ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘বীমাকারীর সম্পদ বিনিয়োগ ও সংরক্ষণ প্রবিধানমালা- ২০১৭’ চূড়ান্ত ্রমানতে চায়না নন-লাইফ বীমা কোম্পানি

সরকারী সিকিউরিটিজে সাড়ে ১২ শতাংশ বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২৪ এপ্রিল ২০১৮

সরকারী সিকিউরিটিজে সাড়ে ১২ শতাংশ বিনিয়োগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর মোট সম্পদের অন্তত সাড়ে ১২ শতাংশ সরকারী সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা রেখে ‘বীমাকারীর সম্পদ বিনিয়োগ ও সংরক্ষণ প্রবিধানমালা- ২০১৭’ চূড়ান্ত করেছে সরকার। কিন্তু নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো সরকারী সিকিউরিটিজে এ পরিমাণ সম্পদ বিনিয়োগ করতে রাজি নয়। তাদের দাবি এ পরিমাণ সম্পদ বিনিয়োগ করলে নন-লাইফ বীমা ব্যবসা পরিচালনা চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগ জানিয়েছে, বীমা শিল্পের স্থিতিশীলতাসহ অন্যান্য বিবেচনায় সরকারী সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের যে অত্যাবশ্যক হার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, তা কোনভাবেই অযৌক্তিক নয়। ‘সাড়ে ১২ শতাংশ বিনিয়োগ করলে নন-লাইফ বীমা ব্যবসা পরিচালনা বাধাগ্রস্ত হবে’- এ যুক্তি দেখিয়ে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান আবদুল করিম বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে একটি চিঠি দিয়েছে। আইডিআরএ ওই চিঠি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমানের কাছে পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে তিনি (ইউনুসুর রহমান) আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মানিক চন্দ্র দে’কে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, নন-লাইফ বীমাকারীর সম্পদ বিনিয়োগ ও সংরক্ষণ প্রবিধানমালা-২০১৭ এর ৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মোট সম্পদের কমপক্ষে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ সরকারী সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হবে। বিষয়টি নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর পক্ষে পরিপালন করা সম্ভব নয়। এটি বাস্তবায়িত হলে নন-লাইফ বীমা ব্যবসা পরিচালনা বাধাগ্রস্ত হবে। চিঠিতে আরও বলা হয়, সাধারণত নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো দীর্ঘমেয়াদের পরিবর্তে স্বল্প মেয়াদে বিনিয়োগ করে। ফলে কোম্পানিগুলো তাদের উত্থাপিত বীমা দাবি পরিশোধের ক্ষেত্রে কোনরকম তারল্য সঙ্কটের সম্মুখীন হয় না। কিন্তু সরকারী সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী হয়। নন-লাইফ ব্যবসার পলিসির মেয়াদ সাধারণত এক বছরের হয়ে থাকে। এ সময়ে উত্থাপিত দাবি পরবর্তী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে পরিশোধযোগ্য। নন-লাইফ বীমা ব্যবসায় অর্জিত প্রিমিয়ামের ৫০ ভাগের বেশি পুনঃবীমা খাতে দিতে হয় এবং এ ব্যবসায় দাবি পরিশোধের পরিমাণ ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ হয়ে থাকে। এজন্য নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোকে নগদ তহবিলের তারল্য পর্যাপ্ত রাখার জন্য দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয়ী আমানতের পরিবর্তে স্বল্পমেয়াদী আমানত ব্যাংকে গচ্ছিত রাখে। এমতাবস্থায় যদি নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর মোট সম্পদের সাড়ে ১২ শতাংশ সরকারী সিকিউরিটিজে সংরক্ষিত হয় তবে তারল্য সঙ্কটের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে যথাসময়ে গ্রহকদের বীমা দাবি পরিশোধ ও পুনঃবীমাকারীর প্রিমিয়াম পরিশোধ সম্ভব হবে না। ফলে বীমা শিল্পে অস্থিরতা বাড়বে এবং বীমা ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হবে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, কোম্পানিগুলোর অবলিখন লাভ কম। তাই তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থের আয়ের ওপর ভিত্তি করে লভ্যাংশ দিতে হয়। সরকারী সিকিউরিটিজে সুদের হার তুলনামূলক কম হওয়ায় মোট সম্পদের কমপক্ষে সাড়ে ১২ ভাগ সরকারী সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করলে বীমা কোম্পানিগুলো উল্লেখযোগ্য হারে লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এতে আরও বলা হয়, প্রবিধানমালাটি জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসার ধরনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। জীবন বীমা কোম্পানির সম্পদের বেশিরভাগ অংশই পলিসি হোল্ডারদের দীর্ঘমেয়াদী পলিসির অর্থ। যা দিয়ে লাইফ ফান্ড তৈরি হয়। অপরদিকে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর পলিসি হোল্ডারদের দায় সর্বোচ্চ এক বছর মেয়াদী। সেক্ষেত্রে ব্যবসার ধরন অনুযায়ী নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো একটি অংশ স্থায়ী সম্পদে বিনিয়োগ করে। বাকি অংশ শেয়ার, ইক্যুইটি ইনভেস্টমেন্ট এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে অধিক লাভজনক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে। ফলে এ থেকে উল্লেখযোগ্য হারে প্রতি বছর মুনাফা অর্জিত হয়; যা সরকারী সিকিউরিটিজ থেকে আশা করা যায় না। এ বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব মানিক চন্দ্র দে বলেন, আমরা নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সামাধানের চেষ্টা করছি। আশা করি এটি নিয়ে খুব বেশি সমস্যা হবে না।’ তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সাল থেকে এ প্রবিধানমালা তৈরির কাজ চলছে। বীমা শিল্পের স্থিতিশীলতাসহ অন্যান্য বিবেচনায় সরকারী সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের যে অত্যাবশ্যক হার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, তা কোনভাবেই অযৌক্তিক নয় বলে সরকার মনে করছে।
×