ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোতে প্রায় ১৪২ কোটি ৭৯ লাখ শেয়ার রয়েছে বিদেশীদের

বিদেশীরা ছেড়ে দিচ্ছেন ব্যাংকের শেয়ার

প্রকাশিত: ০৪:১২, ২৬ এপ্রিল ২০১৮

বিদেশীরা ছেড়ে দিচ্ছেন ব্যাংকের শেয়ার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংক খাতে চলমান অস্থিরতার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক কোম্পানির শেয়ারে বিদেশীদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। ইসলামী ব্যাংকসহ সাতটি ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য শেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। অবশ্য চার ব্যাংকে তাদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। মার্চ শেষে বিদেশীদের বিনিয়োগ নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তৈরি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকে বিদেশীদের বিনিয়োগ নেই। বাকি ২৫টি ব্যাংকের শেয়ারে বিদেশীদের বিনিয়োগ রয়েছে। মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর প্রায় ১৪২ কোটি ৭৯ লাখ শেয়ার বিদেশীদের কাছে রয়েছে। এক মাস আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে বিদেশীদের কাছে ব্যাংকের শেয়ার ছিল প্রায় ১৪৬ কোটি ৫০ লাখ। সে হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন ব্যাংকের তিন কোটি ৭১ লাখ শেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমান বাজার দরে বিদেশীদের ছেড়ে দেয়া শেয়ারের মূল্য প্রায় ২৪ কোটি টাকা। বর্তমান বাজার দরে তালিকাভুক্ত ২৫টি ব্যাংকের শেয়ারে বিদেশীদের প্রায় পাঁচ হাজার ৭২৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে এ বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ৭৪৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। বিদেশীরা যে সাতটি ব্যাংকের শেয়ারের কিছু অংশ ছেড়ে দিয়েছেন এর মধ্যে রয়েছে- ইসলামী ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক। বিদেশীরা সবচেয়ে বেশি ছেড়েছেন ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার। এক মাসের ব্যবধানে তারা ব্যাংকটির এক শতাংশ শেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন। বিদেশীদের ছেড়ে দেয়া এ শেয়ারের সংখ্যা প্রায় ৪৩ কোটি ১৫ লাখ। মার্চ শেষে ইসলামী ব্যাংকের ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ শেয়ার বিদেশীদের কাছে আছে, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ২৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এছাড়া সিটি ব্যাংকের দশমিক ৫৫ শতাংশ, ন্যাশনাল ব্যাংকের দশমিক ৩৮ শতাংশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের দশমিক ২১ শতাংশ, সাউথ ইস্ট ব্যাংকের দশমিক ১৯ শতাংশ, ওয়ান ব্যাংকের দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ এবং আইএফআইসি ব্যাংকের দশমিক শূন্য ১ শতাংশ শেয়ার বিদেশীরা ছেড়ে দিয়েছেন। অপরদিকে বিনিয়োগ বাড়া চার ব্যাংকের মধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের দশমিক ৯১ শতাংশ, ব্র্যাক ব্যাংকের দশমিক ৪৯ শতাংশ, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ এবং প্রাইম ব্যাংকের দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ শেয়ার বিদেশীরা নতুন করে কিনেছেন। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিদেশীদের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারে। ব্যাংকটিতে বিদেশীদের প্রায় তিন হাজার ১৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটিতে বিদেশীদের প্রায় এক হাজার ১৩৭ কোটি ৮১ লাখ টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। এ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোতে বিদেশীদের যে বিনিয়োগ আছে তার ৭৫ শতাংশই আছে ওই দুটি ব্যাংকে। বাকি ব্যাংকগুলোর মধ্যে বিদেশীদের ১০০ কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ আছে চারটিতে। এর মধ্যে সিটি ব্যাংকে প্রায় ৪১৯ কোটি, সাউথ ইস্ট ব্যাংকে ১১৪ কোটি, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ১০৯ কোটি এবং ওয়ান ব্যাংকে ১০৫ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ রয়েছে। ৫০ কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে এক্সিম ব্যাংকে ৮৯ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকে ৮৭ কোটি, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে ৮৬ কোটি এবং প্রাইম ব্যাংকে ৮৩ কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ রয়েছে। এছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ৪৫ কোটি, ট্রাস্ট ব্যাংকে ৪১ কোটি, ইউসিবিতে ৩৭ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংকে ৩৬ কোটি, পূবালী ব্যাংকে ৩৩ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে ২৫ কোটি, উত্তরা ব্যাংকে ২৪ কোটি, এবি ব্যাংকে ২৪ কোটি, এনসিসি ব্যাংকে ২০ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে ২০ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংকে ১৫ কোটি, ব্যাংক এশিয়ায় ১৩ কোটি, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে পাঁচ কোটি, ডাচ-বাংলা ব্যাংকে চার কোটি এবং ঢাকা ব্যাংকে দুই কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ আছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। অযৌক্তিকভাবে সরকারের নির্দেশনায় ব্যাংকের সিআরআর কমানো হয়েছে। এটি আর্থিক খাতের জন্য খুব একটা ভালো লক্ষণ নয়। তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সাতটি ব্যাংকের কিছু শেয়ার বিদেশীরা ছেড়ে দিয়েছেন। সুতরাং বিদেশীরা ব্যাংকের খুব বড় অংকের শেয়ার ছাড়েননি। এ নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের খুব বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বখতিয়ার হাসান বলেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীরা কোন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বিনিয়োগের আগে ওই কোম্পানির সার্বিক তথ্য যাচাই-বাছাই করেন। বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের ব্যাংকিং খাতে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। ব্যাংক খাতের অনিয়ম নিয়ে গণমাধ্যমে প্রায় সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। এর অর্থ হলো আমাদের ব্যাংকিং খাত খুব একটা ভাল অবস্থানে নেই। এ কারণেই হয়তো বিদেশী বিনিয়োগকারীরা কিছু কিছু ব্যাংকের শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছেন।
×