলিল পর্যবেক্ষণে দেখা যায় চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাস সুপ্রাচীন। খ্রিস্টপূর্ব ৪ শতাব্দীতেও চট্টগ্রাম হতে জাহাজের সমুদ্রপাড়ির কথা জানা যায়। পরবর্তীতে আরব ও ইয়েমেনী বণিকরা এবং আরও পরে ক্রমান্বয়ে চায়নিজ, পর্তুগীজ, ডাচ্ এবং ব্রিটিশরাও এই বন্দর ব্যবহার করেছে। তৎকালীন ব্রিটিশ-ইন্ডিয়া সরকার ১৮৮৭ সালে পোর্ট কমিশনারস এ্যাক্ট প্রণয়ন করে, যা ১৮৮৮ সালের ২৫ এপ্রিল কার্যকর হয়। তখন থেকেই চট্টগ্রাম বন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। সে কারণে প্রতিবছর ২৫ এপ্রিল পালিত হয় বন্দর দিবস হিসেবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানান, দুপুরে বন্দরের পক্ষ থেকে ছিল ১২ হাজার মানুষের ভোজের আয়োজন। কর্মকর্তা কর্মচারী এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা এতে যোগ দেন। দু’দিনের উৎসব শুরু হয় আগের দিন মঙ্গলবার থেকে। প্রথম দিনে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আজিজ বন্দরের কার্যক্রম, বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনাগুলো নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এদিন গত এক বছরে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। বুধবার ভোজের আয়োজন ছাড়াও ছিল মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা এবং খ্যাতিমান শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেডের উদ্যোগে আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের সিটি কনভেনশন হলে আয়োজন করা হয় মেজবানের। সেখানে প্রায় ৮ হাজার মানুষের ভোজের ব্যবস্থা হয়। সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের কর্ণধার তরফদার রুহুল আমিন জানান, বন্দর দিবসে গত দশ বছর ধরেই তারা মেজবানের আয়োজন করে আসছেন। চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়াও বার্থ অপারেটর, শিপিং এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশন, শিপ হ্যান্ডলিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ বন্দর ব্যবহারকারী সকল প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে আলাদা আলাদা আয়োজন ছিল। প্রত্যেকটি সংস্থাই নিজ নিজ শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য মেজবানের আয়োজন করে। বন্দর এবং সকল সংস্থা মিলে যে মহা আয়োজন তাতে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ ভোজে আপ্যায়িত হয়েছেন। চট্টগ্রাম বন্দর দিবসকে কেন্দ্র করে বুধবার বর্ণিল সাজে সেজেছিল বন্দর ভবন এবং সংলগ্ন এলাকা। রাতের আলোকসজ্জায় উদ্ভাসিত হয় চারপাশ। বিভিন্ন রঙের পতাকায় শোভিত করা হয় সড়কগুলো। জেটিতে অপেক্ষমাণ জাহাজগুলোও ছিল সুশোভিত। সকালে সকল জাহাজ থেকে একযোগে সাইরেন বাজিয়ে বন্দর দিবসের আনুষ্ঠানিকতার সূচনা করা হয়। প্রসঙ্গত, দেশে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সিংহদ্বার এই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিবাহিত হয় দেশের আমদানি-রফতানির প্রায় ৯২ ভাগ পণ্য। সারাবছরই খোলা থাকে চট্টগ্রাম বন্দর। একটি দিনের জন্যও বন্ধ নয়। বছরের দুটি ঈদে শুধুমাত্র নামাজের জন্য সকালের শিফটে কাজ বন্ধ রাখা হয়। বিকেল থেকে সেই স্বাভাবিক কর্মযজ্ঞ। সঙ্গত কারণেই বছরের এই একটি দিন বন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য বড়ই আনন্দের।
×