ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুন্সীগঞ্জ-না’গঞ্জ রুটে দুর্ঘটনার আশঙ্কা

ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চ চলাচল

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২৪ এপ্রিল ২০১৮

ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চ চলাচল

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ ধলেশ^রী ও শীতলক্ষ্যা নদী বক্ষে মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ রুটে লঞ্চ চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চালকদের অদক্ষতা, সহকারী দিয়ে লঞ্চ চালনা ও খামখেয়ালিপনা এই রুটে লঞ্চ চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠার অন্যতম কারণ। তাছাড়া পুরনো অনেক লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই করার কারণেও যে কোন সময় এই রুটে ধরনের লঞ্চ দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা। আবার মাঝ নদীতে হঠাৎ করেই লঞ্চের ইঞ্জিন বিকল হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে এই রুটে। এ সব কারণে মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ রুটে লঞ্চ চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গেল ৪ দিনের ব্যবধানে এই রুটে পৃথক ৩ টি ঘটনায় অল্পতে বড় ধরনের লঞ্চ দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গেছেন যাত্রীরা। ১২ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ রুটে বড় ধরনের লঞ্চ দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন অসংখ্য যাত্রী। মুন্সীগঞ্জ শহরের চরকিশোরগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ী লঞ্চ যাত্রী মজিবুর রহমান জানান, ১৫ এপ্রিল রবিবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে যাত্রীবোঝাই করে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায় এমএল সাঈদ নামে একটি লঞ্চ। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ যাত্রীবোঝাই করে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দিলে মাঝ নদীতে এমএল সাঈদ লঞ্চের দু’পাশ দিয়ে পানি উঠতে শুরু করে। এতে যাত্রীদের মধ্যে লঞ্চ ডুবির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় চালককে মাঝ পথে মদনগঞ্জ লঞ্চঘাটে যাত্রী কমানোর অনুরোধ করেন যাত্রীরা। কিন্তু যাত্রীদের কথায় কর্ণপাত না করে ২ শতাধিক যাত্রীবোঝাই করে ডুবি ডুবি অবস্থায় লঞ্চটি কোন রকমে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনালে পৌঁছায়। অল্পতে লঞ্চডুবির হাত থেকে রক্ষা পান যাত্রীরা। গত ১২ এপ্রিল সন্ধ্যায় ভাগ্যক্রমে বড় ধরনের লঞ্চ দুর্ঘটনার হাত থেকে প্রাণে বেঁচে গেছেন ২ শতাধিক যাত্রী। সন্ধ্যা ৭ টার দিকে শহর লাগোয়া হাটলক্ষীগঞ্জ এলাকার মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটের অদূরে ধলেশ^রী নদীতে এমএল সোমা ও এমভি বোগদাদীয়া নামে দু’টি লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হওয়ার হাত থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান যাত্রীরা। এমএল সোমা নামে লঞ্চের যাত্রী শাহাদাত রানা জানান, এমএল সোমা লঞ্চটি ৬ টা ২০ মিনিটের দিকে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে যাত্রীবোঝাই করে মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। ৭ টার দিকে লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটের কাছে আসলে বিপরীত থেকে দ্রুত গতিতে ছুটছিল ঢাকাগামী এমভি বোগদাদীয়-৭ নামের অপর আরেকটি বহুতল লঞ্চ। এ সময় লঞ্চ দু’টি মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে। এ অবস্থায় সোমা লঞ্চে থাকা যাত্রীরা চালককে লঞ্চের গতি কমিয়ে চলার অনুরোধ জানালেও লঞ্চের চালক যাত্রীদের কথা কর্ণপাত না করে অহেতুক গতি আরও বাড়িয়ে দেয়। এ সময় লঞ্চের সঙ্গে বিপরীতমুখী ঢাকাগামী বোগদাদীয়া-৭ লঞ্চের সংঘর্ষ ঘটতে যাচ্ছিল। তবে বোগদাদীয়া লঞ্চের চালক বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে লঞ্চের গতি কমিয়ে দিলে দু’টি লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষের হাতে থেকে রেহাই পেয়েছে। এতে এ যাত্রায় ২ শতাধিক যাত্রী বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাতে ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে গেছেন। এ ছাড়া গত ১৩ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৪ টায় নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে যাত্রীবোঝাই করে মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসে এই রুটে চলাচরকারী কলকাকলি নামে একটি লঞ্চ। লঞ্চটি পুরনো এবং এতে অতিরিক্ত যাত্রী ছিল। মাঝ নদীতে মদনগঞ্জ লঞ্চঘাটের অদূরে হঠাৎ করেই লঞ্চটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। লঞ্চটির ইঞ্জিন দিয়ে ধোঁয়া বেরুতে থাকে। এ সময় যাত্রীদের মধ্যে নানা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মাঝ নদীতে লঞ্চটি হেলতে-দুলতে থাকে। লঞ্চে থাকা পুরাকৃতি বিশেষজ্ঞ আওলাদ হোসেন জানান হেলতে-দুলতে লঞ্চটি শীতলক্ষ্যায় শাহ সিমেন্টের পূর্ব পাড়ে নোঙ্গর করা একটা জাহাজের পাশে থামায়। প্রায় ২০ মিনিট চেষ্টার পর লঞ্চটির ইঞ্জিন সচল করতে সক্ষম হয় কর্তৃপক্ষ। পরে লঞ্চটি আবার মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা করে কিছুদূর যেয়ে লঞ্চটির ইঞ্জিন আবার বন্ধ হয়ে যায়।
×