ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পূরণ হচ্ছে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের দাবি

এলএনজির প্রথম চালান আসছে আজ, দূর হবে চট্টগ্রামের গ্যাস সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৪ এপ্রিল ২০১৮

এলএনজির প্রথম চালান আসছে আজ, দূর হবে চট্টগ্রামের গ্যাস সঙ্কট

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ মধ্যপ্রাচ্যের কাতার থেকে এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) নিয়ে প্রথম জাহাজ আসছে আজ মঙ্গলবার। ফলে চট্টগ্রামে গ্যাস সঙ্কট দূর হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার। এলএনজি গ্রহণ এবং পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। আমদানি করা গ্যাস দিয়ে চট্টগ্রামের চাহিদা মিটিয়ে তা সরবরাহ করা সম্ভব হবে জাতীয় গ্রিডে। এতে গ্যাস আমদানির ইতিবাচক প্রভাব পড়বে সারাদেশে। দেশে উত্তোলিত গ্যাসের সঙ্গে এলএনজি যুক্ত হলে সঙ্কট অনেকটাই কেটে যাবে। বিদ্যুত ক্ষেত্রে উন্নয়নের পর এলএনজি প্রকল্পকে দেখা হচ্ছে বর্তমান সরকারের আরেক অভাবনীয় সাফল্য হিসেবে। এদিকে, এলএনজি যুগে প্রবেশের মধ্য দিয়ে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের দীর্ঘদিনের একটি দাবিও পূরণ হতে যাচ্ছে। গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কেজিডিসিএল সূত্রে জানা যায়, ২৫ এপ্র্রিল প্রথম চালান আসার কথা থাকলেও তা আসছে একদিন আগেই। প্রথম জাহাজে আসছে এক লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার এলএনজি। কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি টার্মিনালে জাহাজটি ভেড়ার পর সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে গ্যাস পাইপ লাইনে চলে আসবে আনোয়ারা এলাকায় স্থাপিত সাব স্টেশনে। এরপর চাপ নিয়ন্ত্রণ করে এলএনজি প্রবেশ করবে নগরীতে। সূত্র জানায়, এলএনজির প্রথম চালান চলে এলেও তা পাইপ লাইনে সরবরাহ হতে আরও কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে কোন দীর্ঘসূত্রতা নেই। কেননা, টার্মিনাল ও পাইপ লাইনের প্রস্তুতির কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর এখন যে কাজ টুকু বাকি রয়েছে তা খুবই সামান্য। মে মাসের মাঝামাঝিতে ব্যবহারকারীদের জন্য পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়ে যাবে। এতে করে মিটবে গ্যাসের চাহিদা। চট্টগ্রামে যে পরিমাণ গ্যাসের প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে বিদ্যমান সরবরাহের সঙ্গে এলএনজি যুক্ত হওয়ায়। প্রথমে সংযোগ পাবে শিল্প ও ক্যাপটিভ পাওয়ার ইউনিটগুলো। আমদানি বৃদ্ধির পর পাইপ লাইনেও গ্যাস চলে যাবে। এর জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে না। চট্টগ্রাম বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ জনকণ্ঠকে বলেন, একটি দেশের শিল্পায়নের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিদ্যুত ও জ্বালানি শক্তির। এরপর দরকার জনশক্তি। আমাদের দেশে পর্যাপ্ত জনশক্তি রয়েছে। কিন্তু এ শক্তিকে কাজে লাগানো যাচ্ছিল না। শেখ হাসিনার সরকার তা উপলব্ধি করতে পেরেই প্রথমে বিদ্যুত উৎপাদনের দিকে জোর দিয়েছেন। এক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্যের পর এখন আরেকটি সফলতা যুক্ত হতে যাচ্ছে এলএনজি আমদানির মাধ্যমে। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি এমপি লতিফ আরও বলেন, আমদানি করা এলএনজির প্রভাব পড়বে পুরো জাতীয় অর্থনীতিতে। নতুন শিল্প কারখানা সৃষ্টি হবে, বাড়বে কর্মসংস্থান। কয়লা আমদানির জন্য মহেশখালীতে যে বন্দর প্রস্তুত হয়ে যাচ্ছে, তা হবে প্রকারান্তরে গভীর সমুদ্র বন্দর। কারণ সেখানে ১৮ থেকে ১৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি প্রকল্প বে-টার্মিনাল, লালদিয়ার চর টার্মিনাল, কর্ণফুলী টার্মিনাল এবং মুরাদপুর টার্মিনাল হয়ে গেলে ক্রমবর্ধমান আমদানি-রফতানিকে সার্ভিস দিতে আর সমস্যা হবে না। তাছাড়া চলমান রয়েছে পায়রা সমুদ্র বন্দরের কাজ। মংলা সমুদ্র বন্দরের অনেক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এ সরকারের আমলেই। সব মিলিয়ে বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে দেশ এখন অগ্রযাত্রার মহাসড়কে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন ক্ষমতাসীন দলের এই সংসদ সদস্য। চট্টগ্রাম নগরীতে গ্যাস সঙ্কট দীর্ঘদিনের। শিল্প এবং গৃহস্থালি সর্বক্ষেত্রেই গ্যাসের মারাত্মক অভাব। রান্নাঘরের চুলা জ্বলে না, শিল্প উৎপাদনও ব্যাহত। সঙ্কট এতটাই প্রকট যে, সার উৎপাদনের জন্যও বিদ্যুত উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়। আবার বিদ্যুত উৎপাদন করার জন্য সার কারখানা সাটডাউন দিতে হয়। এমতাবস্থায় চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারসহ বিভিন্ন ট্রেডবডির পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানানো হচ্ছিল এলএনজি আমদানির। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে এলএনজি প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে চুক্তি হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি লিমিটেডের সঙ্গে। সেই চুক্তি অনুযায়ী কক্সবাজারের মহেশখালী মাতারবাড়িতে তৈরি হল ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের অপারেশন বিভাগ সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরীতে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে সরবরাহ করা সম্ভব হয় সর্বোচ্চ ২০৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এর মধ্যে খাগড়াছড়ির সেমুতাং ফিল্ড থেকে পাওয়া যায় প্রায় ২০০ মিলয়ন ঘনফুট। বাকিটা সরবরাহ হয় জাতীয় গ্রিড থেকে। এখন দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন এলএনজি যুক্ত হলে জাতীয় গ্রিড থেকে আর গ্যাস নেয়ার প্রয়োজন পড়বে না। বরং উল্টো অতিরিক্ত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
×