ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের মোট ম্যালেরিয়া রোগীর ৯৩ শতাংশই তিন পার্বত্য জেলায়

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৫ এপ্রিল ২০১৮

দেশের মোট ম্যালেরিয়া রোগীর ৯৩ শতাংশই তিন পার্বত্য জেলায়

নিখিল মানখিন, বান্দরবান থেকে ফিরে ॥ দেশের সবচেয়ে ম্যালেরিয়া ঝুঁকিপ্রবণ জেলার নাম বান্দরবান। বান্দরবান জেলার চার লাখের বেশি মানুষকে ম্যালেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারী উদ্যোগে চলছে ব্যাপক কর্মসূচী। ব্র্যাকসহ বেশ কয়েকটি এনজিও সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই কর্মসূচীতে সম্পৃক্ত রয়েছে। এমন কর্মসূচী অব্যাহত রাখার কারণে ম্যালেরিয়া শনাক্তের হার শতভাগে পৌঁছার পাশাপাশি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার সন্তোষজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে বলে দাবি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ঘুমানোর সময় মশারি টাঙ্গানো বান্দরবানের প্রত্যেক মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। হাতের কাছেই রয়েছে ম্যালেরিয়া শনাক্তের মেডিক্যাল উপকরণ। প্রত্যন্ত পাহাড়ী এলাকায় চিকিৎসা দিতে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য সেবিকা আছেন। বান্দরবান জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল সরেজমিন ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। দেশের মোট ম্যালেরিয়া রোগীর ৯৩ শতাংশই তিন পার্বত্য জেলায়। বর্তমানে দেশের মাত্র ১৩টি জেলার ৭১টি উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব রয়েছে। সমন্বিত উদ্যোগ অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূল হবে বলে আশা করছে জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচী। সারাদেশে ম্যালেরিয়ার পরিস্থতি সম্পর্কে জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচীর ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডাঃ এম এম আকতারুজ্জামান জনকণ্ঠকে জানান, দেশে ম্যালেরিয়া নির্মূলে সাফল্য আশাব্যঞ্জক হলেও বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি-এই তিন জেলায় এখনও ম্যালেরিয়া ঝুঁকি বেশি। জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচীর তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ২৯ হাজার ২৪৭ জন ম্যালেরিয়া রোগীর ৯৩% রোগীই এই তিন জেলার। বিশেষত সীমান্তবর্তী পাহাড়, বেশি বৃষ্টিপাত, বনাঞ্চলবেষ্টিত হওয়া, অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও সেবাদানজনিত সমস্যার কারণে এ ঝুঁকি এখনো রয়ে গেছে। জনসচেতনতা এবং সরকারের সহযোগিতায় ব্র্যাকসহ অন্যান্য বেসরকারী সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগের কারণেই ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা কমে এসেছে। ম্যালেরিয়া বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা। দেশের ১৩টি জেলার ৭১টি উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব রয়েছে। জেলাগুলো হচ্ছে: রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর এবং কুড়িগ্রাম। বান্দরবান জেলায় ম্যালেরিয়ার অবস্থা ॥ বান্দরবান জেলার সদর থানার থোয়াইংগ্য পাড়ায় রয়েছে ৪৫টি পরিবার। মোট জনসংখ্যা প্রায় তিনশ’ জন। দু’টি পাহাড়ের মাঝখানে গড়ে উঠা এই পাড়ার প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে সরকারীভাবে বিতরণকৃত বিশেষ মশারি। ম্যালেরিয়ার বাহক মশা থেকে রক্ষা পেতে এমন বিশেষ ব্যবস্থা। থোয়াইংগ্য পাড়ার একটি বাড়ির উঠানে ত্রিশজন মহিলাকে ম্যালেরিয়া বিষয়ক সচেতনতামূলক পরামর্শ দিচ্ছেন ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মী গরাউ মারমা। মহিলাদের অধিকাংশ বাংলা ভাষা না জানার কারণে তিনি মারমা ভাষা ব্যবহার করেন। তার হাতে রয়েছে বিভিন্ন ছবি সম্বলিত একটি নির্দেশিকা। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা বিশেষ করে সামান্য জ্বর হলেই ম্যালেরিয়া পরীক্ষা করানো হয়ে থাকে। আর সচেতনতামূলক কর্মসূচী অব্যাহত থাকায় ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর হার নেই বললেই চলে। ফিল্ড ম্যানেজার টিনু মারমা জানান, মশারি ব্যবহারে নিয়মিত তদারকি করা হয়। নিয়মিত উঠান বৈঠক বসে। ম্যালেরিয়ার লক্ষণসমূহ সম্পর্কে বান্দরবানের সাধারণ মানুষ অবগত আছেন। গত চার মাসে ৪২০ জনের ল্যাবরেটরি টেস্ট করেও কোন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়নি বলে জানান টিনু মারমা। এভাবে ম্যালেরিয়া নির্মূল করতে পুরো বান্দরবান জেলায় পরিচালিত হচ্ছে কার্যকর সরকারী কর্মসূচী।
×