ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সন্তান হত্যার মতো পাপ!

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৫ এপ্রিল ২০১৮

সন্তান হত্যার মতো পাপ!

সন্তান হত্যার মতো জঘন্য কাজ বাংলাদেশের মতো অপত্য স্নেহ প্রদর্শন এবং পারিবারিক বন্ধনের জন্য পরিচিত দেশে ঘটতে পারে, এটি যেন কল্পনাতীতই ছিল। অথচ এমন অভাবিত ঘটনাই ঘটেছে দেশে। পর পর দুই মাসে ঢাকার বাইরে ও ঢাকায় এমন দুটি ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ এসেছে গণমাধ্যমে। এর আগে এভাবে আসেনি। তাই এমন ঘটনাকে আমরা অভূতপূর্ব আখ্যা দিতে পারি, যদিও শতভাগ নিশ্চিত হয়ে সেটা বলা যায় না। এই সমাজের অভ্যন্তরে সন্তান হত্যার মতো কাজ এর আগে গণমাধ্যমে যা এসেছে তাতে দেখা যায়, মা কিংবা বাবা উপায়ান্তর না দেখে সন্তানদের মেরে নিজেও আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়ে সপরিবারে জীবন থেকে পালিয়ে গেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দারিদ্র্যই ছিল এর প্রধান কারণ। তবে পারিবারিক অশান্তি তথা দাম্পত্য সম্পর্কের জটিলতার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছেÑ সেটা অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু আপন সন্তানকে ভাড়াটে খুনী দিয়ে হত্যা করার ঘটনা একেবারেই অভিনব। এ থেকে অনুমান করতে কষ্ট হয় না যে, মানুষ ক্রমান্বয়ে তার মনুষ্যত্ব খুইয়ে বসেছে। তার কাছে নিজের স্বার্থটাই বড় হয়ে উঠেছে। সেখানে মায়া, টান, ¯েœহ, প্রেম-প্রীতি কোন কাজেই আসছে না। এই দুটি ভয়ঙ্কর ঘটনাকে যদি আমরা বিচ্ছিন্ন কেস হিসেবে বিবেচনা করতে পারতাম, তাহলে হয়ত সান্ত¡না ও স্বস্তি খুঁজে পাওয়া যেত। সেটি সম্ভব নয়। তাই মনোবিশ্লেষকদের এমন অবাস্তব ঘটনার নেপথ্য কারণগুলো খতিয়ে দেখতে হবে। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজলগ্ন তার বসবাস। তাই সমাজ তার দায় এড়াতে পারে না। এটি ব্যক্তিগত বিষয় নয়, বরং মনে হয় অনেকাংশেই সামাজিক। মানুষ যখন নিরুপায় হয়ে আত্মহত্যা কিংবা অন্যকে হত্যা করে তখন তার নেপথ্যে কোন না কোনভাবে সমাজের সূক্ষ্ম ইন্ধন থাকে। কিংবা বলা ভাল সামাজিক কার্যকারণ থাকে। গত মাসে শায়েস্তাগঞ্জের একটি গ্রামে সায়েদ আলীর মেয়ে বিউটি আক্তারকে হত্যার পেছনে কিছুটা ইতিহাস আছে। সে ইতোপূর্বে বাড়ি থেকে অপহৃত হয়। ধর্ষণ করা হয় তাকে। পরে সে ঘরে ফিরে আসে। সেই সুযোগ নেয় বিউটির চাচা। কারণ ধর্ষণকারী ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে তার পুরনো বিরোধ ছিল। ধর্ষক বাবুল মিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিশোধের সুযোগ নেয় বিউটির চাচা ময়না মিয়া। সে বিউটির বাবা সায়েদ আলীকে বোঝায়, তোমার মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়ে কলঙ্কিনী হয়ে গেছে। এই মেয়ে রেখে লাভ কি। তোমার মেয়েকে খুন করে ধর্ষক বাবুলের ওপর চাপিয়ে দিলে তার উপযুক্ত শাস্তি হবে। কথা হচ্ছে ‘কন্যাদায়গ্রস্ত’ পিতা কন্যাকে হত্যার মধ্য দিয়ে কী দায়মুক্ত হবে? -কী সাংঘাতিক কথা! ঢাকার বাড্ডায় কিশোর পুত্র আউসারকে খুন করানোর নেপথ্যে ছিল বাবার পরকীয়া এবং প্রতিপক্ষকে ফাঁসানো। এক ঢিলে দুই পাখি মারার কূটবুদ্ধি। যত যাই হোক, মানুষ কিভাবে নিজের সন্তানকে হত্যা করাতে পারে? এ থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে সমাজের মূল্যবোধের অবক্ষয়। পারিবারিক বন্ধনও যে অনেকটা শিথিল হয়ে পড়েছে ব্যক্তির অন্যায্য চাহিদা, স্বেচ্ছাচারিতা ও চরমপন্থার কাছেÑ সেটি খোলাসা হয়ে উঠেছে। এ থেকে পরিত্রাণের পথ আমাদের সম্মিলিতভাবেই খুঁজে বের করতে হবে। তা না হলে এমন আরও ঘটনা ঘটে সমাজকে চরম অস্থির করে তুলবে।
×