ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশেষ ডিভাইসে এটিএম কার্ডের তথ্য চুরি

প্রকাশিত: ২৩:৫৯, ২৫ এপ্রিল ২০১৮

বিশেষ ডিভাইসে এটিএম কার্ডের তথ্য চুরি

অনলাইন রিপোর্টার ॥ হাতঘড়িতে সংযুক্ত বিশেষ মিনি কার্ড রিডারের মাধ্যমে গ্রাহকের এটিএম কার্ডের অভ্যন্তরীণ তথ্য স্ক্যান করা হতো। তারপর গ্রাহক যখন পিন নম্বর দিতো কৌশলে সেটিও টুকে নেওয়া হতো এবং বিলের রি-প্রিন্ট দিয়ে ওই কপির পেছনে লিখে রাখতো। এভাবেই এটিএম কার্ডের তথ্য চুরি করতো প্রতারক শরিফুল ইসলাম (৩৩)। পাঁচটি ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে শরিফুলকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বুধবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মোল্যা নজরুল ইসলাম। পাঁচটি ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুর থেকে শরিফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে সিআইডি'র অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট। এ সময় তার কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, বিভিন্ন ব্যাংকের ১ হাজার ৪০০টি ক্লোন কার্ড, একটি ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ কার্ড রিডার ও রাইটার, তিনটি পজ মেশিন, সচল ডিজিটাল হাতঘড়ি (গ্রাহকদের তথ্য চুরিতে ব্যবহৃত), দুটি মিনি কার্ড রিডার ডিভাইস, ১৪টি পাসপোর্ট, আটটি মোবাইল ফোনসেট, ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের একটি নেক্সাস ক্রেডিট কার্ড, একটি পরচুলা ও একটি কালো রঙের সানগ্লাস, তিনটি এনআইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়। সিআইডি’র এসএসপি মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মার্চ ২০১৮-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে সংঘটিত পাঁচটি (ব্র্যাক ব্যাংক, সিটিব্যাংক, ইবিএল ব্যাংক, ইউসিবিএল ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া) ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতি ঘটনার তদন্ত হয়। আমরা জানতে পারি, ব্যাংকের গ্রাহকরা বিভিন্ন সুপার শপ ও ডিপার্টমেন্ট স্টোর থেকে পণ্য কেনার পর কার্ড পাঞ্চ করার সময় একটি চক্র সুকৌশলে গ্রাহকদের তথ্য চুরি করে ক্লোন কার্ড তৈরি করে। পর এসব ক্লোন কার্ড দিয়ে এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরি করে নিচ্ছে। সেই অভিযোগে আসামি শরিফুলকে মিরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘তদন্তে আমরা জানতে পারি, প্রতারক শরিফুল ইসলাম ডিপার্টমেন্টাল শপ স্বপ্নের বনানী শাখায় কাজ করতো। তার হাতঘড়িতে থাকা বিশেষ স্ক্যানিং ডিভাইজের মাধ্যমে সে গ্রাহকদের এটিএম কার্ডের তথ্য চুরি করতো। এরপর বাসায় গিয়ে তার ল্যাপটপ এবং ডিভাইসের মাধ্যমে কাস্টমারের তথ্যগুলো ভার্জিন কার্ড বা খালি কার্ডে স্থাপন করে ক্লোন এটিএম কার্ড বানাতো। পরে যেকোনও এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নিতো। বুথে টাকা তোলার সময় সিসি ক্যামেরায় যাতে তাকে চেনা না যায় সে জন্য প্রতারক শরিফুল পরচুলা এবং চশমা ব্যবহার করতো।’ তিনি বলেন, ‘স্বপ্নতে চাকরি করলেও তার মূল পেশা ছিল ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি। এই জালিয়াতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ টাকায় সে বিলাসী জীবনযাপন করতো। সে ব্যক্তিগত চলাচলের জন্য টয়োটা এলিয়ন মডেলের গাড়ি ব্যবহার করে। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে এ পর্যন্ত কয়েক কোটি টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে।’ মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, প্রতারক শরিফুল ইসলাম মেহেরপুরের গাঙনী উপজেলার হেমায়েতপুর গ্রামের ইয়াজ উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে। সে মেহেরপুর হাট বোয়ালীয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০১ সালে এসএসসি এবং গাঙনী ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০০৩ সালে এইচএসসি পাস করে। পরে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটিতে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তিন বছর মেয়াদি ডিগ্রি নিতে যান। ২০১০ সালে বাংলাদেশে ফেরত আসেন। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় তার রাশিয়ান রুমমেট ইভানোভিচের কাছ থেকে ক্রেডিট কার্ড প্রতারণার কৌশল শিখে শরিফুল। দেশে আসার পরপরই সে কার্ড জালিয়াতি শুরু করে। ২০১৩ সালে এই সংক্রান্তে দুটি মামলা হয় এবং সেই মামলায় প্রতারক শরিফুল ১৮ মাসের হাজতবাস করে। এরপর সে কিছু দিনের জন্য স্টুডেন্ট কন্সালটেন্সি ফার্ম খোলে। সেখানে তেমন সুবিধা করতে না পেরে রুমমেটের কাছ থেকে শেখা কৌশল আবারও কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়।’আসামির বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
×