ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নানা সংস্কারে কেটেছে কমিশনের ৭ বছর

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২৫ এপ্রিল ২০১৮

নানা সংস্কারে কেটেছে কমিশনের ৭ বছর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেনের দুই দফা নিয়োগের ৭ বছরের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে আগামী ১৪ মে। দুই মেয়াদে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে তিনি অনেক সংস্কার করেছেন। যা শেয়ারবাজারে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে এবং ভিত্তি মজবুত করেছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। মূলত এই সংস্কার কাজের কারণেই বাজারে বড় ধরনের পতন ঘটেনি। গত ২০১১ সালের ১৫ মে বিএসইসিতে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধসের কারণ অনুসন্ধানে খন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির বিএসইসিকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শের আলোকে এই নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। প্রথমবার ৩ বছরের জন্য তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। যা শেষ হওয়ার আগেই পুনর্নিয়োগ পান তিনি। তবে এক্ষেত্রে তিনি ৪ বছরের জন্য পুনর্নিয়োগ পান। কারণ এরই মধ্যে কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মেয়াদ ৩ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৪ বছর করা হয়। আর তার ২ দফায় নিয়োগের ৭ বছর পূর্ণ হবে আগামী ১৪ মে। বর্তমান কমিশনের সময়ে আলোচিত সংস্কারের মধ্যে ছিল শেয়ারবাজারে কারসাজি রোধে আধুনিক সার্ভিলেন্স সফটওয়্যার স্থাপন। এছাড়া শেয়ারবাজারের উন্নয়নে পাবলিক ইস্যু রুলের আধুনিকায়ন করা হয়েছে, উদ্যোক্তা/পরিচালকদের অসৎ উদ্দেশ্য প্রতিরোধে বোনাস শেয়ার বিক্রিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ, বিনিয়োগকারীদের সচেতন করতে বিনিয়োগ শিক্ষা, নিরীক্ষার মানোন্নয়নে প্যানেল অডিটরস গঠন এবং কোম্পানিতে স্বচ্ছতা আনয়নে যুগোপযোগী প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন দিক নির্দেশনা (সিজিজি) জারি, প্লেসমেন্ট আইন সংস্কার ও উদ্যোক্তা/পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণের নির্দেশনা জারি করেছেন। এদিকে শেয়ার কেলেঙ্কারিতে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করার ক্ষেত্রে বর্তমান কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা আনতে স্টক এক্সচেঞ্জে মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথকীকরণ (ডিমিউচুয়ালাইজেশন), ভুতুড়ে অমনিবাস হিসাবকে পৃথক করা, ১৯৬৯ অধ্যাদেশের যুগোপযোগী সংশোধনী ও সব শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা করা হয়েছে এই কমিশনের সময়ে। এছাড়া শেয়ারবাজারে ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধসে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) কোটা ব্যবস্থা অন্যতম। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য ৯০০ কোটি টাকার সহায়তা তহবিল গঠনে কাজ করে এই কমিশন। এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, গত ৭ বছরে শেয়ারবাজারের জন্য যেসব সংস্কার হয়েছে, তাতে কিছুটা তো উপকার হয়েছেই। যে কারণে ২০১০ সালের পরে শেয়ারবাজারে কোন অবনতি হয়নি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, ড. খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বে গত ৭ বছরে শেয়ারবাজারের জন্য অনেক কাজ করা হয়েছে। যাতে শেয়ারবাজারে স্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজমান করছে। বিএসইসির এই কাজ ও সাফল্যের কারণে প্রতিষ্ঠানটি আইওএসসিওতে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নিত হয়েছে। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে সঙ্গে শেয়ারবাজারের স্টেকহোল্ডার প্রতিষ্ঠানগুলোও উন্নত হয়েছে। ডিএসইর পরিচালক শরীফ আতাউর রহমান বলেন, বর্তমান কমিশন ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে শেয়ারবাজারের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। কমিশনের এই সংস্কারের ফলে শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার হয়েছে। এই কারণেই চীনের মতো দেশের স্টক এক্সচেঞ্জও এখন ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হতে চায়। ডিএসইর নবনির্বাচিত পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, চীনের কনসোর্টিয়ামে দেশের শেয়ারবাজারে মাইলফলক সৃষ্টি হওয়ার দারপ্রান্তে কিছু জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল। এক পর্যায়ে চীনের কনসোর্টিয়ামের কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার বিষয়টিতে স্থবিরতা চলে আসে এবং চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। কমিশন পাশে থাকায় এটি চূড়ান্তের পথে রয়েছে।
×