ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গাজীপুরে উৎসবমুখর পরিবেশ, ঘরে ঘরে যাচ্ছেন প্রার্থীরা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৬ এপ্রিল ২০১৮

গাজীপুরে উৎসবমুখর পরিবেশ, ঘরে ঘরে যাচ্ছেন প্রার্থীরা

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, গাজীপুর, নূরুল ইসলাম টঙ্গী ও অমল সাহা, খুলনা থেকে ॥ উৎসবমুখর পরিবেশে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রচার শুরু করেছেন প্রার্থীরা। প্রতীক বরাদ্দের পর ক্রমেই জমে উঠছে এ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। শহরের অলিগলি, বাজার, রাস্তার পাশে টানানো হয়েছে নির্বাচনী পোস্টার। এলাকায় এলাকায় মাইকিং, হ্যান্ডবিল দিয়ে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে রয়েছেন সমর্থক ও কর্মীরা। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে নির্বাচনী ক্যাম্প। এলাকায় ঘরে ঘরে ঘুরে ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন, দোয়া চাইছেন প্রার্থীরা। এদিকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন অপরাধমূলক মামলার আসামিরা নির্বাচনী এলাকায় প্রবেশ করে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে প্রচার করছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী। এছাড়াও তিনি গণতন্ত্রের স্বার্থে, ভোটারদের স্বার্থে, এলাকার মানুষের জানমালের স্বার্থে এক মঞ্চে এমনকি একই গাড়িতে করে নির্বাচনী প্রচার চালাতে বিএনপির মেয়র প্রার্থীকে আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে নাগরিক সুবিধাকে প্রাধান্য দিয়ে তালুকদার আবদুল খালেক ৩১ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন বুধবার। বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার গাছা এলাকার স্থানীয় আনু মার্কেট থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। এ সময় গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ধানের শীষ প্রতীকের মিডিয়া সেলের প্রধান ডাঃ মাজহারুল আলম, জেলা বিএনপির সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক সাবেক কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদর চেয়ারম্যান শওকত হোসেন সরকার, গাছা সাংগঠনিক থানা বিএনপির সভাপতি মোশারফ হোসেন খান, তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মমতাজ উদ্দিন, কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, গাছা সাংগঠনিক থানা জামায়াতের আমির মোতালিব হোসেন, যুবদল নেতা জিল্লুর রহমানসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আয়োজিত এক পথসভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে হাসান উদ্দিন সরকার প্রার্থীদের মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সকল অপরাধের মূল হলো মিথ্যাচার করা। মিথ্যাচারের মাধ্যমে জনগণ বিভ্রান্ত হয়। আল্লাহর পরে স্থান হচ্ছে জনগণের। সুতরাং জনগণ বিভ্রান্ত হলে মানুষ বিপদগ্রস্ত হবে। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অধিকার আমারও নেই, অন্য কারো নেই। এছাড়া হাসান উদ্দিন সরকার স্থানীয় রশিদ মার্কেট, ইছর কান্দি, কাথোরা, কলমেশ^র এলাকায় নির্বাচনী প্রচার চালান। পথে একাধিক পথসভায় তিনি বক্তব্য রাখেন। অপরদিকে ছয়দানা এলাকায় নিজ বাসভবনে সকাল থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম দলীয় নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের নির্বাচনী ভাবনা নিয়ে সাক্ষাতকার দেন। এর আগে জাহাঙ্গীর আলম মহিলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির রুহুল আমিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নাসির উদ্দিন, ইসলামী ঐক্যজোটের ফজলুর রহমান, ইসলামী ফ্রন্টের জালাল উদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ উদ্দিনসহ ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও এলাকায় গণসংযোগ করে ভোট চাইছেন। বিএনপি প্রার্থীকে একমঞ্চে আহ্বান ॥ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন অপরাধমূলক মামলার আসামিদের নির্বাচনী এলাকায় প্রবেশ করে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। বুধবার দুপুরে মহানগরের ছয়দানা এলাকার বাড়িতে প্রেস ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন। বিএনপি প্রার্থীর উদ্দেশে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে, ভোটারদের স্বার্থে, এলাকার মানুষের জানমালের স্বার্থে এক মঞ্চে এমনকি একই গাড়িতে করে নির্বাচনী প্রচার চালাতে বিএনপি প্রার্থীর প্রতি আহ্বান জানান। ভবিষ্যতে কেউ যেন এ দেশে জ্বালাও-পোড়াও করতে না পারে সেজন্য তিনি অন্যান্য প্রার্থীর পাশাপাশি বিএনপি প্রার্থীকে জোরালোভাবে এক মঞ্চে কাজ করার আহ্বান জানান। এতে করে জনগণ খুব সহজে তাদের যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছর গাজীপুর সিটিতে বিএনপি-জামায়াত জোটের মনোনীত প্রার্থী প্রতিনিধিত্ব করেছে। প্রথম দুই বছর বিএনপি এবং তাদের লোকজনের নেতৃত্বে ওই প্রার্থী কাজের যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছে। যে দেশ ৯ মাস যুদ্ধ করে স্বাধীনতা লাভ করে সেদেশে পাঁচ বছর অনেক সময়। কিন্তু তারা কোন উন্নয়ন কাজ করেনি। তারা শুধু, রাজনীতি, সরকার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগকে কীভাবে ছোট করা যায় সেই কৌশলগুলো প্রয়োগ করেছে। বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের ব্যক্তিগত সহকারী কিবরিয়া হাসান জনি বলেন, একই মঞ্চে আহ্বানকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে এদেশে এরকমভাবে কোনো নির্বাচন হয়নি। গণতন্ত্রের চর্চা এ দেশে নেই। হাসান উদ্দিন সরকার দীর্ঘদিন রাজনীতি করছেন। এখনও করছেন। দুইবার টঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, দুই বার সাংসদ এবং গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার নির্বাচনী কার্যক্রম অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে অনেকটা তারই মতো হবে। বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে বর্তমান সরকার নানা ধরনের মিথ্যা মামলায় ঝুলিয়ে হয়রানি করেছে। কোন চাঁদাবাজ, খুনী আমাদের সঙ্গে নেই। তিনি মূলত জনগণকে প্রভাবিত করার জন্য নানারকম কথা বার্তায় আহ্বান করছেন। জাহাঙ্গীরের কর্মী খরচ ৫ লাখ, হাসান সরকারের ২ লাখ ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের হলফনামায় নির্বাচনী ব্যয় দেখিয়েছে ৩০ লাখ টাকা এবং বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের ২০ লাখ টাকা নির্বাচনী ব্যয় দেখিয়েছেন। তার মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম তার ৩ হাজার ৪২০ কর্মীর জন্য আপ্যায়ন খরচ ৫ লাখ ১৩ হাজার টাকা এবং হাসান উদ্দিন সরকার ৫৭০ কর্মীর জন্য আপ্যায়ন খরচ দেখিয়েছেন দৈনিক ২ লাখ ২৮ হাজার টাকা। বাস্তবে একদিনেই ওই সংখ্যা ও খরচের পরিমাণ অতিক্রম হচ্ছে। খুলনা ॥ খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক নির্বাচনী ৩১ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। ইশতেহারে জলাবদ্ধতামুক্ত আধুনিক পরিচ্ছন্ন নগর গড়া এবং সর্বাধিক নাগরিক সুবিধা ও সেবাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। বুধবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবির বালু মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ইশতেহার ঘোষণা করেন। এ সময় খালেক বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম কাজ হবে খুলনা মহানগরীকে মাদক ও চাঁদাবাজ মুক্ত করা। ইশতেহার ঘোষণার পর সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, কেসিসির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হলেও নির্বাচিত হয়ে সিটি গবর্নমেন্ট ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চান। কারণ কেসিসি, ওয়াসাসহ নগরীর উন্নয়নে কাজ করা প্র তিষ্ঠানগুলোর সমন্বয় করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ইজিবাইকে চাঁদাবাজি অব্যাহত রয়েছে। সব ধরণের চাঁদাবাজি বন্ধ ও মাদক নির্মূল করতে ভূমিকা পালন করবেন তিনি। পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকর সহযোগিতা পেলে এ শহর থেকে ৬ মাসের মধ্যে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, তার সকল কাজে স্বচ্ছতা থাকবে। স্বচ্ছতার জন্যই তিনি অনেকের কাছে অপ্রিয় ছিলেন। মেয়র থাকাকালে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করে ছিলেন উল্লেখ করে খালেক বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ করে দেবেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী শেখ হারুনুর রশীদ, সমন্বয়কারী ও কেন্দ্রীয় নেতা এস এম কামাল হোসেন, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক কাজী আমিনুল হক, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক শেখ সোহেল, মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মকবুল হোসেন মিন্টু, সাবেক এমপি সোহরাব আলী সানা, সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাভোকেট মোঃ সাইফুল ইসলাম, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট সরদার আনিসুর রহমান পপলু প্রমুখ। ধানের শীষে ভোট চাইলেন গয়েশ্বর ॥ কেসিসি নির্বাচনে খুলনাবাসীর কাছে ধানের শীষে ভোট চাইলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এ সময় তিনি বলেন, এই ভোটে ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটবে না। কিন্তু দেশমাতাকে কারামুক্ত করতে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে এবং মানুষের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে দেশের দুই সিটিতে বিজয়ের কোন বিকল্প নেই। বুধবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর সিটি কলেজ মোড় থেকে গণসংযোগ শুরু করেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তারা সিটি কলেজ, রয়্যাল মোড়, সাত রাস্তার মোড়, ২১নং ওয়ার্ডের গ্রিনল্যান্ড বস্তি এবং পরে আইনজীবী সমিতিতে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেন। খালেককে সমর্থন নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের ॥ খুলনা মহানগর নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের ২১ দফা দাবি উত্থাপন ও সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে তালুকদার আব্দুল খালেকের সমর্থনে বুধবার প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে নগরীর কেডিএ এভিনিউকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিনিউ নামকরণ করা, বিভিন্ন সড়ক ও স্থাপনার নাম জাতীয় পর্যায়ের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নানে, ভাষা সৈনিক ও বিশিষ্টজনদের নামে নামকরণসহ খুলনার উন্নয়নে ২১ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের আহ্বায়ক ডাঃ শেখ বাহারুল আলম পরিষদের পক্ষ থেকে তালুকদার আব্দুল খালেককে সমর্থন জানিয়ে বলেন, ১৯৯০ সালে খুলনা সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয়। সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার পর গত ২৮ বছরে বিএনপির দুই নেতা ২৩ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। এই দুই জনের মধ্যে মরহুম শেখ তৈয়েবুর রহমান একটানা ১৭ বছর এবং মনিরুজ্জামান মনি ভারপ্রাপ্ত ও নির্বাচিত মেয়র হিসেবে প্রায় ৬ বছর। আওয়ামী লীগের মেয়র ছিলেন মাত্র ৫ বছর। ওই ৫ বছরে আওয়ামী লীগ নেতা তালুকদার আব্দুল খালেক মেয়র হিসেবে নগরবাসীর সামনে যে উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেছিলেন তা এত উজ্জ্বল তাকে অন্যদের সামনে দাঁড় করানো সম্ভব নয় বলে আমরা মনে করি।
×