ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তারেক রহমান এখনও বাংলাদেশের নাগরিক, দাবি বিএনপির

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৫ এপ্রিল ২০১৮

তারেক রহমান এখনও বাংলাদেশের নাগরিক, দাবি বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সেদেশের স্বরাষ্ট্র বিভাগে পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। তিনি বলেন, সরকারের লোকজনের বক্তব্য-বিবৃতির কারণে তারেক রহমানের জীবন এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছে। তারেক রহমানের লন্ডন অবস্থানের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ফখরুল বলেছেন, বিশ্বের অসংখ্য বরেণ্য রাজনীতিবিদ, সরকারবিরোধী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতোই তারেক রহমান সাময়িকভাবে বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন এবং সঙ্গত কারণেই তা পেয়েছেন। আর এই প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক অংশ হিসেবেই তিনি যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র বিভাগে তার পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। সে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, পাসপোর্ট জমা রেখে তাকে ট্রাভেল পারমিট দেয়া হয়েছে। কাজেই এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পাসপোর্ট তার কোন কাজে লাগছে না। তবে যখনই তিনি দেশে ফেরার মতো সুস্থ হবেন, তখনই তিনি দেশের অন্যান্য নাগরিকের মতোই পাসপোর্টের জন্য আবেদন জানাতে এবং তা অর্জন করতে পারবেন। ফখরুল বলেন, দেশবাসী জানেন যে, ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন সরকারের নৃশংস রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে পঙ্গু অবস্থায় সুচিকিৎসার জন্য আদালতের অনুমতিক্রমে তারেক রহমান ২০০৮ সালে লন্ডনে যান এবং পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় এখনও সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। তিনি যখন পুরোপুরি সুস্থ হবেন তখন দেশে ফিরে আসবেন। মির্জা ফখরুল বলেন, যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র বিভাগ থেকে তার পাসপোর্ট লন্ডন হাইকমিশনে পাঠানোর যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে তার দ্বারাও কোন আইন কিংবা যুক্তিতে প্রমাণ হয় না যে, তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন। এ ধরনের উদ্ভট ধারণাকে তত্ত্ব কিংবা তথ্য হিসেবে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন কিংবা ফেসবুকে প্রচার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, মূর্খতা এবং উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। মির্জা ফখরুল বলেন, তারেক রহমান সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সন্তান। তিনি একজন সম্মানিত নাগরিক। তার বিরুদ্ধে সরকার ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমরা এসব অপপ্রাচার বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ না দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় তাকে কারাদ- দেয়া হয়েছে। তারেক রহমান লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে পাসপোর্ট জমা দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন বলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম যে কথা বলেছেন তার সমালোচনা করে প্রতিমন্ত্রীর যে এ তথ্যকে অদ্ভুত, যুক্তিহীন ও বেআইনী আখ্যা দিয়ে এর প্রতিবাদ ও নিন্দাও জানান ফখরুল। তিনি বলেন, কী কী কারণে একজন নাগরিক জন্মসূত্রে প্রাপ্ত নাগরিকত্ব হারাতে পারেন সেটাও যিনি জানেন না তেমন একজন ব্যক্তির সরকারের মন্ত্রী পদে থাকা জাতির জন্য লজ্জাজনক। ফখরুল বলেন, দেশের জনগণ ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করেছে যে, তাদের কষ্টার্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে লন্ডন সফরকারী বিশাল বহরের একমাত্র অর্জন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সংগ্রহ করা তারেক রহমানের ২০০৮ সালে ইস্যু করা পাসপোর্টের তিনটি পাতা এবং যুক্তরাজ্য স্বরাষ্ট্র বিভাগের অসংখ্য ভুলে ভরা এক লাইনের রহস্যজনক একটি চিঠির ফটোকপি। কী বিচিত্র এই সরকার! কী দুর্বল তাদের অপকৌশল। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে স্পষ্ট ভাষায় দেশবাসীকে জানাতে চাই যে, জননেতা তারেক রহমান জন্মসূত্রে বাংলাদেশের একজন গর্বিত নাগরিক। তিনি তার এই প্রিয় দেশের নাগরিক ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের সংবিধানেও পরিষ্কার করে লেখা আছে যে জন্মসূত্রে যারা বাংলাদেশের নাগরিক তাদের নাগরিকত্ব কোনভাবে অন্যকোন জটিল অবস্থা না হলে সেটা যায় না। আর পাসপোর্ট ও নাগরিকত্ব এক বিষয় না। দেশের ১৬ কোটি মানুষের পাসপোর্ট নেই তাই বলে কি এই মানুষরা বাংলাদেশের নাগরিক না? তিনি বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগের যে চিঠি দেখিয়েছেন তা রহস্যজনক। ফখরুল বলেন, তারেক রহমানের পাসপোর্ট জমা দিয়ে বাংলাদেশী নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের পক্ষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গণমাধ্যমকে যে ডকুমেন্ট দেখিয়েছেন সেটাতে ১৩টি বড় ভুল রয়েছে এবং এই নথি রহস্যজনক। কারণ, ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে এ ধরনের ভুল করা অস্বাভাবিক। নথির শুরুতেই ডিপার্টমেন্টের নাম ভুল লেখা হয়েছে। চিঠিতে লেখা আছে, ‘বাংলাদেশ এ্যাম্বাসি’। কিন্তু হবে ‘হাইকমিশন অব বাংলাদেশ’। এতে বড় করে টেলিফোন নম্বর ও ফ্যাক্স নম্বর দেয়া আছে, যেটা অস্বাভাবিক। ব্রিটিশ চিঠির মধ্যে এগুলো থাকে না। চিঠির ওপরে চারটি পাসপোর্টের কথা বলা হলেও নিচের দিকে আবার একটি পাসপোর্টের কথা বলা হয়েছে। চিঠির শেষাংশে ‘ফেইথফুলি’র এফ বড় হাতের অক্ষর দিয়ে লেখা হয়েছে। ব্রিটিশরা এটা কখনই লিখবে না। যিনি সই করেছেন, তার কোন নাম নেই। এসব বিবেচনায় চিঠি নিয়ে যথেষ্ট রহস্য রয়েছে। এ ছাড়া আবেদনের সম্বোধনসূচক শব্দ ‘ডিয়ার স্যারস’ লেখা রয়েছে। আর এসআইআর এর জায়গায় লেখা হয়েছে এসআইআরএস।
×