ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ি নির্মাণে সুদমুক্ত ১০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন মুক্তিযোদ্ধারা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৫ এপ্রিল ২০১৮

বাড়ি নির্মাণে সুদমুক্ত ১০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন মুক্তিযোদ্ধারা

এম শাহজাহান ॥ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাড়ি নির্মাণে সুদমুক্ত ১০ লাখ টাকার ঋণ পাবেন। ঋণের আসল টাকা পরিশোধ করতে হবে ১২ বছরে। ‘মুক্তিযোদ্ধা গৃহ নির্মাণ ঋণ’ নামক এই প্রকল্পে সম্মানী ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধাগণ ভাতা লিয়েন রেখে কোন জামানত ছাড়াই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট অর্থের প্রয়োজন হবে ১৬ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঋণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রকল্পটি এগিয়ে নিতে নতুন বাজেটে অর্থ বরাদ্দ দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। সূত্রমতে, ২০১৬ সালে দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের গৃহ নির্মাণের জন্য সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অতিরিক্ত সচিব মোঃ ফজলুল হকের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় এ বিষয়ে একটি তথ্যভিত্তিক নীতিমালার খসড়া এবং সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবসহ প্রতিবেদন প্রণয়নের জন্য বাংলাদেশের ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আবু ফরাহ মোঃ নাছেরকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যদের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ওই কমিটি তিন দফা বৈঠক করে এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালার খসড়া এবং সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবসহ প্রতিবেদন প্রণয়ন করে সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠিয়েছে। অর্থমন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বাজেট শাখায় প্রতিবেদনটি পাঠিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, কমিটির করা প্রতিবেদনটিকে মূলভিত্তি ধরে একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই এ সংক্রান্ত নীতিমালাটি প্রস্তুত করা হবে। শুধু তাই নয়, আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটেই এটি বাস্তবায়নে কাজ শুরু করা হয়েছে। জানা গেছে, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী, বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। তবে সরকার প্রয়োজন মনে করলে, অন্যান্য বেসরকারী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেও তাদের সম্মতি গ্রহণ সাপেক্ষে এ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ঋণের উদ্দেশ্য হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা ও মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা পাবার যোগ্য অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত উত্তরাধিকারীদের জন্য আবাসিক গৃহ নির্মাণ। এ প্রকল্পের আওতায় ঋণ সুবিধার সর্বোচ্চ পরিমাণ ১০ লাখ টাকা। ৯ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ মেয়াদ হবে ১২ বছর। এ ঋণের সরল সুদহার হবে ৫ শতাংশ। তবে এ সুদ ঋণ গ্রহীতাদের পরিশোধ করার প্রয়োজন হবে না। এটা পরিশোধ করবে সরকার। সুদ ব্যয় সরকার কর্তৃক ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক বরাবরে বাৎসরিক ভিত্তিতে প্রদেয় হবে। ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হয়ে ৩ ধাপে গ্রহীতাকে ঋণ দেয়া হবে। ঋণ মুঞ্জুর হওয়ার শুরুতে মোট ঋণের ৪০ শতাংশ, ৩ মাস পর ৩০ শতাংশ এবং আরও ৩ মাস পর অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ ঋণের অর্থ দেয়া হবে। জীবিত মুক্তিযোদ্ধাগণ ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোন বয়স সীমা থাকবে না। তবে মৃত মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে তার সম্মানী ভাতা পাবার যোগ্য অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত উত্তরাধিকারী সকল উত্তরাধিকারীর লিখিত সম্মতিক্রমে (যথাযথ ননজুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে) ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সম্মানী ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধাগণ তাদের উক্ত ভাতা লিয়েন রেখে অন্য কোন জামানত ছাড়াই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ঋণের বিপরীতে নির্মিতব্য বাসস্থান ব্যাংকের নিকট মর্টগেজ করা আবশ্যক নয়। এছাড়া সম্মানী ভাতাভোগী নন এমন মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে তাদের প্রথা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জামানত গ্রহণ করতে পারবে। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক চিহ্নিতকরণ সাপেক্ষে ভূমিহীন ও অস্বচ্ছল জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রস্তাবিত গৃহ নির্মাণের জন্য ন্যূনপক্ষে ২ শতাংশ নিষ্কন্টক জমি আবেদনকারীর নিজস্ব বা স্ত্রী-স্বামীর দখলী স্বত্বে থাকতে হবে। সদ্য তোলা ২ কপি পাসপোর্ট আকারের সত্যায়তি ছবিসহ জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি দিয়ে আবেদন করা যাবে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা সনদের সত্যায়িত কপি, আবেদনকারীর ভাতাপ্রাপ্তির প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপি, সম্মানী ভাতাভোগী নন এমন মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে মাসিক আয়ের তথ্যাদি দিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্মিতব্য গৃহের অনুমোদিত নক্সা প্রয়াজন হবে। জানা গেছে, ঋণ আবেদন প্রক্রিয়াকরণের জন্য কোন ফি আরোপ বা আদায় করা হবে না। ৯ মাসের মধ্যে গৃহ নির্মাণ সম্পন্ন করতে হবে এবং ৯ মাস গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে গণ্য হবে।
×