ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান চায় ভারত

তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলকে মোদির আশ্বাস

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ২৪ এপ্রিল ২০১৮

তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলকে মোদির আশ্বাস

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ প্রতিনিধিদের ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, বাংলাদেশের সুখে-দুঃখে ভারত সব সময় পাশে থাকবে। খবর বাসস ও ওয়েবসাইটের। সোমবার বিকেলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলকে এ কথা জানিয়ে মোদি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে যে সম্পর্কের শুরু, আজ তা এক অনন্য উচ্চতায় স্থাপিত। ভারত ও বাংলাদেশের এই সম্পর্ক কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। বাংলাদেশের কাছে যে বিষয় সবচেয়ে স্পর্শকাতর, সেই তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে আধাঘণ্টার ওই বৈঠকে প্রতিনিধিদলকে মোদি বলেন, আমরা দ্রুত এর সমাধান করতে আগ্রহী। রোহিঙ্গা প্রসঙ্গেও তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভূমিকা ভারত সমর্থন করে। ভারত চায় দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হোক। বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক রাম মাধবের আমন্ত্রণে ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল রাবিবার তিনদিনের সফরে দিল্লীতে গেছে। রাজঘাটে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর সোমবার তারা ভারতীয় সংসদ ভবন ঘুরে দেখেন। বিকেল সোয়া চারটায় বৈঠক হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। প্রতিনিধিরা এরপর দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে বিজেপির নতুন সদর দফতরে গিয়ে সভাপতি অমিত শাহর অনুপস্থিতিতে অন্য শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। রাতে তারা যোগ দেন রাম মাধবের দেয়া নৈশভোজে। আজ মঙ্গলবার প্রতিনিধিরা ঢাকা ফিরবে। আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তার নেতৃত্বে দেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নতি করছে। মোদি বলেন, সফল নেতৃত্ব একটা দেশকে কোথায় এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, বাংলাদেশ তার প্রমাণ। তুলনা টেনে তিনি বলেন, আজ কোথায় পাকিস্তান আর কোথায় বাংলাদেশ! বিজেপি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এই প্রথম আওয়ামী লীগের এত বড় একটি প্রতিনিধিদলের দিল্লী সফর। ঐতিহাসিক কারণে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সম্পর্ক সুবিদিত। ভারতে পালাবদলের পর বিজেপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক কেমন হবে, তা নিয়ে একটা সংশয় ছিল। গত চার বছরে সেই সংশয় শুধু ঘুচেই যায়নি, বিজেপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক ক্রমশ জমাট বেঁধেছে। পারস্পরিক নির্ভরতাও সৃষ্টি হয়েছে। গত রবিবার বাংলাদেশ হাইকমিশনে এক নৈশভোজে প্রতিনিধিদলের এক শীর্ষ নেতা এই পারস্পরিক নির্ভরতার প্রসঙ্গে বলেন, সম্পর্কের ধারাবাহিকতা রক্ষায় দুই দেশের শাসক দলই সচেষ্ট। পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস এই সম্পর্কের ভিত্তি। সম্প্রতি কংগ্রেসের আমন্ত্রণে দলের প্লেনারি অধিবেশনে আওয়ামী লীগ নেত্রী দীপু মনির নেতৃত্বে তিন সদস্যের এক প্রতিনিধিদল দিল্লী গিয়েছিল । বিজেপির আমন্ত্রণে যাওয়া প্রতিনিধিদের সংখ্যা সেই তুলনায় বহুগুণ বেশি। সংখ্যার এই হেরফেরের মধ্য দিয়েও সম্পর্কের গভীরতা বোঝানোর এক প্রচ্ছন্ন চেষ্টা রয়েছে বলে কূটনৈতিক মহলের ধারণা। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গতি-প্রকৃতি নিরীক্ষণকারী এক সাবেক কূটনীতিকের মতে, এত বড় প্রতিনিধিদল নিয়ে এই সফরে আসার অন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রতিপক্ষকে বোঝানো, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ধারাবাহিকতা অব্যাহতই শুধু নেই, আরও দৃঢ় হয়েছে। সাবেক ওই ভারতীয় কূটনীতিকের মতে, বিএনপির বোঝা উচিত, জামায়াতের সঙ্গে তারা এখনও সম্পর্ক ছিন্ন করেনি। তা না করলে ভারতের কোন রাজনৈতিক দলের নেক নজরে তারা আসতে পারবে না। বাংলাদেশের জনগণ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছাবার্তা নরেন্দ্র মোদিকে পৌঁছে দেন প্রতিনিধিদলের নেতা ওবায়দুল কাদের। তিনি ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, মাহবুবুল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান। ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়া ভারতের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখেল, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব প্রিয়া রঙ্গনাথন ও মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবিশ কুমার।
×