ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রেমিটেন্স বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২৬ এপ্রিল ২০১৮

রেমিটেন্স বাড়ছে

বিশ্বব্যাপী রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধির সুসংবাদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির মতে, ২০১৭ সাল ছিল প্রবাসী আয় বৃদ্ধির এক উজ্জ্বল বছর, যা অব্যাহত থাকতে পারে ২০১৮ সালেও। গত বছর সারা বিশ্বে প্রবাসী আয় বেড়েছে সাড়ে ৮ শতাংশ, যার পরিমাণ ৪৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি বছর এর পরিমাণ বাড়তে পারে আরও চার শতাংশ। এর ফলে দরিদ্র ও অনুন্নত দেশগুলো উপকৃত এবং উন্নত হচ্ছে। রেমিটেন্স প্রবাহের তালিকায় শীর্ষে আছে ভারত, দ্বিতীয় চীন, তৃতীয় ফিলিপিন্স ও চতুর্থ মেক্সিকো। এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নবম, তবে দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয়। এও সত্য যে, এই অবস্থা আর বেশিদিন থাকবে না। কেননা উন্নত বিশ্বে দক্ষ ও প্রযুক্তিভিত্তিক জনশক্তির চাহিদা বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে উন্নত শিল্প কারখানাগুলোতে শ্রমিকের স্থান দখল করে নিচ্ছে রোবট ও কম্পিউটার। সেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশকে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই। দেশেই তৈরি করতে হবে দক্ষ মানবসম্পদ। উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তৈরিতে চাই দক্ষ মানবসম্পদ। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বর্তমানে দেশে দক্ষ মানবসম্পদের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। গত কয়েক বছরে শিক্ষার হার জ্যামিতিক গতিতে বাড়লেও সেই অনুপাতে দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদ তৈরি হয়নি। ১৬ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত একটি দেশে যেই পরিমাণ প্রকৌশলী, ডাক্তার, নার্স, প্রযুক্তিবিদ, আইটি বিশেষজ্ঞ এমনকি বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক প্রয়োজন, সেই পরিমাণে বিশেষজ্ঞ, নিদেনপক্ষে দক্ষ মানবসম্পদ নেই। অথবা গড়ে ওঠেনি আজ পর্যন্ত। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় যে, কোনরকমে একটি স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিয়ে বেরিয়ে পড়ে কেরানীর চাকরি খুঁজতে। গত কয়েক বছরে প্রায় এককোটি বাংলাদেশী নাগরিক সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছেন চাকরি-বাকরি অথবা শ্রম বিক্রির উদ্দেশ্যে। তাদের মধ্যেও যে দক্ষমানব সম্পদ আছে এমন কথা বলা যাবে না কিছুতেই। বরং অধিকাংশই অদক্ষ, বড় জোর আধাদক্ষ শ্রমিক। অনেকে এমনকি ‘অড জবে’ জড়িত। বিদেশে চাকরি জীবন শেষ হলে দেশে ফিরেও তারা তেমন কিছু করতে পারেন না। বিদেশের শ্রমবাজারও বর্তমানে যেমন সংকুচিত হয়ে আসছে, তেমনি কমছে প্রবাসী আয়। সে অবস্থায় টেকসই উন্নয়নে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর সবিশেষ জোর ও গুরুত্বারোপ করা দরকার। বর্তমান সরকারও দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরির জন্য দেশব্যাপী ডিপ্লোমা শিক্ষা তথা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট তৈরিসহ একাধিক কারিগরি বোর্ড স্থাপনে সবিশেষ আগ্রহী। বৈশ্বিক শ্রমবাজার সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি আগামীতে প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশেই দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির বিষয়টি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় কোন দেশেরই অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নয়। বরং তেলের দাম নেমে যাওয়ায় অনেক দেশেরই জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে লক্ষ্য করা যায় নেতিবাচক প্রবণতা। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজমান। তদুপরি আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার রাজনৈতিক, অভিবাসন পরিস্থিতিসহ আইনশৃঙ্খলার অবস্থা খুবই নাজুক। সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় বলতেই হয়, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশই বিনিয়োগের জন্য সর্বাধিক উত্তম ও উপযোগী। দেশে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি বেশ ভাল, প্রায় ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সরকারী-বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে প্রচুর অলস অর্থ পড়ে আছে। ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে সুদহার কমানোর কথাও বলা হচ্ছে। সে অবস্থায় সরকারকে একটি নমনীয় সুদহার নির্ধারণ করে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে। বিদ্যুতের সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। পদ্মা সেতুর অগ্রগতিও আশাব্যঞ্জক। অতঃপর চাই অবকাঠামো উন্নয়ন। সেটি করা সম্ভব হলে এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা গেলে বাংলাদেশী দক্ষ ও আধাদক্ষ শ্রমজীবীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
×