ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রানা প্লাজা ধসের ৫ বছর আজ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৪ এপ্রিল ২০১৮

রানা প্লাজা ধসের ৫ বছর আজ

রহিম শেখ ॥ রানা প্লাজা ধসের মর্মান্তিক সেই দুর্ঘটনার পাঁচ বছর পূর্ণ হলো আজ। শুধু বাংলাদেশ নয়, দিনটির ভয়াবহতার কথা স্মরণ করছে গোটা বিশ্ব। ওই ভবন ধসের ঘটনায় পাঁচটি পোশাক কারখানার শ্রমিকসহ এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক-কর্মচারী নিহত হন। আহত হন অন্তত ২ হাজার শ্রমিক। এদের অনেকেই সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন। রানা প্লাজা ধসের পর সেই ভবনের যারা বেঁচে আছেন, তাদের অর্ধেকেরও বেশি আহত শ্রমিক এখনও দীর্ঘমেয়াদী মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় ৪৮ শতাংশ শ্রমিক এখনও বেকার। ভয়াবহ এ ভবন ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণের পুরো অংশ এখনও হাতে পাননি অনেকেই। তবে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ দাবি করছে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ পায়নি এমন কেউ নেই। এদিকে দুর্ঘটনার পাঁচ বছর পার হলেও সব মামলার কার্যক্রম এখনও শেষ হয়নি। এ ঘটনার পর মামলা হয়েছিল মোট ১৪টি। অগ্রগতি বলতে, মাত্র একটি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর বাইরে দুদকের মামলায় ভবনের মালিক সোহেল রানাকে ৩ বছরের কারাদ- দিয়েছে আদালত। এছাড়া রানার বিরুদ্ধে হত্যা ও ইমারত আইনে আরও দুটি মামলার বিচার চলছে। ফিরে দেখা ॥ ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৮টা। সাভারের নয়তলা ভবন রানা প্লাজার পাঁচটি কারখানার শ্রমিকরা দল বেঁধে প্রবেশ করছেন। যে যার মতো কাজে যোগ দিচ্ছেন। তখনও তারা জানতেন না কী ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। সকাল সাড়ে ৮টায় একযোগে চালু করা হয় ডজনখানেক জেনারেটর। কেঁপে ওঠে নয়তলা ভবনটি। এর কিছুক্ষণের মধ্যে বিশাল এ ভবনটি ধসে পড়ে। হাজারখানেক শ্রমিক প্রাণ হারায় ঘটনাস্থলেই। ভবনে আটকে পড়া ও হাসপাতালে মারা যাওয়া শ্রমিকের সংখ্যা গিয়ে দাঁঁড়ায় ১ হাজার ১৩৮ জনে। ঘটনায় আহত হন আরও অন্তত ২ হাজার শ্রমিক। দেশের ইতিহাসে একসঙ্গে এত শ্রমিক মারা যাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। এর আগে ২৩ এপ্রিল বিকেলেই ওই ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছিল। প্রাণের ভয়ে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে চায়নি ২৪ এপ্রিল সকালে। কিন্তু ভবন মালিক সোহেল রানা জোর করে শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করে। ফাটলের কারণে ভবনে ব্র্যাক ব্যাংকের একটি শাখাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও খোলা ছিল পোশাক কারখানা। ভয়াবহ ভবন ধসের ঘটনায় প্রাণে দাগ কেটে যায় গোটা বিশ্ববাসীর। উন্মোচিত হয়ে যায়, কতটা ঝুঁকির মধ্যে কাজ করে এদেশের পোশাক শ্রমিকরা। লাভের পেছনে ছুটতে গিয়ে পোশাক শিল্প মালিকরা শ্রমিকদের কীভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় এ বিষয়টিও উঠে আসে গণমাধ্যমগুলোতে। এ ঘটনায় ওই সময় চরম অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প। স্মরণকালের ভয়াবহ ভবন ধসের ঘটনার ঘটনার পাঁচ বছর চলে গেলেও অনেকেই পাননি নিহত স্বজনদের লাশ। বিজিএমইএর তথ্য মতে, ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে শনাক্ত হয়েছিল নিহত ১০১৩ জনের পরিচয়। তবে হাইকোর্টে দেয়া শ্রম মন্ত্রণালয়ের দেয়া তালিকায় নিখোঁজের সংখ্যা বলা হয়েছে, ৩৭৯ জন। উদ্ধারকারীদের নেতৃত্ব দেয়া সেনাবাহিনীর নিখোঁজ তালিকায় বলা হয়েছে, ২৬১ জন। এর মধ্যে প্রথম দফায় ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পাওয়া যায় ১৫৭ জনের খোঁজ। দ্বিতীয় দফায় পরিচয় মেলে ৪২ জনের। শ্রম মন্ত্রণালয়ের তালিকা ধরে এখনও নিখোঁজ ১৬২ জন শ্রমিক। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিখোঁজের তালিকা তৈরিতে সরকার, সেনাবাহিনী, শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে কমিটি তৈরি করা হয়। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে নমুনা নিয়ে মরদেহের নমুনার সঙ্গে মেলানো হয়। তবে ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের দেয়া তথ্যে দেখা যায়, এ পর্যন্ত ১৭৭ জনের ডিএনএ মিলে যাওয়া নিহতদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর জুরাইন কবরস্থানে ১১৪ জনের কবর দেয়া হয়েছে। যাদের খোঁজ কেউ কোনদিন করেনি। তাদেরও কোন পরিচয় এই পাঁচ বছরেও পাওয়া যায়নি। ওই ঘটনায় যারা আহত হয়েছিলেন তাদের অনেকেই চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন। আহত শ্রমিকদের শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভাল হলেও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে জটিলতা রয়েছে। দুর্ঘটনায় কারণ, অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি গঠন ॥ রানা প্লাজায় দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে শ্রম মন্ত্রণালয়, রাজউক, শিল্প, স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বিজিএমইএ’র একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে দুর্ঘটনার জন্য নয়টি কারণকে দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিজিএমইএ। ভবন তৈরিতে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার, ছয়তলার অনুমোদন নিয়ে নয়তলা ভবন নির্মাণ, কলকারখানা পরিদর্শন বিভাগের অসচেতনতা, সাভার পৌরসভার সংশ্লিষ্ট বিভাগের অবহেলা ইত্যাদি কারণে ভবনটি ধসে পড়ে। তাছাড়া একসঙ্গে সব জেনারেটর চালু করা এবং ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি জনবল থাকাকে দুর্ঘটনার বড় কারণ বলে চিহ্নিত করেছে বিজিএমইএ’র তদন্ত কমিটি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে রানা প্লাজা ভবন ধসের জন্য নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার, ইমারত নির্মাণ আইন অনুসরণ না করে ভবন নির্মাণ, মার্কেটের ওপরে অনুমোদিতভাবে ভবনের উচ্চতা বাড়িয়ে গার্মেন্টস স্থাপন এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ঝাঁকুনি সৃষ্টির মতো যন্ত্রপাতি ও জেনারেটরসহ সরঞ্জামাদিসহ অতিরিক্ত পোশাককর্মী প্রবেশে বাধ্য করা এ পাঁচটি কারণকে দায়ী করা হয়। প্রতিবেদনে ভবন মালিক সোহেল রানা এবং ওই ভবনের পাঁচ পোশাক কারখানা মালিকের বিরুদ্ধে দ-বিধির ৩০৪ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি, অর্থাৎ যাবজ্জীবন বা ১০ বছরের কারাদ-, অর্থদ- অথবা উভয় দ-ের সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে ভবন ধসের জন্য ‘প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে’ দায়ী স্থানীয় মেয়র, কাউন্সিলর, সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীসহ অন্যদের বিরুদ্ধেও একই সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে। এছাড়া রানা প্লাজা ধসের জন্য ২৪ জনকে সুনির্দিষ্টভাবে দায়ী করেছে শ্রম মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। রাজউকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভবনটি নির্মাণে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। ছয়তলা ভবনের নক্সা নিয়ে নয়তলা করা হয়। দুর্ঘটনায় মামলা ও বর্তমান অবস্থা ॥ এ ঘটনার পর মামলা হয়েছে মোট ১৪টি। এর মধ্যে রয়েছে অবহেলা-জনিত মৃত্যুর অভিযোগে পুলিশের মামলা, রাজউকের করা ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন এবং নিহত একজন পোশাক শ্রমিকের স্ত্রীর দায়ের করা খুনের মামলা। মূলত ঘটনার পরেই সাভার থানা পুলিশ একটি মামলা করে। পরে একজন শ্রমিকের স্ত্রীও খুনের মামলা করলে দুটি মামলা একটিতে রূপ নেয় তদন্তের পর। অন্য আরেকটি মামলা হয়েছিল ভবন নির্মাণ সম্পর্কিত। বাকি এগারটি মামলা করেছিল কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর। এসব মামলাগুলোর মধ্যে একটি ছাড়া বাকি প্রায় কোনটিরই আজও নিষ্পত্তি হয়নি। রানা প্লাজার বিপর্যয়ের পরপরই ‘অবহেলা জনিত’ মৃত্যুর অভিযোগে মামলা করেছিল সাভার থানা পুলিশ, যাতে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা ও ওই ভবনের থাকা পোশাক কারখানার মালিকসহ ২১ জনকে আসামি করা হয়। আর ইমারত আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সোহেল রানা ও তার পিতাসহ মোট আসামির সংখ্যা ১৮ জন। মামলাগুলোতে বিভিন্ন সময়ে সোহেল রানা ও তার পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও সাভারের জনপ্রতিনিধি, প্রকৌশলী, গার্মেন্টস মালিক ও কলকারখানা পরিদর্শন অধিদফতরের কর্মকর্তাদের জেলে যেতে হলেও এখন তারা সবাই জামিনে আছেন। পরে তদন্ত শেষে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ভবন মালিক, গার্মেন্ট মালিক, সরকারী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্তরের ৪১ জনের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ এনে আদালতে অভিযোগ পত্র দেয়া হয়। কিন্তু বিচারের ক্ষেত্রে কোন অগ্রগতি নেই বলে দাবি করেছেন গার্মেন্টস এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আক্তার। তিনি বলেন, ৪১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়া হয়েছিল এবং এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন। সাত জন এখনও পলাতক। সোহেল রানা ছাড়া আর কেউ জেলে নেই। বাকি সব জামিনে আছেন। এসব মামলার বিচার কবে হবে জানি না। এর আগে ২০১৬ সালে ঢাকার আদালতে যে ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল তাদের ৩৮ জনের বিরুদ্ধেই খুনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী খন্দকার আব্দুল মান্নান বলেন, কয়েকজন আসামির আবেদনের হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছিল উচ্চ আদালত। তিনি বলেন, আটজন হাইকোর্টে গিয়েছিল। পরে ছ’মাস করে দু’দফায় স্থগিতাদেশ এসেছিল। এরপর সাতজনের আর কোন স্থগিতাদেশের কাগজ আমরা পাইনি। একজনের ১২ মে পর্যন্ত স্থগিতাদেশ আছে। সেটি শেষ হয়ে গেলে ১৬ মে তারিখ থেকে শুরু হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মামলাটি করার চেষ্টা করব আমরা। ওদিকে দায়িত্ব পালনে অবহেলা, শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিধানে ব্যর্থতা বা সরকারী কর্মকর্তাদের পরিদর্শনে ব্যর্থতাসহ বেশ কটি অভিযোগে শ্রম আদালতে যে ১১টি মামলা হয়েছে সেগুলোরও তেমন কোন অগ্রগতির তথ্য জানাতে পারেনি শ্রম পরিদর্শন অধিদফতর। তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা ভিন্ন মামলায় তিন বছরের সাজা হয়েছে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা ও তার মা মর্জিনা বেগমের। ৪৮ শতাংশ শ্রমিক এখনও বেকার ॥ আহত শ্রমিকদের ৪৮ দশমিক সাত শতাংশ এখনও কোন কাজ করতে পারছেন না। ১২ শতাংশের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। ২২ শতাংশ শ্রমিক এখনও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। অন্যদিকে ২১ দশমিক ছয় শতাংশ শ্রমিক আবারও পোশাক কারখানায় কাজে যুক্ত হতে পেরেছেন বলে সম্প্রতি এ্যাকশনএইডের এক গবেষণায় উঠে এসেছে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলের ওই ভয়াবহ ভবন ধসের ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে দু’শজনের সঙ্গে কথা বলে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে জানানো হয়। ৩০ শতাংশ শ্রমিক দীর্ঘমেয়াদী মানসিক সমস্যায় ॥ ২০১৭ সাল পর্যন্ত আহতদের মধ্যে ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ শারীরিকভাবে সেরে উঠেছেন। মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে ১২ দশমিক ৪ শতাংশের অবস্থা। ১৩ দশমিক ১ শতাংশের শারীরিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে। এছাড়া আহতদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৫৭ দশমিক ২ শতাংশ মানসিকভাবে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ৩০ দশমিক ৮ শতাংশের মানসিক আঘাত রয়ে গেছে। স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছেন ১২ শতাংশ মানুষ। এ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, পাঁচ বছর পরও এত বিশালসংখ্যক শ্রমিকদের এ অবস্থা অত্যন্ত দুঃখজনক। আহত ও নিহত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের চুইয়ে চুইয়ে সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি, যা দেয়া হয়েছে তা আর্থিক সহযোগিতা। পুরোপুরি ক্ষতিপূরণ পায়নি অনেকেই ॥ ভবন ধসের পর নিহত ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে একটি কমিটি গঠন করে দেন উচ্চ আদালত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশের নেতৃত্বের সেই কমিটি, ক্ষতিপূরণের যে সুপারিশ দিয়েছিলেন এখনও শুরু হয়নি তার শুনানি। তাই অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গেই কমিটির প্রধান বললেন, এই ঘটনার মীমাংসা হোক এটা কেউ চায় না। তাই এ দশা। তবে গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান দাবি করেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ পায়নি এমন কেউ নেই। আমাদের তহবিলে টাকা আছে কেউ নিতে আসে না। এর অর্থ দুর্ঘটনায় সবাই ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। বিজিএমইএ’র তথ্য মতে, রানা প্লাজার ৫টি কারখানার শ্রমিক ভাই-বোনদের বেতন ও পাওনাদি পরিশোধ, আহতদের চিকিৎসা ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনবাবদ প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় গুরতর আহত এবং নিহত শ্রমিকদের পরিবারদের ২৫ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে আইএলও’র উদ্যোগে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সহযোগিতায় গঠিত তহবিল থেকে এ পর্যন্ত ২৪০ কোটি টাকা দুর্ঘটনায় আহত, নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। ডেভেলপমেন্ট সিনার্জি ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. জাকির হোসেন বলেন, ক্ষতিগ্রস্তরা নানাভাবে সহযোগিতা পেলেও তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে কোন মানদ- ঠিক করা হয়নি, অন্যদিকে কোন আইনী কাঠামোও নেই। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, পাঁচ বছর পরও দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের বিষয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া যায়নি। তিনি বলেন, আহত শ্রমিকদের ভেঙ্গে ভেঙ্গে সহযোগিতা করা হয়েছে, যেটা তাদেরও কাজে আসেনি। যে হিসাব করে শ্রমিকদের টাকা দেয়া হয়েছে তা খুবই সামান্য। সমস্যা হলো আহত শ্রমিকদের ক্ষতির পরিমাণ ঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। রানা প্লাজা ট্রাজেডি স্মরণে নানা কর্মসূচী ॥ রানা প্লাজা ভবন ধসের পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ের মানবাধিকার সংগঠন, জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, পরিবেশ ও উন্নয়ন ইস্যুতে কর্মরত সংগঠনসমূহের সমন্বয়ে গঠিত শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। দিবসটি উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে জুরাইন কবরস্থানে ফোরামের নেতারা শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ কর্মসূচীতে অংশ নেবেন। এরপর সকাল ১০টায় প্রেসক্লাবের সামনে ইন্সটলেশন প্রদর্শন, ব্যানার ও ফেস্টুন সহকারে প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচী পালন করা হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় সাভারের উদ্দেশে যাত্রা ও বিভিন্ন স্থানে যাত্রাবিরতি করে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করবেন নেতা-কর্মীরা। দুপুর ১২টায় বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে পোশাক শিল্প উদ্যোক্তাগণ, এ খাতের শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এবং আইএলও প্রতিনিধিগণ নিহতদের কবর জিয়ারত করবেন। বিকেল সোয়া ৫টায় রানা প্লাজা ভবন ধসের দুর্ঘটনায় হতাহত শ্রমিকদের স্মরণে বিজিএমইএ’র উদ্যোগে নিজস্ব ভবনে ভবনে এক দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
×