ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ডোকলাম বিরোধ নিষ্পত্তির পর প্রথম মুখোমুখি হচ্ছেন দুই নেতা

এ মাসের শেষে মোদি-শি বৈঠক

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৪ এপ্রিল ২০১৮

এ মাসের শেষে মোদি-শি বৈঠক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের মধ্যে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ অনানুষ্ঠানিক বৈঠক চীনের মধ্যাঞ্চলীয় সুশোভিত শহর উহানে অনুষ্ঠিত হবে ২৭ ও ২৮ এপ্রিল। ডোকলাম নিয়ে ৭৩ দিনের চীন ও ভারতের সামরিক অচলাবস্থা এড়ানোর পর এই প্রথম দেশদুটির শীর্ষনেতার মধ্যে বৈঠকটি হচ্ছে।-খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া গত কয়েক সপ্তাহ ধরে উভয় দেশের শীর্ষ নেতার বৈঠকটি নিয়ে অনুমান করা হলেও বৈঠকের ঘোষণা ছিল খুবই প্রত্যাশিত। আশা করা হচ্ছে, দুইনেতার বৈঠকের মধ্য দিয়ে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর সিদ্ধান্তটি প্রকাশ করা হয়। শীর্ষনেতাদের বৈঠকের সুনির্দিষ্ট আলোচ্যসূচীর বিষয়ে একমত হন দুইমন্ত্রী। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং আসন্ন মোদি-শি বৈঠককে সম্পর্কের নতুন সূচনা বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ব্যবস্থা সমর্থনের কথা উল্লেখ করে মার্কিন প্রেসিডেন্টের চীনের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাকে সংস্থাটির বিধিবিধানের পুরোপুরি লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেন। চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে। গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ধারাবাহিক আলোচনাকে একটি মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সম্প্রতি ভারতের নিউক্লিয়ার সাপ্লাইয়ার্স গ্রুপের (এনএসজি) সদস্য হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হয় উভয় দেশ। সে সময় পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রেক্ষিতে চীন ভারতের সদস্যপ্রাপ্তিতে ভেটো দেয়। ডোকলাম ইস্যুতে চীনের কাছ থেকে কড়া মন্তব্য এবং পরবর্তীতে অচলাবস্থা নিরসনে সেনাবাহিনীকে সরিয়ে নেয়ায় বিরোধের সফল সমাধান হয়। মনে করা হয়, এরই পরিপ্রেক্ষিতে আরও ব্যাপকভিত্তিক বিষয় নিয়ে আলোচনার পথ সুগম হলো। উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ হলো, সম্পর্কের উন্নয়নে নেপালের নয়া প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির ভারত সফর করার বিষয়টি। যেখানে চীন একটি ফ্যাক্টর হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। ডোকলাম বিরোধ নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার পর এই প্রথম মোদি ও শি জিন পিং মুখোমুখি বৈঠক করবেন। ডোকলাম মূলত চীন ও ভুটানের একটি ছিটমহল। যার খুব কাছ দিয়েই চীন একটি সড়ক নির্মাণের কাজে হাত দিয়েছে। এই সড়কের কৌশলগত গুরুত্ব হচ্ছে যে, এটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার পাশ দিয়ে গিয়ে পুরো চীনের সঙ্গে যুক্ত হবে। চলতি মাসে এই বৈঠকের অর্থ হচ্ছে মোদি দ্বিতীয়বার চীন সফর করবেন। জুন মাসে সাংহাই কো-অপারেশন অরগানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে তার যোগ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বেশিরভাগ পরিকল্পনাই একের পর এক নেয়া হয় বলে সূত্র জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদির চীন সফরের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধি দল তার সঙ্গে যাবেন। ওয়াংয়ের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সুষমা স্বরাজ ইঙ্গিত দেন যে, মোদি-শি বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে সীমান্ত সমস্যাটিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সুষমা স্বরাজ বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা ভারত-চীন সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মসৃণ বিকাশের জন্য শান্তি ও স্থিতি অপরিহার্য। চারদিনের এসসিও বৈঠকে যোগ দিতে সুষমা স্বরাজ এখন চীনে রয়েছেন। তিনি সেখানে চীনা নেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষীয় আলোচনা করেন। সুষমা স্বরাজ বলেন, গত বছর দু নেতার বৈঠকের মধ্যদিয়ে ভারত-চীন সম্পর্ক বিশ্বব্যাপী ইতিবাচক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য মোদি-শি আসন্ন বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ। মোদির সমর্থনে শি তার হাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি নিয়ে অগ্রসর হতে চান, যাতে ট্রাম্পের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান সঙ্কট মোকাবেলা করার উপায় খুঁজে বের করা যায়। চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসসিও বৈঠকে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে ভারত পরিবেশ ভারি করতে পারে বলে চীন উদ্বিগ্ন। বৈঠকটিতে পাকিস্তানের নেতারাও যোগ দেবেন। পাকিস্তানকে মোদি সম্প্রতি সন্ত্রাসবাদের রফতানিকারক বলে বর্ণনা করেছেন।
×