ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাবির কৃষি অনুষদের নতুন গবেষণা

সারাবছর পুকুরে পানি পাবেন উত্তরের মৎস্য চাষীরা

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৪ এপ্রিল ২০১৮

সারাবছর পুকুরে পানি পাবেন উত্তরের মৎস্য চাষীরা

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ দেশের খরাপ্রবণ উত্তরাঞ্চলে ‘মৌসুমি পুকুরে পানি ধরে রাখার টেকনিক’ পদ্ধতি প্রয়োগ করে ১২ মাসই পানি ধরে রাখা সম্ভব হবে বলে নতুন সাফল্যের কথা শুনিয়েছেন রাজশাহী বিশ^দ্যিালয়ের কৃষি অনুষদের গবেষকরা। ইতোমধ্যেই রাবি ছাড়াও জেলার পবা, চারঘাট ও বগুড়া সদরের মোট ২৭টি পুকুরে এই গবেষণার কার্যক্রম চলছে। তাতে হাতে হাতে ফল মিলছে। এ গবেষণার কাজে লাগিয়ে দেশের কৃষিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে বলেও মত দিয়েছেন গবেষকরা। যা দেশের টেকসই উন্নয়নে প্রভাব ফেলবে। রাজশাহীসহ দেশের উত্তরাঞ্চল অপেক্ষাকৃত খরাপ্রবণ। বছরের বেশিরভাগ সময় রাজশাহীসহ আশপাশের অঞ্চলে পানি সঙ্কট দেখা দেয়। বরেন্দ্র অঞ্চলের বেশ কিছু গ্রামে খরার সময় মানুষকে পড়তে হয় নিদারুণ বিপাকে। এ কারণে অনেককে এলাকাও ছাড়তে হয়। পানি সমস্যায় সব থেকে বিপাকে পড়েন চাষীরা। পানির অভাবে ব্যাহত হয় মৎস্য চাষীদের কার্যক্রম। উত্তরাঞ্চলের এমন পানি সঙ্কটের বিষয়টি নাড়া দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইসতিয়াক হোসেনের মনে। উত্তরাঞ্চলের খরা সঙ্কটের মোকাবেলা করতে তিনি গবেষণা করছেন দীর্ঘদিন। তার গবেষণার বিষয় ‘মৌসুমি পুকুরে পানি ধরে রাখার টেকনিক’। সম্প্রতি ফলও মিলেছে। মাস কয়েক আগে ভুটানের ‘রয়েল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ এ অনুষ্ঠিত ৭ম আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান (আইএসসি-১৭) কংগ্রেসে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে গবেষণা তথ্য উপস্থাপনে ‘আন্তর্জাতিক শ্রেষ্ঠ পেপার উপস্থাপন’ সম্মাননা পান ড. ইসতিয়াক। সেমিনারটিতে সেরাদের তালিকায় ছিলেন রাবির আরও দশ গবেষক। তবে এখনও গবেষণা জার্নালটি কোথাও প্রকাশিত হয়নি। গবেষণার বিষয় নিয়ে ড. ইসতিয়াক জানালেন, দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসা গবেষণাটি খুব শীঘ্রই আলোর মুখ দেখবে। ইতোমধ্যেই রাবি পুকুর, পবা, চারঘাট ও বগুড়া সদরের মোট ২৭টি পুকুরে এই গবেষণার কার্যক্রম চলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উত্তরাঞ্চলে বিরূপ প্রভাব দেখা দিচ্ছে। মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি সেই সঙ্গে রোদের তাপও বাড়ছে। ফলে এই অঞ্চলের পুকুরগুলোতে বর্ষা মৌসুমে জমা পানি সারাবছর থাকে না। সাধারণত বর্ষা শেষ হওয়ার ৬ থেকে ৭ মাস পর পানি শুকিয়ে যায়। এ সময় বিপাকে পড়েন মৎস্য চাষীরা। বিদ্যুত খরচ করে পানি তুলে অনেকেই চাষের কাজ চালাতে পারেন না। ড. ইসতিয়াক জানালেন, ‘মৌসুমি পুকুরে পানি ধরে রাখা টেকনিক’ পদ্ধতিটি প্রয়োগ করলে পুকুরে ১২ মাসই পানি ধরে রাখা সম্ভব হবে। কীভাবে এটা করতে হবে? এমন প্র্রশ্নের জবাবে এ গবেষক জানান, পুকুরের নিচে পলিথিন বিছিয়ে দিতে হবে। তার ওপর দুই ফিট এটেল মাটি এবং দুই ফিট সার দিতে হবে। এতেই সারাবছর পানি ধরে রাখা যাবে। এ গবেষণা ও পরীক্ষামূলক পদ্ধতি ব্যবহারে ফল পেয়েছেন উল্লেখ করে তিনি জানান, এই পদ্ধতিতে আগের তুলনায় ৭ থেকে ৮ ফুট পানি সংরক্ষিত থাকছে। এই পদ্ধতির খরচের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে এতে একটু খরচ হবে। কিন্তু ১২ মাস মাছের চাষ চালাতে পারলে লাভ বেশি হয়ে খরচ পোষানো সম্ভব হবে। চাষী যে মাছ ৬ কেজি থাকা অবস্থায় বিক্রি করতে বাধ্য হন সেই মাছই ১৮ কেজি বানিয়ে বিক্রি করে তিনগুণ লাভবান হতে পারবেন। তবে সফলতার অন্তরায় নিয়েও কথা বলেন এ গবেষক। তিনি বলেন, এ পদ্ধতিতে আছে কিছু সঙ্কটও। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত ফান্ড পাচ্ছেন না। বিশ্ববিদ্যালয় বা ইউজিসি থেকে যে অর্থবরাদ্দ করা হয় তা যথেষ্ট নয় বলে জানালেন ড. ইসতিয়াক। তিনি বলেন, আমরা অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। সার্বিক সহযোগিতা পেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরও বেশি আন্তর্জাতিক মানের কাজ বের হওয়া প্রচুর সম্ভবনা রয়েছে।
×