ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জেল-জরিমানার বিধান থাকছে

জবরদখলে থাকা রেলের সম্পত্তি উদ্ধারে নতুন আইন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৪ এপ্রিল ২০১৮

জবরদখলে থাকা রেলের সম্পত্তি উদ্ধারে নতুন আইন হচ্ছে

তপন বিশ্বাস ॥ অবশেষে জবরদখলে থাকা রেলের সম্পত্তি উদ্ধারে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করছে সরকার। আইন অমান্য করলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের যে সব ভূমি, ভবন, জলাশয়, গাছপালা এবং স্থাপনাদি অথবা এর অংশ বিশেষ যা রেল কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে দখলে রাখা হয়েছে তা নতুন এই আইন প্রয়োগের মাধ্যমে উদ্ধার করা হবে। এছাড়া লাইসেন্স বা ইজারা বা বন্দবস্ত বা ভাড়ায় যে সব সম্পত্তি রয়েছে তার মেয়াদ অবসানের পর তা আর কেউ দখলে রাখতে পারবে না। সম্পত্তি উদ্ধারে প্রণীত আইনটি বাংলাদেশ রেলওয়ে স্থাবর সম্পত্তি (অবৈধ দখল উদ্ধার) আইন ২০১৮ নামে অভিহিত হবে। এ আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধের জন্য বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করা যাবে। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রায় ৪ হাজার ৩ শ’ ৯১ একর সম্পত্তি জবর দখলে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত করা আইনটি অনুমোদনের জন্য শীঘ্রই মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। আইনের অধীনে অপরাধ করলে অর্থাৎ রেলওয়ের সম্পত্তি অবৈধভাবে অর্জন করলে বা দখলে রাখলে বা দখলে রাখার চেষ্টা করলে তাকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদ- অথবা ৫ লাখ টাকা অর্থদ-ে দ-িত অথবা উভয় দ-ে দ-িত করা হবে। একইভাবে রেলওয়ের সম্পত্তি দখল করে অথবা শ্রেণী পরিবর্তন করে তা হলে তাকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদ- অথবা ৩ লাখ টাকা অর্থ দ- অথবা উভয় দ-ে দ-িত করা হবে। এছাড়া কেউ রেলওয়ের স্থাবর সম্পত্তি দখলের প্ররোচনা দিলে অথবা সহায়তা করলে তাকে ৩ বছরের কারাদ-, ৩ লাখ টাকার অর্থ দ- অথবা উভয় দ- গুনতে হবে। আইনটি প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা জানান, নতুন এ আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, আইনটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের তফসিলভুক্ত হবে এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধভাবে দখলে রাখা রেলওয়ের স্থাবর সম্পত্তি উদ্ধার করা হবে। আইনটিতে বেশ কিছু বিষয়ের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। স্থাবর সম্পত্তি বলতে রেলওয়ের মালিকানাধীন বা জিম্মায় বা অধিকারে থাকা ভূমি, ভবন, জলাশয়, গাছপালা স্থাপনাদি এবং এর অংশ বিশেষকে বোঝাবে। ভবন বলতে সংস্থাটির মালিকানাভুক্ত দখলে অথবা ব্যবস্থাপনায় বা নিয়ন্ত্রণে থাকা ভবনকে বোঝানো হয়েছে। এ আইনের অধীনে লাইসেন্স বলতে ১৮৮২ সালের দি ইজমেন্ট এ্যাক্ট, ইজারা এবং বন্দোবস্ত বলতে বাংলাদেশ রেলওয়ে ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০৬ বোঝাবে। বাসাভাড়া বলতে বাংলাদেশ রেলওয়ের বাসাবরাদ্দ নীতিমালায় বাসাভাড়াকে বোঝাবে। সেই ক্ষেত্রে সলাইসেন্সী, ইজারাদার, বন্দোবস্ত গ্রহীতা, ভাড়াটিয়া এবং বরাদ্দ বলতে তার ওয়ারিশ, আইনানুগ প্রতিনিধি, পরিবারের সদস্যদের বোঝাবে। যে সব ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান ইজারায় রেলের স্থাবর সম্পত্তি ভোগ করছেন, ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যদি ওই সম্পত্তির দখল না ছাড়েন তা হলে তা উদ্ধারে আইন প্রয়োগ করে রেলওয়ে বিভাগের আওতায় আনা হবে। সেই ক্ষেত্রে প্রচলিত কোন আইন বাধার কারণ হবে না। ইজারার মেয়াদ শেষে ওই সম্পত্তি থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ৭ দিনের সময় দিয়ে নোটিস প্রদান করবে। কোন সম্পত্তির অংশ বিশেষের ইজারা মেয়াদ শেষ হলে ওই সম্পত্তি থেকে ইজরা গ্রহীতা সব ধরনের অধিকার হারাবেন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তা নিজ দখলে নিয়ে যাবে। সেই ক্ষেত্রে ইজারা গ্রহীতা ৭ দিন সময় পাবেন। কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন রেলওয়ের ভূমি, ভবন, স্থাপনা, জলাশয় বা এর অংশ বিশেষ অবৈধ দখলে নিলে ৭ দিনের মধ্যে খালি করে দেয়ার নোটিস দেয়া হবে। তবে ৭ দিন সময় দিলে জনস্বার্থ বিঘিœত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে ৩ দিনের মধ্যে দখলমুক্ত করার নোটিস দেবেন। নোটিস পাওয়ার পর যদি ওই সম্পত্তি খালি করে দিতে না পারে অথবা অস্বীকার করে তা হলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তা উচ্ছেদ করে নিজেদের দখলে নেবে। সেই ক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগে সরকার রেলওয়ে পুলিশ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিতে পারবে। এই আইন প্রয়োগের ফলে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে আপীল করতে পারবে। এছাড়া উচ্ছেদের নোটিস জারির ৭ দিনের মধ্যে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছেও আপীল করতে পারবেন। আপীলের বিষয়ে সরকারী সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। এ আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধের মামলা আমলযোগ্য, আপোসযোগ্য এবং জামিনযোগ্য হবে। এ আইনের অধীনে অপরাধীকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করে ফৌজদারি কার্যবিধির বিধানমতে গ্রেফতার পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবে। যে কোন বাহিনীর সদস্যরা অপরাধীকে গ্রেফতার করতে পারবে। তবে গ্রেফতারের পর অনতিবিলম্বে তাকে নিকটবর্তী রেলওয়ে থানায় হাজির করতে হবে। রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অপরাধ তদন্ত করবেন। তদন্তে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৬ ও ১৫৭ ধারার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। অবৈধ দখলকৃত রেলওয়ের স্থাবর সম্পত্তিতে রক্ষিত, ব্যবহৃত, বস্তু, যন্ত্রপাতি, প্রাণী, গাড়ি, যানবাহন, গাছপালা ইত্যাদি রেলওয়ের অনুকূলে বাজেয়াফত করা হবে এবং তা রেলের সম্পত্তি বলে বিবেচিত হবে। অবৈধ দখল উচ্ছেদের ফলে যে ক্ষতি সাধিত হবে তার ক্ষতিপূরণ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে দেবে। যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে তা অবৈধ দখলদার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দিতে বাধ্য থাকবেন। ক্ষতিপূরণের টাকা নোটিস পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে রেলওয়ের অনুকূলে জমা দিতে হবে। যদি কেউ ক্ষতিপূরণের অর্থ বাকি রাখেন তা হলে তা সরকারী পাওনা আইন ১৯১৩ অনুযায়ী রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আদায় করবে। প্রচলিত অন্য আইনে যাহাই থাকুক না কেন এই আইন কার্যকর হলে তা প্রধান্য পাবে। এই আইনের আওতায় ভূমি, ইমারত বা উহার অংশ দখল করার ব্যাপারে উর্ধতন কোন কর্মকর্তাকে বারণ করে কোন দেওয়ানি আদালতে কোন মামলা বা মামলার কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেয়া যাবে না। তবে আইনটিতে সরল বিশ্বাসে কৃতকর্মের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কিংবা কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দেওয়ানি কিংবা ফৌজদারি মামলা না করার বিধান রাখা হয়েছে। অন্যান্য আইনেও একই বিধান রাখা হয়। সেই ক্ষেত্রে সরল বিশ্বাসের কোন সংজ্ঞা নতুন আইনটিতে নেই। আইন প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক কর্মকর্তা জানান, রেলের স্থাবর সম্পত্তির অধিকাংশই রেলের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের দখলে। এছাড়া রাজনৈতিক পরিচয়েও বেশ কিছু লোক রেলের সম্পত্তি দখলে রেখেছেন। যা আইনটি কার্যকর হলে উদ্ধার করা যাবে।
×