ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডাবল জয়ের স্বপ্ন বার্সিলোনার

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ২৫ এপ্রিল ২০১৮

ডাবল জয়ের স্বপ্ন বার্সিলোনার

স্বপ্ন ছিল অন্তপক্ষে ট্রেবল জয়ের। স্প্যানিশ লা লীগা, কোপা ডেল রে ও উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লীগের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছে বার্সিলোনা। যে কারণে এখন ডাবল জয়ের আকাক্সক্ষা কাতালানদের। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জেতা হয়ে গেছে কোপা ডেল রে। এই সপ্তাহেই শোকেসে ঢুকতে পারে লা লীগার ট্রফি। কোপা ডেল রে’র শিরোপা ‘ঘরোয়া’ বানিয়ে ফেলেছে বার্সিলোনা। এই আসরটিকে এখন কাতালানদের পৈত্রিক সম্পত্তি বললেও হয়ত বাড়িয়ে বলা হবেনা। টানা চতুর্থসহ রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩০তম শিরোপা জিতে সে স্বাক্ষরই রেখেছে দলটি। গত শনিবার রাতে ১১৬তম আসরের ফাইনালে সেভিয়াকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার দল। ১৯৮০ সালের পর কোপা ডেল রে ফাইনালে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয় এটি। সেবার রিয়াল মাদ্রিদ শিরোপা জিতেছিল ৬-১ গোলের ব্যবধানে। এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মাঠ ওয়ান্ডা মেট্রোপালিটানোতে প্রথমার্ধে লিওনেল মেসির একটি ও লুইস সুয়ারেজের দুই গোলে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বার্সা। দ্বিতীয়ার্ধে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা ও ফিলিপ কুটিনহোর আরও দুই গোলে সেভিয়ার বড় হার নিশ্চিত হয়। ২০১৪ সালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ সবশেষ কোপা ডেল রের শিরোপা জয় করে। এরপর হওয়া চারটি আসরেই ট্রফি নিজেদের শোকেসে ভরেছে কাতালান জায়ান্টরা। অবাক করা বিষয় হলো, কোপাতে ট্রফি জয়ে বার্সার আশেপাশেই নেই কোনো দল। বার্সার ৩০তম শিরোপার পর দ্বিতীয় সর্র্বোচ্চ ২৩বার ট্্রফি জিতেছে এ্যাথলেটিক বিলবাও। বিলবাও সবশেষ ট্রফি জিতেছে সেই ১৯৮৪ সালে। আর বার্সার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল ট্রফি জিতেছে মাত্র ১৯বার। পরিসংখ্যানই জানান দিচ্ছে, কোপা ডেল রে তে অপ্রতিরোধ্য, অপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সিলোনা। গত পাঁচ বছরে প্রতিটি ফাইনালেই খেলে বার্সিলোনা। ম্যাচ শেষে মেসি-সুয়ারেজরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরা কিংবা হাই ফাইভ দিয়ে শিরোপা উদযাপন করলেও সবার মনেই আগামী রবিবার ডিপোর্তিভো লা করুনার বিপক্ষে ম্যাচটি নিয়ে চিন্তা। কারণ ম্যাচটি জিততে পারলে লা লীগার শিরোপাও নিশ্চিত হবে বার্সার। সেই সঙ্গে ঘরোয়া মৌসুমে ডাবল শিরোপাও ঘরে আসবে। এবারের লীগ শিরোপাটি হতে পারে বার্সিলোনার জন্য একটু অন্যরকম। প্রথম দল হিসেবে লা লীগায় অপরাজিত থেকে শিরোপা নিশ্চিতের হাতছানি এখন মেসিদের সামনে। আর এটা করতে পারলেই কেবল এএস রোমার কাছে হেরে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ থেকে বিদায়ের হতাশা কিছুটা হলেও কাটবে। এই ম্যাচে গোল করে দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে পাঁচটি কোপা ডেল রে ফাইনালে গোল করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন মেসি। ২০০৯, ২০১২, ২০১৫, ২০১৭ ও ২০১৮ সালের ফাইনালে গোল করেন মেসি। সেভিয়ার বিপক্ষে ফাইনালে গোল করার মাধ্যমে টানা নয় মৌসুম ৪০ বা এর বেশি গোল করেছেন মেসি। তাছাড়া ক্লাব এবং জাতীয় দলের হয়ে ২৭টি ফাইনাল খেলে ২৮টি গোল করেছেন তিনি। পাশাপাশি ১২টি গোলে সহায়তাও করেছেন। এর আগে ১৯৪০ ও ৫০’র দশকে এ্যাথলেটিকো বিলবাওয়ের তারকা টেলমো জারা এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন। যদিও সব মিলিয়ে এই পাঁচটি ফাইনালে মেসির ৬ গোলের থেকে জারার ৮ গোল এগিয়ে আছে। ম্যাচে উরুগুয়ের তারকা সুয়ারেজও দারুণ রেকর্ড গড়েছেন। তিনি বার্সার হয়ে পাঁচটি ভিন্ন প্রতিযোগিতার ফাইনালে গোল করার অসামান্য কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তাছাড়া বার্সার জার্সি গায়ে ১৫০ গোলের মাইলফলকও স্পর্শ করেছেন সাবেক লিভারপুল তারকা। অন্যদিকে বার্সিলোনার সঙ্গে নাড়ির বন্ধন ছিন্ন হতে যাচ্ছে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার। কোপা ডেল রে’র শিরোপা জয়ের পর অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে কাতালান শিবির ছাড়ছেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার। যে কারণে এটিই বার্সার হয়ে তাঁর ‘শেষ ফাইনাল’ হয়ে থাকছে। অধিনায়ক হিসেবে ট্রফি জয়ের পর চাইনিজ সুপার লীগে খেলার প্রস্তাবের কথা স্বীকার করে ইনিয়েস্তা জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহেই নিজের ভবিষ্যত সম্পর্কে জানাবেন তিনি। বার্সিলোনা সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্টোমেউ ম্যাচ শেষে চাইনিজ সুপার লীগ থেকে ইনিয়েস্তার প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে চোংকিং লিফান ক্লাবেই খেলতে যাচ্ছেন স্প্যানিশ এই অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার। শনিবারের ফাইনালে শেষের দিকে যখন ইনিয়েস্তাকে বদলি বেঞ্চে পাঠানো হয় তখন বার্সা সমর্থকরা উঠে দাঁড়িয়ে, গান গেয়ে, হাত তালি দিয়ে তাদের প্রিয় খেলোয়াড়কে বিদায় জানান। ৫২ মিনিটে একটি গোল করে বিদীয় ক্ষণটা স্মরণীয় করে রাখেন তিনি। ৩৩ বছর বয়সী ইনিয়েস্তা ক্লাব ক্যারিয়ারের পুরোটা সময়ই কাটিয়েছেন বার্সিলোনায়। ২০০১ সালে বার্সিলোনা বি দলের জার্সি গায়ে যাত্রা শুরু করে এখনও এই ক্লাবেই আছেন। যে কারণে ম্যাচ শেষে অনেকটাই আবেগী হয়ে পড়েন ইনিয়েস্তা। কান্না ভেজা কণ্ঠে তিনি বলেন, এই সপ্তাহেই সকলের কাছে নিজের সিদ্ধান্ত জানাবো। দীর্ঘ সময় এখানে অনেক স্মৃতি, অনেক আবেগ জমে গেছে। এই শিরোপাটা উপহার দিয়ে যেতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত। এই শিরোপটা বার্সা সমর্থকদের প্রাপ্য। ইনিস্তো আরও বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি খুশি। যে ধরনের ভালবাসা ও শ্রদ্ধা এখানে পেয়েছি তাতে আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। আশা করছি শেষবারের মত লীগ শিরোপাটাও বার্সাকে দিয়ে যেতে পারবো। চলতি মৌসুমের শুরুতে ক্যারিয়ারের শেষ পর্যন্ত ন্যু ক্যাম্পে থাকার চুক্তি করেছিলেন ইনিয়েস্তা। কিন্তু চুক্তির শর্তানুযায়ী প্রতি মৌসুমের পরর তার ক্লাব ছাড়ার অনুমতিও ছিল। ইনিয়েস্তা প্রসঙ্গে বার্সা সভাপতি বার্টোমেউ বলেন, আমরা জানি ইনিয়েস্তা বড় একটা প্রস্তাব পেয়েছেন। তবে এটাও বলতে চাই, বার্সিলোনা তার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তার চুক্তির মেয়াদটা আজীবনের। বার্সা সভাপতি যতই ‘আজীবন চুক্তি’র কথা বলুন না কেন, ইনিয়েস্তা নিজের ভবিষ্যতটা ভালোভাবেই দেখতে পাচ্ছেন। এ কারণেই হয়তো তিনি বিদায়ের ইঙ্গিতটা দিয়ে দিয়েছেন। ইনিয়েস্তার সতীর্থ জর্ডি আলবা বলেন, যে সিদ্ধান্তই সে নিক, সেটা খুব সম্মানজনকই হবে এটা আশা করি। কারণ, সম্মান ও শ্রদ্ধা ইনিয়েস্তার প্রাপ্য। যেদিন সে বার্সিলোনা ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দেবে, সেদিন আমরা সবাই কাঁদব। আমরা খুব মিস করব তাকে।
×